বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে সরকার আর কোনো ভর্তুকি দেবে না বলে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ সাফ জানিয়ে দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘জ্বালানি খাতে যতটা খরচ হচ্ছে, ভোক্তার কাছ থেকে ততটা অর্থই নেয়া হবে।’
আজ রোববার (১২ মার্চ) বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে এফবিসিসিআই আয়োজিত বাংলাদেশ বিজনেস সামিট-২০২৩ এর \’স্ট্র্যাটেজিক এপ্রোচ ফর এনার্জি সিকিউরিটি টু এটেইন সাসটেইনেবল গ্রোথ\’ শীর্ষক সেমিনারে তিনি একথা বলেন।
বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী হামিদ আরও বলেন, ‘বৈশ্বিক সংকটের সময়ে জ্বালানি খাতের ভবিষ্যৎ একটি চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। পাশের দেশ ভারত যে দামে জ্বালানি কিনছে, সে দামেই বিক্রি করছে। সরকার এখন সিদ্ধান্ত নিয়েছে, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে আর কোনো ভর্তুকি দেয়া হবে না। জ্বালানি খাতে যে পরিমাণ খরচ হচ্ছে, ভোক্তার কাছ থেকে সে পরিমাণ অর্থই নেয়া হবে।’
তবে ধীরে ধীরে বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দাম সমন্বয় করা হবে বলেও তিনি জানান।
বর্তমানে দেশের শিল্পখাতে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সরবরাহ করাই সরকারের মূল লক্ষ্য জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী হামিদ বলেন, ‘দেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার যে পরিমাণ বাড়ার কথা ছিল কোভিড মহামারির কারণে সেখান থেকে একটু পিছিয়ে আছি। তবে জ্বালানি সরবরাহ স্বাভাবিক হলে সেটিও ঠিক হয়ে যাবে এবং আমাদের এখন যথেষ্ট বিনিয়োগকারী আছে। যার মূল কারণ, বিদ্যৎ ও জ্বালানি বিভাগের ওপর বিনিয়োগকারীদের ভরসা আছে।’
গ্যাস অনুসন্ধানে যথেষ্ট গুরুত্ব না দেয়ার অভিযোগের প্রেক্ষিতে নসরুল হামিদ বলেন, ‘একসময় বলা হতো দেশ গ্যাসের ওপর ভাসছে। সেটি ২০০১ সালের কথা। এরপর থেকে আপনারা গ্যাস ব্যবহার করেননি? দেশের যে এত এত শিল্পকারখানা গড়ে ওঠেছে, সেগুলোতে গ্যাস ব্যবহার হয়েছে, গ্যাসভিত্তিক অনেকগুলো বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র হয়েছে, সেগুলোতে গ্যাস ব্যবহার হচ্ছে। তারপরও তো আমাদের শিল্পের চাহিদা পূরণ করা যাচ্ছে না। যার কারণে আমাদের আমদানি করতে হচ্ছে।’
সমুদ্রে গ্যাস পাওয়ার সম্ভাবনা আছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘আন্তর্জাতিক গ্যাস অনুসন্ধানকারী কোম্পানিগুলোকে আকৃষ্ট করার জন্য সরকার চেষ্টা করে যাচ্ছে। মাঝখানে দুটি কোম্পানি এসেছিল অনুসন্ধান কাজ করতে, কিন্তু দেশে গ্যাসের দাম কম বলে তারা রাজি হয়নি। এখন আন্তর্জাতিকভাবে গ্যাসের দাম বাড়ছে, ফলে নতুন করে একটি সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।’
শতভাগ বিদ্যুতায়নের বিষয়ে বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা সব জায়গায় ব্যবসা দেখিনি। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, সবার ঘরে বিদ্যুৎ দেয়া হবে। ক্যাপাসিটি কী পরিমাণ বেড়েছে, সেটি জিডিপি প্রবৃদ্ধি দেখলেই বোঝা যায়। একটি গ্রামে ১০টা বাড়ি, সেখানেও সাবস্টেশন করা হয়েছে। যেখানে ১০০ বছর বিল দিলেও সেটির দাম উঠবে না। তারপরও আমরা সেখানে বিদ্যুতের ব্যবস্থা করেছি।’
আরও পড়ুন: ২০৪১ সালে মাথাপিছু আয় হবে সাড়ে ১২ হাজার ডলার: পলক
গ্রামে বিদ্যুতের আলোর কারণে ছোট ছোট ব্যবসা গড়ে উঠেছে মন্তব্য করে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘প্রত্যন্ত গ্রামের বাজার গভীর রাতেও খোলা থাকে। যেখানে এখন রাত ১২টার দিকেও ব্যবসা চলে। এ কারণেই কিন্তু জিডিপির এত বেশি প্রবৃদ্ধি। আমাদের শিল্প প্রতিষ্ঠানে যা প্রবৃদ্ধি হয়েছে, তার থেকে অনেক পরিবর্তন গ্রামে হয়েছে।’
কয়লা নিয়ে প্রচুর সমালোচনা শোনার অভিযোগ করে নসরুল হামিদ বলেন, ‘অন্যদেশ কয়লা সব উঠিয়ে ফেলেছে, আমরা কেন তুলছি না। আমরাও তাদের মতো যে ঝাঁপিয়ে পড়ব, সেটি কীভাবে হয়? যেখানে হাজার হাজার একর কৃষিজমি নষ্ট হবে, সেই কৃষকদের কি হবে?’
তিনি বলেন, ‘আমরা যদি সেখানে পাওয়ায় প্ল্যান্ট বানাই, কৃষক তো সেখানে কাজ করতে পারবে না। তারা তো বেকার হয়ে যাবে। তাদের জমির টাকা দেবেন, দুদিনে তা খরচ করে ফকির হয়ে যাবে। তাই তাদের অর্থনৈতিক বিষয়টাও আমাদের চিন্তা করতে হয়। আমাদের সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে সবদিক বিবেচনা করতে হয়।’
বিদ্যুৎ বিভাগের সচিব মো. হাবিবুর রহমানের সভাপতিত্বে সেমিনারটি সঞ্চালনা করেন বুয়েটের সাবেক অধ্যাপক ইজাজ হোসেন। সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ এনার্জি সোসাইটির সভাপতি আবুল কালাম আজাদ।