ঘূর্ণিঝড় মোখার প্রভাবে মহেশখালীতে ভাসমান দুই টার্মিনাল থেকে এলএনজি সরবরাহ বন্ধের কারণে বিদ্যুৎ উৎপাদন কমে যাওয়ায় বিভিন্ন অঞ্চলে লোডশেডিং শুরু হয়েছে।
তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) সরবরাহ বন্ধের কারণে পাইপলাইনেও কমে গেছে গ্যাসের সরবরাহ। এর ফলে ভোক্তারা চুলা জ্বালাতেও সমস্যায় পড়ছেন।
বিদেশ থেকে আমদানি করে আনা এলএনজি কক্সবাজারের মহেশখালীতে ভাসমান দুটি টার্মিনালের মাধ্যমে রূপান্তর করে পাইপলাইনে সরবরাহ করা হয়। বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি হওয়া গভীর নিম্নচাপটি অতিপ্রবল ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নেওয়ায় গতকাল রাত ১১টায় টার্মিনাল দুটি থেকে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করা হয়।
বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় শুক্রবার রাতে এক বিবৃতিতে জানায়, এলএনজি সরবরাহ বন্ধ থাকায় চট্টগ্রাম ও কুমিল্লা অঞ্চলে গ্যাস সরবরাহ বিঘ্নিত হবে। ঝড়ের পরিস্থিতি বিবেচনা করে গভীর সমুদ্রে সরিয়ে নেওয়া টার্মিনাল দুটি দ্রুত পুনঃস্থাপন ও পুনঃসংযোগ দিয়ে গ্যাস সরবরাহ করা হবে।
এ পরিস্থিতিতে চট্টগ্রাম, মেঘনাঘাট, হরিপুর এবং সিদ্ধিরগঞ্জ এলাকায় গ্যাস চালিত বিদ্যুৎ কেন্দ্র বন্ধ বা আংশিক চালু থাকতে পারে বলে বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।
বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ প্রাকৃতিক এই দুর্যোগের জন্য দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, অতিদ্রুত গ্যাস-বিদ্যুৎ পরিস্থিতি স্বাভাবিক করা হবে।
দেশে সবসময়ই গ্যাসের সরবরাহে ঘাটতি থাকে। এক খাতে বন্ধ করে অন্য খাতে সরবরাহ বাড়ানোর (রেশনিং) মাধ্যমে ঘাটতি সমন্বয় করা হয়। এর মধ্যে এলএনজি বন্ধ হওয়ায় গ্যাস সরবরাহের ঘাটতি অনেক বেড়ে গেছে।
শনিবার তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড এক বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, এলএনজি সরবরাহ কমায় তিতাস অধিভুক্ত এলাকায় গ্যাসের স্বল্প চাপ বিরাজ করবে। এলএনজি সরবরাহ স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত গ্যাসের স্বল্প চাপ থাকবে। রাজধানী ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, মানিকগঞ্জ, ময়মনসিংহ এলাকায় গ্যাস সরবরাহ করে তিতাস। গ্রাহকদের সাময়িক অসুবিধার জন্য দুঃখ প্রকাশ করেছে সংস্থাটি।
এদিকে, গ্যাসের সরবরাহ কমায় কয়েকটি বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)। সংস্থাটির কর্মকর্তারা জানান, চট্টগ্রাম, মেঘনাঘাট, হরিপুর ও সিদ্ধিরগঞ্জ এলাকায় গ্যাসচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ করা হয়েছে। এর ফলে গতকাল মধ্যরাত থেকেই বিদ্যুৎ উৎপাদন কমতে শুরু করেছে। চাহিদার তুলনায় বিদ্যুৎ সরবরাহের ঘাটতি তিন হাজার মেগাওয়াট ছাড়িয়ে গেছে। এতে লোডশেডিং দিতে হচ্ছে বেশি করে।
দেশে দৈনিক দিনে এখন বিদ্যুতের সর্বোচ্চ চাহিদা প্রায় ১৪ হাজার মেগাওয়াট। বর্তমানে উৎপাদন হচ্ছে ১১ হাজার মেগাওয়াটের কম। গ্যাসচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে দিনে সাড়ে ছয় হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হলেও এখন হচ্ছে পাঁচ হাজার মেগাওয়াট।
ঢাকায় বিদ্যুৎ বিতরণ সংস্থা ঢাকা ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানির (ডেসকা) দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, তাদের বিতরণ এলাকায় চাহিদা এক হাজার ১৫৭ মেগাওয়াট। আর সরবরাহ পাওয়া যাচ্ছে ৮৩৫ মেগাওয়াট। এতে ৩২২ মেগাওয়াট লোডশেডিং করতে হচ্ছে তাদের।
ডেসকো সূত্র আরও জানায়, ছোট ছোট একটি এলাকায় নির্দিষ্ট ফিডার থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়। ডেসকোর এমন ফিডার আছে ৫০০–এর মতো। এর মধ্যে ১২৯টি ফিডারের আওতায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ আছে।
এভাবে বিভিন্ন অঞ্চলে ভাগ করে ঘণ্টায় ঘণ্টায় লোডশেডিং করা হচ্ছে এবং সরবরাহ না বাড়লে এ পরিস্থিতির উন্নতি হবে না বলেও জানায় ডেসকো।