জোটের ভাঙা-গড়ার অস্থিরতা বিএনপিতে

পুরানো জোট ২০ দল এবং নতুন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে ভাঙ্গা-গড়ার অস্বস্তিতে বিএনপি। সংসদে যোগদান ও খালেদা জিয়ার মুক্তির আন্দোলন ইস্যুতে বিএনপির নেতৃত্বকে চ্যালেঞ্জ করে ২০ দলের অন্যতম শরিক লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি) সভাপতি ড. কর্নেল (অব.) অলি আহমদ আলাদা জোট করেছেন। ‘জাতীয় মুক্তি মঞ্চ’ নামের এই জোটে তার সঙ্গে যোগ দিয়েছে জামায়াত, কল্যাণ পার্টিসহ ২০ দলের শরিক চারটি দল। যদিও অলি আহমদ বলেছেন, তিনি ২০ দলীয় জোটে থাকবেন। তাকে নিয়ে সন্দেহের কিছু নেই। কিন্তু বিএনপি এবং ২০ দলের অধিকাংশ শরিক দল অলি আহমদের এ আলাদা জোট গঠনের ঘটনায় ক্ষুব্ধ। অলির জোট বিএনপির বিভাগীয় মহাসমাবেশ কর্মসূচির বিপরীতে কর্মসূচি দিচ্ছে। আগামী ১৬ জুলাই সিলেটে মুক্তি মঞ্চের কর্মসূচি দেওয়া হয়েছে। বিএনপির অস্থিরতার অন্যতম কারণ হলো— অলির মুক্তি মঞ্চে যাওয়া তিন দলকে নিয়ে ২০ দলীয় জোটে ভাঙন ধরাতে পারে। কারণ অতীতে বিএনপির প্রভািবশালী নেতা ছিলেন অলি। চট্রগ্রামে আসন ভাগাভাগি মনোপুত না হওয়ায় বিএনপি ছেড়ে বেশ কিছু নেতাকে নিয়ে এলডিপি গড়েন। আবারো তিনি অনুরূপ কিছু যে করবেন না তা নিশ্চিত হতে পারছে না বিএনপি।

এদিকে ক্ষোভের কথা গত ৬ মে জানিয়ে ২০ দলের আরেক শরিক বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি-বিজেপি চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আন্দালিব রহমান পার্থ জোট থেকে বেরিয়ে যান। বিএনপি নেতারা পার্থকে ফিরে আসার অনুরোধ জানালেও তিনি তার সিদ্ধান্তে অনঢ় আছেন। অপর দিকে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের অস্তিত্ব ও কোনো কর্মকাণ্ড নেই দাবি করে গত ৮ জুলাই ঐক্যফ্রন্ট থেকে বেরিয়ে গেছেন শরিক দল কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী।

ঐক্যফ্রন্টের ভাঙন এবং ২০ দলীয় জোটের সমন্বয়কের নতুন জোট গঠন নিয়ে বিএনপির দায়িত্বশীল নেতারা অস্বস্তিতে আছেন। ২০ দল ও ফ্রন্ট থেকে আগামীতে আরো কেউ বেরিয়ে যেতে পারে এমন শঙ্কাও রয়েছে। বিএনপি নেতারা মনে করছেন জোট থেকে বেরিয়ে যাওয়া এবং নতুন জোট গড়া— এই ভাঙা গড়ার খেলায় সরকারের ইন্ধন আছে। দলের স্থায়ী কমিটির একজন নেতা বলেন, এখন একটা ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছি আমরা। সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করার জন্য সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন ঐক্য। খালেদা জিয়ার নির্দেশে আমরা যে ঐক্য সুদৃঢ় করেছিলাম তা শিথিল হয়ে যাচ্ছে। এর নেপথ্যে সরকারের হাত রয়েছে।

অন্যদিকে ২০ দলীয় জোটের শরিক দু-একটি দলের পাশাপাশি মধ্যপন্থী ও ধর্মভিত্তিক হিসেবে পরিচিত কিছু দল ও ব্যক্তিকে মুক্তি মঞ্চে নেওয়ার জন্য তত্পরতা চালাচ্ছেন অলি আহমদ। এ প্রসঙ্গে ২০ দলের সমন্বয়ক ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, আমরা জোট করেছি নির্বাচন, আন্দোলন একসাথে করবো বলে। আমাদের জোটে যারা আছেন তারা একটা রাজনৈতিক বিশ্বাস নিয়ে কাজ করেন। বিভিন্ন দলের ভিন্ন ভিন্ন চিন্তা-ভাবনা আছে, থাকবে। অলি আহমদ বলেছেন তিনি ২০ দলীয় জোটে আছেন, থাকবেন। তবে খালেদা জিয়ার মুক্তি ও পুনরায় নির্বাচনের দাবিতে তিনি কিছু একটা করতে চান। তািন বলেন, কাদের সিদ্দিকী নির্বাচনের আগে ঐক্যফ্রন্টে আসেন। তিনি আবার যখন উপলব্ধি করবেন তখন আবার হয়তো আসবেন। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, জোটের পরিধি বাড়ানো হবে। দুই-একটা লোক বেরিয়ে যাচ্ছে, আসছে-যাচ্ছে। বরাবরই হচ্ছে, এটা হবেই। সবাই একই রকম হয় না। বিভিন্ন রকম চিন্তাবোধ থাকে।যাওয়া-আসা বাংলাদেশের রাজনীতিতে সব সময়ই ঘটে আসছে।

এদিকে গত ২৭ জুন অলি আহমদ আলাদা জোট করার পর খালেদা জিয়ার মুক্তিসহ ১৮ দফা দাবির কথা বলা হয়েছে। অলি আহমদের দাবির সঙ্গে বিএনপির কোনো কোনো নেতার ইতিবাচক মনোভাব থাকলেও অনেকে মনে করেন তার উদ্দেশ্য সন্দেহজনক। জোট করে আলাদাভাবে শক্তি সঞ্চার করে বিএনপির ওপর চাপ প্রয়োগের চেষ্টা করতে চান তিনি। তার জোট গঠনের আগে অলির বাসায় যান দলের এক সিনিয়র নেতা। তাকে বোঝানোর চেষ্টা করেন নানাভাবে। কিন্তু কাজ হয়নি। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরও কথা বলেন অলির সঙ্গে। বিএনপি নেতারা ২০ দলের শরিক যারা অলির সঙ্গে গেছেন তাদেরকে বুঝিয়ে অলির মঞ্চ থেকে বের করে আনা হচ্ছে। বীর প্রতীক খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ মুহাম্মদ ইব্রাহিম ‘জাতীয় মুক্তি মঞ্চ’ ঘোষণার দিন উপস্থিত থাকলেও পরে আর এ বিষয়ে আগ্রহ দেখাননি। অন্যদিকে ২০ দলীয় জোটের বৈঠকেও উপস্থিত হচ্ছেন না তিনি।

Scroll to Top