ঢাকা-৫ আসনঃ বিএনপির প্রার্থী নবীউল্লাহ, আওয়ামী লীগে মোল্লা পরিবার না অন্য কেউ

ঢাকা-৫ আসনের বিজ্ঞ সংসদ সদস্য হাবিবুর রহমান মোল্লার মৃত্যুতে আসনটি শূন্য ঘোষণা করা হয়েছে অনেক আগেই। মহামারী করোনার কারণে উপনির্বাচনের আনুষ্ঠানিকতা শুরু না হলেও থেমে নেই সম্ভাব্য প্রার্থীদের প্রচার-প্রচারণা। রাস্তাঘাটে, দেয়ালে বিলবোর্ড ও পোস্টার সাঁটিয়ে প্রার্থীতা জানান দিচ্ছেন কেউ কেউ। আবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ‘অমুক’ ভাইকে ঢাকা-৫ আসনে প্রার্থী হিসেবে দেখতে চাই। সম্ভাব্য প্রার্থীরাও করোনাকালে জনগণের পাশে দাঁড়ানোর সুযোগটা লুফে নিচ্ছেন। নানামুখী সহায়তার নামে নিজের অস্তিত্ব জানান দিতে শুরু করেছেন।

এ আসনটিতে গত সংসদ নির্বাচনে হাবিবুর রহমানের শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপির নবীউল্লাহ নবী। এবারও বিএনপির প্রার্থী হিসেবে তাকেই বেছে নিচ্ছে দলটি এমন আভাস পাওয়া গেছে। স্থানীয় নেতাকর্মীরাও মনে করছেন হারানো আসনটি পুনরুদ্ধার করতে হলে তার বিকল্প নেই। কারণ গত নির্বাচনে বিএনপির অনেক প্রার্থী রাজপথেই নামেননি। ফলাফলে অনেক হেভিওয়েট প্রার্থীর জামানত পর্যন্ত বাজেয়াপ্ত হয়। অথচ তিনি প্রায় ৭০ হাজার ভোট পান। এই আসনে বিএনপি প্রার্থী নবীউল্লাহ নবী ছিলেন পুরোপুরি ব্যতিক্রম। তফসিল ঘোষণার পরপরই চষে বেড়িয়েছেন গোটা নির্বাচনী এলাকা। প্রতিপক্ষ আওয়ামী লীগও তার নির্বাচনী প্রচারণা দেখে কিছুটা অস্বস্তিতে ছিলেন। সব মিলিয়ে এবারের উপনির্বাচনে নবীউল্লাহ নবীই যে বিএনপির প্রার্থী হচ্ছেন তা নিয়ে সন্দেহের অবকাশ নেই।

নবীউল্লাহ নবী বলেন, দেশের এই মহামারীর সময় উপনির্বাচন কখন হবে কিংবা আমাদের দল অংশ নিবে কিনা তা এখনও ঠিক হয়নি। তবে দল যদি সিদ্ধান্ত নেয় আমি প্রস্তুত। আমি মাঠে ছিলাম, আছি এবং থাকবো। তাছাড়া গত নির্বাচনের পর থেকেই মাঠে আছি। অত্র এলাকায় সাংগঠনিক কার্যক্রম আরও জোরদার করেছি। নিয়মিত সমন্বয়সভা করে চলেছি। করোনাকালীন এই সময়ে ডেমরা-যাত্রাবাড়ীর বিভিন্ন এলাকায় দুস্থদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম পরিচালনা করছি।

এখন প্রশ্ন এসে দাঁড়িয়েছে চারবারের প্রয়াত এমপি হাবিবুর রহমানের হাল ধরছেন কে? ঢাকার প্রবেশদ্বার খ্যাত ঢাকা-৫ (ডেমরা, যাত্রাবাড়ী ও আংশিক কদমতলী) গণমানুষের নেতা ছিলেন হাবিবুর রহমান মোল্লা। জাতীয় সংসদে শোক প্রস্তাবে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাই বলেছেন, হাবিবুর রহমান মোল্লা ছিলেন এলাকার গণমানুষের নেতা। প্রতিটি পরিবারের খবর তিনি রাখতেন। শুধু তাই নয়, তিনি প্রখ্যাত শ্রমিক নেতা ছিলেন।’ সেই মোল্লার বিকল্প কে? পরিবার থেকেই কাউকে বেছে নেওয়া হবে নাকি নতুন মুখ আসবে? এই আলোচনাই এখন সর্বত্র।

এ আসনে আওয়ামী লীগ থেকে সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে যাদের নাম শোনা যাচ্ছে তারা হলেন, প্রয়াত হাবিবুর রহমান মোল্লার ছেলে ডেমরা থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মশিউর রহমান সজল, যাত্রাবাড়ী থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি কাজী মনিরুল ইসলাম মনু, যাত্রাবাড়ী থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হারুনুর রশীদ মুন্না, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি কামরুল হাসান রিপন, আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপ-কমিটির সদস্য ও শহীদ শেখ কামালের স্ত্রী শহীদ সুলতানা কামালের ভাতিজি মেহরীন মোস্তফা দিশিসহ এক ডজন প্রার্থী। এছাড়াও জাতীয় সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য মীর আব্দুস সবুর আসুদ, ১৪ দলের শরিক জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) এর কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি মো. শহীদুল ইসলাম।

স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, এখানে দলীয় ব্যাপক গ্রুপিং আছে। এই গ্রুপিং এর কারণে মোল্লা পরিবার থেকে কাউকে মনোনয়ন না দিলে ঐক্যের প্রতীক হিসেবে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক শাহে আলম মুরাদকে প্রার্থী করা হতে পারে। তবে এসব কেবল দলীয় নেতাকর্মীদের ধারণা। সবকিছু নির্ভর করছে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপর। ঢাকার প্রবেশদ্বার খ্যাত আসনে আগামী দিনের সরকার বিরোধীদের আন্দোলন সংগ্রাম নিয়ন্ত্রণ করা এবং সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়েই প্রার্থী করা হবে।

প্রয়াত জনপ্রিয় সংসদ সদস্য হাবিবুর রহমান মোল্লার ছেলে ডেমরা থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মশিউর রহমান মোল্লা সজল নির্বাচনে প্রার্থী হবেন এবং তাকেই দলীয় ভাবে মনোনয়ন দেবে এমন প্রত্যাশাও রয়েছে ঢাকা-৫ এর জনগণের মাঝে।

বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে মশিউর রহমান মোল্লা সজল বলেন, আমার বাবা দীর্ঘদিন আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। প্রতিটি ঘরের খবর তিনি রাখতেন। আমার বাবা চার চারবার নির্বাচিত এই এলাকা থেকে। আমার পিতার পর যিনি আমার অভিভাবক, সেই নেত্রীর প্রতি আমার পূর্ণ আস্থা আছে। নেত্রী আমাকে মনোনয়ন দিলে বাবার অসামাপ্ত কাজকে সমাপ্ত করব ইনশাল্লাহ। সবকিছু মিলে নেত্রীর সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত বলে মন্তব্য করেন তিনি।

ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক শাহে আলম মুরাদ বলেন, আমি কখনো নেত্রীর বাইরে যাইনি। ১/১১ সময়ে রাষ্ট্রদ্রোহী মামলা মাথায় নিয়ে নেত্রীর কারামুক্তি আন্দোলনে ২৫ লক্ষ গণস্বাক্ষর সংগ্রহ করেছিলাম। নেত্রী আমাকে পুরস্কার স্বরুপ মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বানিয়েছিলেন। এখনও নেত্রী যে সিদ্ধান্ত দেবেন সেটাই চূড়ান্ত।

জাতীয় সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও জাতীয় যুব সংহতির সাবেক সভাপতি আব্দুস সবুর আসুদ। তিনি জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে জাতীয় পার্টির রাজনীতিতে জড়িত। তিনি ২০০৮ ও ২০১৪ সালে জাতীয় পার্টি থেকে মনোনয়ন চেয়েছিলেন। এবার উপনির্বাচনেও তিনি মনোনয়ন পাবেন বলে প্রত্যাশা করেন। জাতীয় পার্টি বিরোধী দল হলেও মহাজোটগতভাবে তিনি মনোনয়ন পাবেন বলে প্রত্যাশা তার। মীর আব্দুস সবুর আসুদ বলেন, আমি দীর্ঘদিন যাবৎ জাতীয় পার্টির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত- আশা করি এই আসনটি মহাজোটকে ছেড়ে দেবে। জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হয়ে এলাকার মানুষের কল্যাণে কাজ করে যেতে চাই।

ঢাকা মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি কামরুল হাসান রিপন বলেন, দলের দুঃসময়ে বিভিন্ন সময়ে নেত্রীর নির্দেশে আন্দোলন সংগ্রাম করতে গিয়ে একাধিক মামলার আসামি হয়ে জেলে যেতে হয়েছে। নেত্রীর তরুণ নেতৃত্বের পছন্দের প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নের বিষয়ে আমি আশাবাদী।

জাসদের সহ-সভাপতি মো. শহীদুল ইসলাম বলেন, দীর্ঘদিন এলাকায় মানুষের সুখে-দুঃখে কাজ করে যাচ্ছি। আশা করি এবার জোটগতভাবে আমাকেই মনোনয়ন দেওয়া হবে।

Scroll to Top