সময় যাচ্ছে আর শক্তিশালী হয়ে বাংলাদেশ উপকূলের দিকে ধেয়ে আসছে ঘূর্ণিঝড় মোখা। বর্তমানে কক্সবাজার থেকে মোখা ৫২৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থান করছে। ঘণ্টায় ২০ কিলোমিটার বেগে এটি উপকূলের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। সময়ের সাথে সাথে এই গতিবেগ আরও বাড়বে। ধারণা করা হচ্ছে, রাত ৩টা থেকে ভোর ৬টার মধ্যে মোখার অগ্রবর্তী অংশ সেন্টমার্টিন দ্বীপে আঘাত হানা শুরু করতে পারে।
শনিবার (১৩ মে) রাত ১০টার দিকে জলবায়ু গবেষক মোস্তফা কামাল পলাশ তার ফেসবুক পোস্টে এসব তথ্য জানিয়েছেন। পাশাপাশি তিনি নিশ্চিত করেছেন, ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ কক্সবাজার জেলার উপর দিয়ে অতিক্রম করবে।
এর আগে রাত সাড়ে ৮টার দিকে পলাশ অপর এক পোস্টে জানিয়েছেন, ঘূর্ণিঝড় মোখা অনেক দ্রুত উপকূলের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। সকাল ১০ টার মধ্যেই সেন্টমার্টিন দ্বীপে ঘণ্টায় ১৯০ থেকে ২১০ কিলোমিটার গতিবেগে আঘাত করার প্রবল সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে।
কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার সেন্টমার্টিন দ্বীপের লোকসংখ্যা প্রায় ১১ হাজার। বঙ্গোপসাগরের মধ্যে আট বর্গকিলোমিটার আয়তনের এ দ্বীপটি ঘূর্ণিঝড় মোখার আঘাতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পাশাপাশি দ্বীপের বড় একটি অংশ সমুদ্রে বিলীন হয়ে যাওয়ার আশঙ্কাও করছেন কানাডার সাসকাচুয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের এই আবহাওয়া ও জলবায়ু গবেষক। তার মতে, মোখার আঘাতে সেন্টমার্টিন দ্বীপের ভূ-অবকাঠামোর বড় ক্ষতি হবে। এতে বহু মানুষের প্রাণহানি ঘটবে।
তাই প্রবাল এই দ্বীপ থেকে মানুষকে দ্রুত সরিয়ে নিতে জোর আনুরোধ জানিয়েছেন মোস্তফা কামাল পলাশ। ইতোমধ্যে ক্ষয়ক্ষতি ও প্রাণহানি ঠেকাতে দ্বীপের প্রায় ১১ হাজার জনসংখ্যার মধ্যে আড়াই হাজার মানুষকে টেকনাফে সরিয়ে নিয়েছে সরকার।
বাকি ৮ হাজারের বেশি মানুষকে সরিয়ে আনার জন্য ইতোমধ্যে ৩টি ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্রসহ দ্বীপের ৩৭টি হোটেল রিসোর্ট-কটেজ খালি করা হয়েছে।
এদিকে, বাংলাদেশ ওয়েদার অবজারভেশন টিম জানিয়েছে, শনিবার (১৩ মে) সকালের দিকে শক্তি সঞ্চয় করে এটি ক্যাটাগরি-৪ ক্ষমতাসম্পন্ন ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়। এটি অতিপ্রবল ঘূর্ণিঝড় হিসেবে উপকূল অতিক্রম করবে। এ সময় ঝড়ের গতিবেগ ১৮০ থেকে ২১৫ কিলোমিটার হতে পারে।
সন্ধ্যায় সংস্থাটির প্রধান আবহাওয়া গবেষক মো. খালিদ হোসাইন স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ঘূর্ণিঝড়টি আরও ঘনীভূত হচ্ছে। এটি বর্তমান অবস্থান থেকে উত্তর-উত্তর পূর্ব দিকে অগ্রসর হতে পারে। রোববার (১৪ মে) সকাল থেকে সন্ধ্যার মধ্যে এটি কক্সবাজার জেলার দক্ষিণ অংশে আঘাত হানতে পারে।
বাংলাদেশের কক্সবাজার জেলা ও মিয়ানমার উপকূলে প্রায় ১৮০ থেকে ২১৫ কিলোমিটার দমকা বা ঝড়ো বাতাসের প্রাবল্যতাসহ এটি আঘাত হানতে পারে। এ সময় ঝড়ের শক্তির বাতাস প্রায় ২০০-২৫০ কিলোমিটার ব্যাসার্ধ জুড়ে বিস্তৃত থাকতে পারে। এতে চট্টগ্রাম বিভাগের উপকূলীয় এলাকায় প্রচুর ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে। বিশেষ করে কক্সবাজার জেলায় সর্বাধিক ক্ষয়ক্ষতি হতে পারে বলে জানিয়েছে ওয়েদার অবজারভেশন টিম।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও জানানো হয়, ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে কক্সবাজার ও টেকনাফ এলাকা ১৫ থেকে ২৫ ফুট উচ্চ বায়ুতাড়িত জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে। এছাড়া চট্টগ্রাম উপকূলে প্রায় ১২ থেকে ১৫ ফুট জলোচ্ছ্বাস হতে পারে।
এদিকে রাতে সর্বশেষ বুলেটিনে আবহাওয়া দফতর জানায়- অতিপ্রবল ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৭৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ১৮০ কিলোমিটার। যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ২০০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে।
ঘূর্ণিঝড়টির অগ্রবর্তী অংশ ও বায়ুচাপ পার্থক্যের আধিক্যের প্রভাবে উপকূলীয় জেলা কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহের নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ১২ ফুটের বেশি উচ্চতার বায়ুতাড়িত জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে।