দলে অনুপ্রবেশ কারীরা দলের ভাবমূর্তি নষ্ট করে ফেলে। তাই দলে অনুপ্রবেশ ও বিতর্কিতদের ঠেকাতে নতুন কমিটি গঠনে ব্যাপক সতর্ক অবস্থান নিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। ইতোমধ্যে জমা পড়া কমিটিগুলো বিভিন্ন দিক থেকে যাচাই-বাছাই করে ঘোষণার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি।
আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতা জানান, দলের কোনো কোনো নেতাকর্মীর বিভিন্ন অপকর্ম ও অনিয়মের কারণে সম্প্রতি দল ও সরকারকে সমালোচনা ও বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে হয়েছে। যারা এ ধরনের কর্মকাণ্ডের সঙ্গে লিপ্ত তারা দলের মধ্যে অনুপ্রবেশকারী বলে ওই নেতারা জানান।
অনুপ্রবেশকারী ও বিতর্কিতরা দলের কিছু নেতা ও এমপিদের হাত ধরেই দলের বিভিন্ন পর্যায়ের কমিটিতে স্থান করে নেয়। বিশেষ করে এমপিরা নিজেদের গ্রুপ ভারী করতে বিএনপি-জামায়াতের বিতর্কিত লোকজনকে দলে টেনে কৌশলে কমিটিতে ঢোকান বলে অভিযোগ রয়েছে।
নেতারা আরও জানান, ভবিষ্যতে যাতে এই অনুপ্রবেশকারী ও বিতর্কিতদের কারণে সমালোচনা তৈরি না হয সে জন্য এখন থেকেই সতর্ক অবস্থান নেওয়া হয়েছে। নতুন কমিটি দেওয়ার আগে তা বিভিন্নভাবে যাচাই-বাছাই করা হবে। এ জন্য দলের ৮ বিভাগে সাংগঠনিক সম্পাদক, যুগ্ম সম্পাদক ও সভাপতিমণ্ডলীর সদস্যদের নিয়ে ৮টি কমিটি গঠনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এই কমিটিগুলো অন্যান্য সাংগঠনিক কাজের সাথে নতুন কমিটিগুলো যাচাই-বাছাই করে দেখবে।
এছাড়া দলের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও এ কমিটিগুলো যাচাই-বাছাই করবেন। গোয়েন্দা সংস্থার মাধ্যমেও কমিটিতে প্রস্তাবিত ব্যক্তিদের সম্পর্কে খোঁজ খবর নেওয়া হবে বলেও ওই নেতারা জানান।
গত বছর ২০১৯ সালে ২০ ও ২১ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। ওই সম্মেলনের আগে জেলা উপজেলা পর্যায়ে সম্মেলন সম্পন্ন করার কথা থাকলেও ওই সময় সব জেলা-উপজেলা সম্মেলন করা সম্ভব হয়নি। আওয়ামী লীগের ৭৮টি সাংগঠনিক জেলার মধ্যে তখন মাত্র ৩১টি জেলার সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। আর উপজেলা সম্মেলন হয় ১৫০টির মতো।
এর আগে দলের ৬টি সহযোগী সংগঠনের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। ওই সব জেলা ও সহযোগী সংগঠনের সম্মেলনের সময় শুধু সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের নাম ঘোষণা করা হয়। আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলনের পর পূর্ণাঙ্গ কমিটি দেওয়ার কথা থাকলেও এখন পর্যন্ত তা সম্পন্ন করা সম্ভব হয়নি।
আওয়ামী লীগের নেতারা জানান, সম্মেলন হয়ে যাওয়া সংংগঠনিক জেলাগুলোর পুর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণার জন্য চলতি বছর গোড়ার দিকে কার্যক্রম শুরু করা হলেও বঙ্গবন্ধুর জন্মশত বার্ষিকীর উদযাপন উপলক্ষে এ কার্যক্রম স্থগিত রাখা হয়। এর পর মার্চ থেকে করোনা ভাইরাস সংক্রমণ শুরু হওয়ায় রাজনৈতিক কার্যক্রম স্থগিত হয়ে যায়।
দীর্ঘ প্রায় ৭ মাস পর গত ১৬ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সভায় সম্মেলন হয়ে যাওয়া জেলাগুলোর পূর্ণাঙ্গ কমিটি দ্রুত জমা দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। সেই অনুযায়ী এক সপ্তাহের মধ্যে কেন্দ্রে কমিটি জমা দেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেওয়া হয়। তবে এখন পর্যন্ত যে কমিটিগুলো জমা পড়েছে সেটা তাড়াহুড়া করে ঘোষণা করা হবে না। অনুপ্রবেশ ও বিতর্কিত ঠেকাতে এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সহযোগী সংগঠনের কমিটিগুলোর বিষয়ে এই প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হবে বলে সূত্রগুলো জানিয়েছে। দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরও সম্প্রতি প্রেস ব্রিফিংয়ে জানিয়েছেন তাড়াহুড়া না করে যাচাই-বাছাই করে কমিটি ঘোষণা করা হবে।
এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফরউল্লাহ বাংলানিউজকে বলেন, বিতর্কিত ও অনুপ্রবেশকারীরা যাতে কমিটিতে আসতে না পারে এ জন্য খোঁজ-খবর নেওয়া হচ্ছে। দলের কোনো কোনো নেতা, এমপি তাদের স্বার্থে ইচ্ছামতো নিজেদের লোককে, বিএনপি-জামায়াত থেকে আসা ব্যক্তিদের কমিটিতে ঢোকান। এর পর দেখা যায় ওই ব্যক্তিরা নানা অপকর্মে জড়িয়ে পড়েন। ফরিদপুরের কমিটিতে এরকম লোকদের ঢোকানো হয়েছিল। পরে প্রকাশ পেলো ওই লোকগুলো দুর্নীতি করে শত শত কোটি টাকা, হাজার কোটি টাকার মালিক হয়েছেন।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর আরেক সদস্য আব্দুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, সব কমিটি যাচাই-বাছাই হবে। এ জন্য কমিটি ঘোষণায় একটু দেরি হতে পারে। বিতর্কিতরা যাতে না আসতে পারে সে জন্য এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।