নড়াইল জেলায় শসা চাষে পাল্টে গেছে ৩০ গ্রামের চিত্র। সদর উপজেলার ৩টি ইউনিয়নের চাষিরা ঘেরের পাড়সহ পতিত জায়গায় শসা চাষ করে অর্থনৈতিকভাবে হচ্ছেন লাভবান। শসার দাম ভালো পাওয়ায় হাসি ফুটেছে কৃষকের মুখে।
সদর উপজেলার বিছালী ইউনিয়নের বিভিন্ন স্থানে গড়ে উঠা পাইকারি বাজার থেকে প্রতিদিন স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত শসা কিনে দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঠানো হচ্ছে। এখানকার পাইকারি শসার বাজারগুলো এলাকার মধ্যে ইতিমধ্যে খ্যাতি অর্জন করেছে। ক্রেতা-বিক্রেতাদের হাঁক-ডাকে খুব ভোর থেকেই সরগরম হয়ে ওঠে এ বাজারগুলো।
সদর উপজেলার বিছালী ইউনিয়নের আড়পাড়া, মির্জাপুর, রুখালী, চাকই, মধুরগাতী, আরাজি মরিচা, আকবপুর, রুন্দিয়া, আটঘরা, বড়াল, কালিনগর, বিছালী, বন খলিসাখালী, সিঙ্গাশোলপুর ইউনিয়নের নলদীর চর, খলিসাখালী, গোবরা, শুভারঘোপ, বড়গাতী, বড়কুলা, সিংগা, শোলপুর, চুনখোলা, তারাপুর ও কলোড়া ইউনিয়নের বাহির গ্রাম, নিরালী, শিমুলিয়া, আগদিয়া, আগদিয়ার চর, রামনগর চর, গোয়াইল বাড়ী, কলোড়া, বীড়গ্রাম ও মুশুড়ীসহ প্রায় ৩০ গ্রামের কৃষকেরা এসব বাজারে শসা নিয়ে আসেন। এখানে প্রতিদিন লক্ষ লক্ষ টাকার শসা বেচাকেনা হয় বলে জানিয়েছেন বাজারের ব্যবসায়ীরা। নড়াইল ছাড়াও ঢাকা,কুমিল্লা ও চট্টগ্রাম জেলাসহ বিভিন্ন জেলার পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ীরা এখান থেকে শসা কিনে নিয়ে যান। রাজধানী ঢাকাসহ দেশের অনেক জেলার ব্যবসায়ীরা পাইকারি দরে শসা কেনেন এসব বাজার থেকে। প্রতিদিন সকাল ছয়টা থেকে বাজার পুরোদমে শুরু হয়ে চলে তিন থেকে চার ঘণ্টা।
সরেজমিনে বাজারে গিয়ে দেখা যায়,বিছালী ইউনিয়নের বর্ণি মোড়বাজার, মালাধারার মোড়, চাকই চৌরাস্তা, আড়পাড়া-মির্জাপুর মোড়, বিছালী, আটঘরা,বড়াল,বনখলিশাখালী গ্রামের প্রধান সড়কের মোড়গুলো ঘিরে বসেছে বিশাল শসার বাজার। প্রতিদিন ক্রেতা-বিক্রেতাদের হাঁক-ডাকে সরগরম থাকে এ শসার বাজার। সকাল ৬টা থেকে ১০টা পর্যন্ত চলে পুরোদমে কেনা-বেচা। এরপর পাইকাররা ট্রাকযোগে ঢাকা, চট্টগ্রাম ও কুমিল্লাসহ বিভিন্ন স্থানে তা পাঠিয়ে থাকেন। প্রায় ৪ বছর আগে থেকে শসার পাইকারি রমরমা বেচাকেনা শুরু হয় এসব বাজারে। ভোরের আলো আসার আগে থেকেই ক্রেতা-বিক্রেতাদের সমাগমে মুখর হয়ে উঠে শসার এসব পাইকারী বাজার।এসব বাজারে শসার সরবরাহ বেশি থাকায় ক্রেতারা ইচ্ছেমত দর-দাম করে স্বাচ্ছন্দ্যে কিনতে পারে। উৎপাদিত শসা মন প্রতি বর্তমানে ১ হাজার ৩০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। প্রতিযোগিতামূলক দরদামে কৃষকের নিকট থেকে শসা কিনে থাকেন পাইকারী ব্যবসায়ীরা। এরপর সেগুলো ট্রাকযোগে চলে যায় ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে। সারা বছরই এই এলাকার অসংখ্য মৎস্য ঘেরের পাড়ে এসব শসার চাষ হয়।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ সূত্রে জানা গেছে,এ বছর জেলায় ১৭৫ হেক্টর জমিতে শসা ও ক্ষীরাই চাষ হয়েছে। যা গত বছরের চেয়ে ২৫ হেক্টর বেশি জমিতে শসার চাষ হয়েছে। সদরের তিনটি ইউনিয়নের প্রায় ৩০ গ্রামেই প্রধানত বাণিজ্যিক ভিত্তিতে এ শসা ও ক্ষীরাই চাষ হচ্ছে। জুলাই মাস থেকে আগস্ট পর্যন্ত শসা লাগানোর উপযুক্ত সময়। আড়াই মাসে শসা তোলা যায়। এ শসা চলবে পুরো ডিসেম্বর মাস ও জানুয়ারি মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত।বর্তমানে প্রতি সপ্তাহের তিনদিনে ২০ থেকে ৩০ ট্রাক শসা যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন এলাকায়। শসা ক্ষেতগুলো ঘুরে দেখা যায়, চারিদিকে সবুজের সমারোহ। রাস্তার পাশে বিস্তীর্ণ বিলজুড়ে শুধুই সবুজে ঘেরা শসা ও ক্ষীরাই ক্ষেত। ঘেরের পাড় বা আইলে সারি সারি মাচায় ঝুলছে শসা আর শসা। এসব গ্রামে রয়েছে ছোটো বড়ো অসংখ্য মৎস্য ঘের। মাত্র কয়েক বছর আগেও এসব ঘেরের পাড়ে তেমন কোনো ফসল চাষ করা হতো না। এখন মাছের ঘেরের পাড়ে শসা চাষ করে গ্রামের কৃষকদের জীবনে এসেছে আর্থিক স্বচ্ছলতা। অনেকে হয়েছেন স্বাবলম্বী। শসা চাষ করে বেকার সমস্যার সমাধানের পথও খুঁজে পেয়েছেন অনেকে। এভাবে হাজার হাজার কৃষক মাছের ঘেরের পাড়ে হাইব্রিড জাতের শসা চাষ করে আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন। ঘেরের পাড়ে উৎপাদিত শসা কেনা- বেচার জন্য গ্রামগুলোর মোড়ে মোড়ে গড়ে ওঠেছে শসার পাইকারি বাজার।
মির্জাপুর ও আড়পাড়া গ্রামের একাধিক শসা চাষি জানান,দুই বিঘা জমিতে শসা চাষ করতে খরচ হয় ২০-২৫ হাজার টাকা। তিন মাসে শসা বিক্রি করে লক্ষাধিক টাকা আয় হয়ে থাকে। পরিকল্পিতভাবে মৎস্য চাষের পাশাপাশি পরিচর্যা করলে শসা চাষে অধিক লাভ পাওয়া যায় বলে তারা জানান।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের নড়াইলের উপ-পরিচালক দীপক রায় বলেন, এ জেলার মাটি কৃষির জন্য খুবই উপযোগী। অন্যান্য ফসলের তুলনায় মাছের ঘেরের পাড়ে শসা চাষ লাভজনক হওয়ায় এ জেলায় দিন দিন শসা চাষ বৃদ্ধি পাচ্ছে। ঘেরের পাড়ে কম খরচে শসা চাষ করে লাভবান হওয়ার জন্য আমরা চাষিদের সার্বক্ষণিক পরামর্শ ও সার্বিক সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছি। যে কারণে এবছর কৃষকেরা ঘেরের পাড়ে শসা চাষ করে আশাতীত ফলন পেয়েছেন।
সংবাদ সূত্রঃ বাসস