মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে প্রত্যাবাসনে রোহিঙ্গাদের জন্য প্রস্তুত করা ১৫টি গ্রাম ও সেখানে নির্মিত অন্যান্য অবকাঠামোগুলো পরিদর্শন শেষে ফিরে এসেছেন ২৭ সদস্যের প্রতিনিধি দল। শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (যুগ্ম সচিব) মো. মিজানুর রহমানের নেতৃত্বে প্রতিনিধি দল আজ শুক্রবার বিকেল ৫টা ৫০ মিনিটে টেকনাফ-মিয়ানমার ট্রানজিট জেটি ঘাটে ফিরে আসেন। এর আগে তারা আজ সকাল ১০ টায় মিয়ানমারের উদ্দেশ্যে টেকনাফ ছাড়েন।
মিয়ানমার পরিদর্শনে যাওয়া ২৭ সদস্যের প্রতিনিধি দলে তিন রোহিঙ্গা নারীসহ ২০ জন রোহিঙ্গা নাগরিক ছিল। অন্যান্যদের মধ্যে শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (যুগ্ম সচিব) মো. মিজানুর রহমান ছাড়াও অতিরিক্ত শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (অতিরিক্ত সচিব) মোহাম্মদ খালিদ হোসেন, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সহকারী সচিব বিশ্বজিত দেবনাথসহ সরকারের বিভিন্ন সংস্থার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ছিলেন।
পরিদর্শন শেষে টেকনাফ পৌঁছে প্রতিনিধি দলের প্রধান অতিরিক্ত শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (যুগ্ম সচিব) মো. মিজানুর রহমান সাংবাদিকদের ব্রিফিং করেন।
তিনি বলেন, ‘রোহিঙ্গা সমস্যার বাংলাদেশের কাছে একমাত্র সমাধান হচ্ছে প্রত্যাবাসন। প্রত্যাবাসনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের দাবি বরাবরই ছিল এটি যাতে সাসটেইনেবল হয় এবং ডিগনিফাইড হয়। সে নিরিখে বাংলাদেশের প্রস্তাব ছিল মিয়ানমারের কাছে বরাবরই যারা প্রত্যাবাসিত হবে সে সকল রোহিঙ্গাদের যাতে তাদের অ্যারেঞ্জমেন্ট দেখানো হয়। আমরা এটির নাম দিয়েছিলাম ‘গো অ্যান্ড ভিজিট’। মিয়ানমারকে আমরা ধন্যবাদ জানাই তারা সেই প্রস্তাব গ্রহণ করেছে। আমরা ২০ জন রোহিঙ্গা নিয়ে মিয়ানমারের মংডুর আশেপাশে যেখানে তাদের জন্য এরেজম্যান্ট করা হয়েছে সেগুলো ঘুরে দেখার পর আজকে আমরা ফেরত আসলাম। আমাদের সাথে রোহিঙ্গা প্রতিনিধিও ছিল, মূলত তাদের জন্য এই আয়োজন। তারা প্রত্যাবাসিত হবে, তাদেরকে সচক্ষে এটি দেখানো হয়েছে। মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ ব্রিফ করেছে, বিভিন্ন জায়গা ঘুরে ফিরে দেখিয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ এখানে আসবে। রোহিঙ্গাদের সঙ্গে আরও কথা বলবে। সবকিছু করা তাদের কনফিডেন্স বৃদ্ধির জন্য। তাদের আশ্বস্থ করার জন্য। মিয়ানমার প্রতিনিধি দল আসার পর প্রত্যাবাসনের ব্যাপারে পদক্ষেপ নেওয়া হবে। মংডু শহরে প্রচুর রোহিঙ্গা আছে। আমি যতটুকু তথ্য নিলাম সেখানে প্রায় ৮শ রোহিঙ্গা ব্যবসা করছে। তাদের সাথে কথা বলেছি, তাদের কোনো অসুবিধা হচ্ছে না এমনটি জানিয়েছেন।’
২৬ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বাসিন্দা ও রোহিঙ্গা প্রতিনিধি দলের প্রধান মোহাম্মদ সেলিম বলেন, ‘অনেক বছর পর আমাদের দেশ মিয়ানমার দেখার সুযোগ হয়েছে। আমাদেরকে সেখানে নেওয়ার জন্য বাংলাদেশের সরকারকে অনেক ধন্যবাদ। আমরা মিয়ানমার গেছি, আমাদেরকে ক্যাম্পগুলো দেখিয়েছে। আমরা জানতে চাইলাম, ক্যাম্প কেন, কার জন্য। তারা বলেছে ‘‘আপনাদের জন্য’’। আমরা বলেছি, আমরা যদি সিকিউরিটি না পায়, নাগরিকত্ব কার্ড পাই তাহলে কি হবে। তখন তারা জানিয়েছে, ‘‘এনবিসির কার্ড নিতে হবে।” আমরা বলেছি এনভিসি কার্ড অতিথিদের জন্য, আমরা এনভিসি কার্ড নেওয়া মানে আমরাও অতিথি বা মেহমানের মত। আমরা কোনো জমির মালিক হতে পারব না, নাগরিকত্ব পাব না। আমরা দাবি করেছি আমাদের গ্রামে আমাদের ভিটাজমি ফিরিয়ে দিতে। তখন আমরা নিজেদের টাকায় ঘর তৈরি করে থাকব। আমাদের শেষ কথা হচ্ছে, আমাদের নিরাপত্তা, নাগরিকত্ব, ভিটেমাটি না দিলে আমরা যাব না।’
২৬ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পের সুফিয়ান বলেন, ‘সেখানে গিয়ে আমরা আমাদের দাবি দিয়েছি। আমাদের নাগরিকত্ব দাবি করেছি, ভিটামাটি দাবি করেছি, সেগুলো ফেরত দিলে আমরা যাব, সেটা জানিয়েছি। আমাদের গ্রামের জায়গাগুলো ঘুরে দেখেছি, কিন্তু সেখানে যাওয়ার মতো এখনো সুযোগ দেখছি না। কারণ আমাদের দাবি আদায় আগে।’
প্রসঙ্গত, গত ১৫ মার্চ মিয়ানমারের ১৭ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল বাংলাদেশে আসেন। তারা প্রত্যাবাসনের পাইলট প্রকল্পে তালিকাভুক্ত ৪৮০ জন রোহিঙ্গার তথ্য যাচাই শেষে ফিরে যান।