স্বাস্থ্য অধিদফতরের পদত্যাগকারী মহাপরিচালক অধ্যাপক আবুল কালাম আজাদের বিচার দাবি করেছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির মহাসচিব এই দাবি করেন।
তিনি বলেন, স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক পদত্যাগ করেছেন এবং শোনা যাচ্ছে যে, তার পদত্যাগপত্র গ্রহণ করা হবে। আসলে তাকে তো বরখাস্ত করা উচিত ছিলো এবং শুধু স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালকই নয়, এর সঙ্গে যারা যারা জড়িত আছেন, ভুল তথ্য দিয়েছেন জনগণকে। তার দায়-দায়িত্ব অবশ্যই সরকারের উপরে বর্তায়। আমরা মনে করি, এখানে শুধু মহাপরিচালকের পদত্যাগ নয়, মহাপরিচালকের বিচার এবং একই সঙ্গে স্বাস্থ্য মন্ত্রীর পদত্যাগ করা উচিত। এটা অত্যন্ত যৌক্তিক একটি দাবি।
গণমাধ্যমে প্রকাশিত দুর্নীতি-অব্যবস্থাপনার চিত্র তুলে ধরে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনা এতো চরমে পৌঁছেছে যে, অধিকাংশ কোভিড হাসপাতালের লাইসেন্সের মেয়াদ নেই বলে জানা গেছে। করোনা প্রার্দুভাবের শুরু থেকেই দুর্নীতি শুরু হয়েছে। সরকারের আর্শিবাদপুষ্টদের কাছে করোনা যেন আর্শিবাদরূপে আবির্ভাব হয়েছে। স্বাস্থ্য সুরক্ষা সামগ্রী যেমন পিপিই, মাস্ক, ঔষধ সরবারহ দিয়ে শুরু বলা যায়। এসব অনিয়ম কর্তৃপক্ষের এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ কী আদৌও আছে?
করোনাকালেও স্বাস্থ্যসুরক্ষার সামগ্রীর কেনা কাটায় দুর্নীতি চরমে। এর দায় সরকার এড়াতে পারে না। করোনা মহামারীর এই সংকটকালে পুরো জাতি যখন ভীষণভাবে উদ্বিগ্ন, যখন প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ করোনায় আক্রান্ত হচ্ছে, যখন সরকারি হিসাব মতেই দৈনিক প্রায় ৪০ জন করে করোনা রোগী মারা যাচ্ছেন তখন স্বাস্থ্যখাতের অব্যবস্থাপনা ও দায়িত্বহীনতা ক্ষমার অযোগ্য অপরাধের শামিল। স্বাস্থ্য খাতের জবাবদিহিতাহীন দুর্নীতির দায় সরকারেরই বহন করতে হবে।
জেকেজি ও রিজেন্ট হাসপাতালের প্রতারণা ও রিজেন্ট হাসপাতালের চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্য মন্ত্রীর উপস্থিতি নিয়েও প্রশ্ন তোলেন বিএনপি মহাসচিব। তিনি বলেন, ২০১৪ সাল থেকেই রিজেন্ট হাসপাতালের লাইসেন্স অবৈধ জানা সত্ত্বেও হাসপাতালটিতে করোনা টেস্ট ও চিকিৎসার জন্য সরকার কীভাবে চুক্তি করলো? ওই চুক্তি অনুষ্ঠানে খোদ স্বাস্থ্য মন্ত্রী, স্বাস্থ্য সচিবসহ কয়েকজন সচিব এবং স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালনকসহ আরও অনেকে উপস্থিতি ছিলেন বলে আমরা ইলেক্ট্রনিক মিডিয়াতে দেখতে পেরেছি। এই ধরনের চুক্তি সই অনুষ্ঠানে মন্ত্রীর উপস্থিতি থাকার প্রটোকল নেই।
রিজেন্ট হাসপাতালের কর্ণধার ‘বহুরূপী সাহেদের হাত অনেক লম্বা’ উল্লেখ করে তার গ্রেফতার নিয়ে নাটক করা হয়েছে মন্তব্য করেন ফখরুল। তিনি বলেন, শুরু থেকে সরকারের দৃষ্টিকটু সমন্বয়হীনতা, অপরিণামদর্শিতা, দোদুল্যমনতা, সিদ্ধান্তহীনতা, ভুল সিদ্ধান্তের কারণে করোনা সংক্রান্ত পদক্ষেপগুলো কার্য্ত অসফল প্রমাণিত হয়েছে। আজকে এটা জাতির সামনে পরিষ্কার হয়ে গেছে, শুধু সরকার দলীয় দৃষ্টিকোণ থেকে এই ভয়াবহ মহামারীকে মোকাবিলার করার সিদ্ধান্ত নেয়ার ফলেই আজকে এই ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। জাতির এই মহাদুর্যোগে ও এই দুঃসময় মহামারীতে তাদের পক্ষে সমস্যার সমাধান করা সম্ভব নয়। এখন যেটা প্রয়োজন অতিদ্রুত জনগণের সরকার নির্বাচন করা। তার জন্যে যেটা প্রয়োজন একটা অবাধ নিরপেক্ষ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করা।
করোনা প্রাদুর্ভাব হওয়ার পর থেকে দলের কার্য্ক্রম তুলে ধরে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘‘আমরা আগেও বলেছি, আমরা আমাদের সীমিত সাধ্য ও ক্ষমতার মধ্য দিয়ে বিএনপি ও তার অঙ্গসংগঠন-সহযোগী সংগঠনগুলো করোনা মোকাবিলার জন্য তারা মাঠে আছে এবং তারা যথেষ্ট কাজও করেছেন। এখন পর্যন্ত বিএনপি ত্রাণ বিতরণ করেছে ৫৮ লক্ষ ৫৭ হাজার ২৮০ পরিবারের মাঝে। আমরা এর সঙ্গে জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশন, ড্যাব করোনার শুরু থেকে জনসচেতনতামূলকসহ চিকিতসা সেবার কাজ করে যাচ্ছে। আমাদের যুব দল, স্বেচ্ছাসেবক দল, ছাত্রদলসহ অঙ্গ-সহযোগীগুলো এাণের কাজ করে যাচ্ছেন।
ভার্চুয়াল এই সংবাদ সম্মেলনে করোনা সম্পর্কিত জাতীয় পর্যবেক্ষণ কমিটির সমন্বয়ক ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, ভাইস চেয়ারম্যান এজেডএম জাহিদ হোসেন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য ফরহাদ হালিম ডোনার, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, ড্যাবের হারুন আল রশিদ, আবদুস সালাম, সহ-স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক রফিকুল ইসলাম, যুব দলের সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু, স্বেচ্ছাসেবক দলের আবদুল কাদের ভুঁইয়া জুয়েল ও ছাত্র দলের ইকবাল হোসেন শ্যামল যুক্ত ছিলেন।