গ্রেপ্তার আতঙ্কে মাঠে নেই জামায়াত

রাজনৈতিকভাবে অপেক্ষাকৃত সুগঠিত দল ছিল জামায়াতে ইসলামী। চারদলীয় জোট সরকার ক্ষমতায় থাকাকালীন জামায়াতের ছাত্র সংগঠন শিবিরের আধিপত্যও ছিল দেশজুড়ে। তবে কালের পরিক্রমায় দলটিই এখন ধুঁকছে চতুর্মুখী চাপে। অর্থনৈতিক, সাংগঠনিক এবং রাজনৈতিক চাপে অসাড় জামায়াতে নতুন করে গ্রেপ্তার আতঙ্ক শুরু হয়েছে। সম্প্রতি কেন্দ্রীয়ভাবে প্রভাবশালী বেশ কয়েক নেতাকে গ্রেপ্তারের পর আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে তৃণমূলে। গ্রেপ্তার করা হচ্ছে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের নেতাদেরও। ফলে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘনিয়ে এলেও মাঠছাড়া জামায়াত। জোটের শরিক বিএনপিও পাশে পাচ্ছে না তাদের।

জামায়াতের শীর্ষ নেতৃত্ব ও তৃণমূল নেতাকর্মীর কাছে প্রিয় দলটির ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সেক্রেটারি জেনারেল শফিকুল ইসলাম মাসুদ। শিবিরের সাবেক এ সভাপতি এর আগেও কয়েক দফায় জেল খেটেছেন। সর্বশেষ প্রায় এক বছরের অধিক সময় জেল খেটে মুক্তি পেয়েছিলেন সম্প্রতি। তবে গত শুক্রবার আবার গ্রেপ্তার হয়েছেন বলে বিবৃতিতে জানিয়েছে জামায়াত। এ সময় আটক করা হয় আরও ৯ নেতাকে। এর মধ্যে প্রভাবশালী নেতারাও রয়েছেন। তাদের মধ্যে অন্যতম কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণ শাখার আমির নূরুল ইসলাম বুলবুল, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরীর দক্ষিণের নায়েবে আমির মঞ্জুরুল ইসলাম ভূঁঁইয়া, কেন্দ্রীয় মসজলিসে শূরার সদস্য আবদুস সবুর ফকির। একই দিনে গ্রেপ্তার করা হয় ফরিদপুর জেলা শাখার সেক্রেটারি অধ্যাপক বদরুদ্দিন আহমদ এবং গাজীপুর মহানগরীর সহকারী সেক্রেটারি মো. হোসেন আলীকেও। ২৬ সেপ্টেম্বর গ্রেপ্তার করা হয় সাঁথিয়া উপজেলার আমির মোস্তাফিজুর রহমান ফিরোজসহ এক মহিলা কর্মীকে এবং পলাশ উপজেলার আমির মাওলানা আমজাদ হোসেনকে।

জামায়াত নেতাদের এমন একের পর এক গ্রেপ্তারে তৃণমূলের নেতাকর্মীরা রয়েছেন আতঙ্কে। একাদশ নির্বাচনকে সামনে রেখে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল মাঠে নামলেও দিন দিন নিষ্ক্রিয় হচ্ছে জামায়াত। এমনকি জামায়াতের প্রার্থীদের নির্বাচনী এলাকায় প্রচার-প্রচারণায়ও দেখা যাচ্ছে না। এতে সাধারণ ভোটার ও নেতাকর্মীরা রয়েছেন দোটানায়। নির্বাচন উপলক্ষে কেন্দ্র থেকেও কোনো নির্দেশনা নেই বলে জানিয়েছেন নেতাকর্মীরা।

অন্যদিকে দেশের বিভিন্ন স্থানে বিএনপির সম্ভাব্য মনোনয়ন প্রার্থীরা মাঠে নেমে পড়েছেন। জনসংযোগের পাশাপাশি নেতাকর্মীদের সাহস জোগাচ্ছেন বিভিন্নভাবে। কিন্তু এসব ক্ষেত্রেও পাশে পাচ্ছে না জামায়াত নেতাকর্মীদের। জোটের শরিক থাকার পরও জামায়াত নেতাকর্মীদের অনেকটা গাছাড়া ভাব। অনেক ক্ষেত্রে পুলিশি ঝামেলা এড়াতে তারা রয়েছেন নিষ্ক্রিয়। এতে করে সারা দেশেই নেতাকর্মীদের মধ্যে ভবিষ্যৎ জামায়াত নিয়ে নানারকম বার্তা ছড়াচ্ছে। আগামী নির্বাচনে জামায়াত অংশগ্রহণ করলে তার রূপরেখা কী থাকবে। আদৌ নির্বাচনে অংশ নেবে কিনা তাও স্পষ্ট নয়। কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলা জামায়াতের রাজনীতির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট আবুল বাশার আমাদের সময়কে বলেন, জামায়াতের ভবিষ্যৎ রাজনীতি এখনো স্পষ্ট নয়। আমরা মিডিয়ার মাধ্যমে জানতে পারি নির্বাচনে অংশ নেবে জামায়াত। তবে দলীয়ভাবে এখনো কিছুই আমাদের জানানো হয়নি।

অন্যদিকে জামায়াতের শক্তিশালী ভোট ব্যাংক থাকা আসনগুলোয় জামায়াত স্থানীয়ভাবে বিএনপিকে প্রতিদ্বন্দ্বী ভাবছে। এ ক্ষেত্রে জামায়াতের কোনো নির্দেশনা না থাকায় তারা অনেকটাই দূরে থাকছেন বিএনপির সম্ভাব্য মনোনয়ন প্রার্র্থীদের থেকে। এ নিয়ে স্থানীয়ভাবে বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যেও তৈরি হচ্ছে ক্ষোভ। জানা যায়, জামায়াত একাদশ সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ৫১ আসনকে তাদের ভোট ব্যাংক হিসেবে নির্বাচনে অংশগ্রহণের বিবেচনায় নিয়েছে। তবে আদৌ এসব আসনে নির্বাচনে জামায়াতের প্রার্থী কে হবে তা নিয়ে এখনো অনেকটাই অনিশ্চিত নেতাকর্মীরা। এসব আসনে রয়েছে জামায়াতের অনেক হেভিওয়েট প্রার্থীরাও। তবে বছরের পর বছর এলাকামুখী না হওয়া ও পুলিশের ভয়ে পালিয়ে থাকায় মানুষ ভুলতে বসেছে এসব নেতাকে। ফলে এসব জায়গায় জামায়াতের নির্দিষ্ট ভোট ব্যাংক থাকলেও আগামী সংসদ নির্বাচনে এ ভোট ব্যাংক অনেকটা কমতে পারে বলে অভিমত নেতাকর্মীদের।

জানা যায়, গ্রেপ্তার আতঙ্কে তৃণমূলের নেতাকর্মীদের বড় একটি অংশ আওয়ামী লীগে যোগদান করেছে। আবার অনেক ক্ষেত্রে দলীয় কার্যক্রম থেকে নিষ্ক্রিয় হয়ে সরকারি দলের সঙ্গে লিয়াজোঁ রক্ষা করে চলছেন। এরাও জামায়াতের পক্ষে শক্ত অবস্থান নিচ্ছে না। সবদিক মিলিয়ে অনেকটাই দিশাহারা জামায়াত। কেন্দ্রীয়ভাবে প্রেস বিজ্ঞপ্তি পাঠানোর মধ্যেই সীমাবদ্ধ রয়েছে তাদের কার্যক্রম।

জামায়াতের শীর্ষ পর্যায়ের বেশ কয়েকজন নেতাকে এ বিষয়ে ফোন করলেও তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। তবে জামায়াতের রাজনীতির পর্যবেক্ষক একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মাহফুজুর রহমান বলেন, জামায়াতের প্রতিষ্ঠার পর এমন দুর্দিন আর আসেনি। মামলা-হামলা ও গ্রেপ্তার আতঙ্কে থাকাটাই স্বাভাবিক। এর পরও রাজনৈতিকভাবে টিকে আছে জামায়াত এটাই বড় কথা। তবে রাজনৈতিক পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে জামায়াত নেতাদের এই শিক্ষা থেকে দলকে নতুনভাবে সাজাতে হবে। জনগণের সঙ্গে সম্পৃক্ততা বাড়িয়ে দলকে ঢেলে সাজাতে হবে বলেও জানান তিনি।

বাংলাদেশ সময় : ১৪০৮ ঘণ্টা, ০৩ অক্টোবর,  ২০১৭,
লেটেস্টবিডিনিউজ.কম/ডিএ

Scroll to Top