ঝড়-বৃষ্টি-তুষার-কোনো কিছুতেই আগুন থামেনি। এক মুহূর্তের জন্যও থামাতে পারেনি আগুন। পাহাড়ের পাদদেশে ১০ মিটারজুড়ে দাউ দাউ করে জ্বলছে আগুন। পাহাড়টির নাম ‘ইয়ানার দাগ’। অর্থাৎ জ্বলন্ত পাহাড়।
একদিন-দুদিন নয়, আজারবাইজানের বাকু অঞ্চলের অদূরে আবশেরন উপদ্বীপে ৪ হাজার বছর ধরে জ্বলছে এই লেলিহান শিখা। চিরন্তন এই শিখার জন্য আজারবাইজানকে ‘ল্যান্ড অব ফায়ার’ বা আগুনের ভূমিও বলা হয়ে থাকে। মূলত পাহাড় ঘেঁষে ভূগর্ভ থেকে চুইয়ে পরা প্রাকৃতিক গ্যাসই এই আগুনের উৎস। ইয়ানার দাগ সহস্রাব্দ ধরে আজারবাইজানে ভ্রমণকারীদের মুগ্ধ করে আসছে। সঙ্গে ভীতসন্ত্রস্তও। এটি মূলত দেশটির অঢেল প্রাকৃতিক গ্যাসেরই পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া, যা ভূপৃষ্ঠ ভেদ করে বাইরে চলে আসে এবং স্বতঃস্ফূর্তভাবে অগ্নিকাণ্ড ঘটায়।
ভেনিসীয় অভিযাত্রী মার্কো পোলো ১৩শ শতাব্দীতে দেশটি ভ্রমণ করেছিলেন। ভ্রমণকাহিনিতে তিনি এই পাহারের রহস্যাবৃত ঘটনা বর্ণনা করেন। একসময় আজারবাইজানে এই ধরনের দাবানল প্রচুর ছিল। কিন্তু প্রচুর বাণিজ্যিক গ্যাস উৎপাদনের কারণে ভূগর্ভের গ্যাসের চাপ কমে যায় এবং বেশিরভাগ আগুন নিভে যায়। এই আগুনে পাহাড় প্রাচীন জরথুস্ট্রীয় ধর্মে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল।
ধর্মটি ইরানে প্রতিষ্ঠিত হলেও খ্রিষ্টপূর্ব প্রথম সহস্রাব্দে আজারবাইজানে বিকাশ লাভ করে। জরথুস্ট্রিয়ানদের বিশ্বাস, আগুন মানুষের এবং অতিপ্রাকৃতিক জগতের মধ্যে একটি যোগসূত্র তৈরি করে। আগুন একটি মাধ্যম, যাতে আধ্যাত্মিক অন্তর্দৃষ্টি ও প্রজ্ঞা লাভ করা যায়। এটি শুদ্ধ, জীবন ধারণকারী এবং উপাসনার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। আগুনের শক্তির সঙ্গে আজারবাইজানের প্রাচীন সম্পর্কের সাক্ষী হতে দর্শনার্থীরা আতেশগাহ ফায়ার টেম্পল এবং ইয়ানার দাগের জ্বলন্ত পাহাড়র দিকে ভ্রমণে জড়ো হয়।