দেশে করোনার ডেল্টা প্রজাতির (ভ্যারিয়েন্ট) দাপটে গত ২৪ ঘণ্টায় রেকর্ড ২৬৪ জন রোগীর মৃত্যু হয়েছে। যা এ যাবৎকালের মধ্যে করোনায় সর্বোচ্চ মৃত্যু। এর আগে গত ২৭ জুলাই একদিনে ২৫৮ জনের মৃত্যু হয়েছিল। সেই রেকর্ড ১০ দিনও টিকল না। এ নিয়ে দেশে করোনায় মৃতের সংখ্যা ২১ হাজার ৯০২ জনে পৌঁছল। একই সময় ১২ হাজার ৭৪৪ জনের মধ্যে সংক্রমণ ধরা পড়েছে। ফলে শনাক্ত রোগীর মোট সংখ্যা বেড়ে ১৩ লাখ ২২ হাজার ৬৫৪ জন হলো।
গতকাল বৃহস্পতিবার বিকালে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা স্বাক্ষরিত করোনাভাইরাস বিষয়ক এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তির তথ্যমতে, আগের দিন বুধবার ২৪ ঘণ্টায় সারাদেশ থেকে ৫১ হাজার ৯০২টি নমুনা সংগ্রহ করা হয়। এরপর ৭০৫টি ল্যাবে ৪৯ হাজার ৫১৪টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এর আগের দিন মঙ্গলবার ১৫ হাজার ৭৭৬ জনের শরীরে করোনা পজিটিভ শনাক্ত হয়। আর মৃত্যু হয় ২৩৫ জনের।
এদিকে গত ২৪ ঘণ্টায় সারাদেশ থেকে আরও ৪৬ হাজার ৫২২টি নমুনা সংগ্রহ করা হয়। এরপর যাচাই-বাছাই শেষে পূর্বে জমা কিছু স্যাম্পলসহ ৭০৭টি ল্যাবে ৪৬ হাজার ৯৯৫টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এ সময় ১২ হাজার ৭৪৪ জনের মধ্যে করোনা ধরা পরে। সেই হিসাবে একদিনে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা কিছুটা কমে এলেও মৃত্যুর সংখ্যা বেড়েছে। আর দেশে এ পর্যন্ত মোট নমুনা পরীক্ষার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৭৯ লাখ ৯৫ হাজার ৬৭৮টি। গত একদিনে করোনা থেকে সুস্থ হয়েছেন ১৫ হাজার ৭৮৬ জন। ফলে করোনা আক্রান্ত হওয়ার পর চিকিৎসা শেষে এ পর্যন্ত মোট সুস্থ হয়ে ওঠা রোগীর সংখ্যা ১১ লাখ ৫৬ হাজার ৯৪৩ জন হলো।
গত ২৪ ঘণ্টায় মারা যাওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে পুরুষ ১৪০ এবং নারী ১২৪ জন। এখন পর্যন্ত ভাইরাসটিতে মোট মারা যাওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে পুরুষ ১৪ হাজার ৬৮৪ জন এবং নারী সাত হাজার ২১৮ জন। বৃহস্পতিবার সরকারি হাসপাতালে ১৯০ জন, বেসরকারি হাসপাতালে ৫৫ জন এবং বাড়িতে ১৯ জন মারা যান।
২৪ ঘণ্টায় নমুনা পরীক্ষা বিবেচনায় শনাক্তের হার ২৭ দশমিক ১২ শতাংশ। এ পর্যন্ত শনাক্তের মোট হার ১৬ দশমিক শূন্য ৫৪ শতাংশ। ২৪ ঘণ্টায় সুস্থতার হার ৮৭ দশমিক ৪৭ শতাংশ। এ পর্যন্ত মৃত্যু হার ১ দশমিক ৬৬ শতাংশ।
তথ্য পর্যালোচনা করে আরও দেখা যায়, গত একদিনে ঢাকা জেলায় দেশের সর্বোচ্চ তিন হাজার ২৪৭ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে। এ ছাড়া ঢাকা বিভাগের ফরিদপুরে ১৭৫ জন, গাজীপুরে ২১০, গোপালগঞ্জে ১১৪, কিশোরগঞ্জে ১৮১, মানিকগঞ্জে ১২৪, মুন্সীগঞ্জে ১২০, নারায়ণগঞ্জে ২৮২, নরসিংদীতে ১০৬, রাজবাড়ীতে ১৯৬, শরীয়তপুরে ৩৭৪ এবং টাঙ্গাইলে ১০২ জনের মধ্যে সংক্রমণ ধরা পড়েছে।
চট্টগ্রাম বিভাগের মধ্যে চট্টগ্রাম জেলায় এক হাজার ১১৭ জন, কক্সবাজারে ২১৬, নোয়াখালীতে ২৩৬, লক্ষ্ণীপুরে ১৯৯, চাঁদপুরে ৪৪৬, কুমিলস্নায় ৭০৭ এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ২৪৯ জন আক্রান্ত হয়েছেন। রাজশাহী বিভাগের মধ্যে রাজশাহী জেলায় ১২৩ জন, পাবনায় ১০৯, সিরাজগঞ্জে ২১৮ এবং বগুড়ায় ১০৫ জন নতুন রোগী পাওয়া গেছে। খুলনা বিভাগের মধ্যে যশোরে ১৩৫ জন, খুলনায় ১৪৫ এবং কুষ্টিয়ায় ২৩১ জন কোভিড রোগী শনাক্ত হয়েছেন।
অন্য বিভাগগুলোর মধ্যে ময়মনসিংহে ৩১৫ জন, রংপুরে ১৩৯, বরিশালে ৩৩৫, পটুয়াখালীতে ১৮২, ভোলায় ১৭৬, সিলেটে ৪৪৫ এবং হবিগঞ্জে ১৩৪ জন রোগী শনাক্ত হয়েছেন গত ২৪ ঘণ্টায়।
ঢাকা বিভাগে গত একদিনে যে ৮৭ জনের মৃত্যু হয়েছে, তাদের ৪৭ জনই ছিলেন ঢাকা জেলার। চট্টগ্রাম বিভাগে মারা যাওয়া ৫৬ জনের মধ্যে ১৬ জন কুমিলস্নার এবং ১১ জন চট্টগ্রাম জেলার বাসিন্দা ছিলেন।
এ ছাড়া খুলনা বিভাগে ৩৫ জন, রাজশাহী বিভাগে ১৯, বরিশাল বিভাগে ১৬, সিলেট বিভাগে ২৩, রংপুর বিভাগে ১৮ এবং ময়মনসিংহ বিভাগে ১০ জনের মৃত্যু ঘটেছে গত একদিনে। মৃত ২৬৪ জনের মধ্যে ১৪২ জনের বয়স ছিল ৬০ বছরের বেশি, ৫৯ জনের বয়স ৫১-৬০ বছরের মধ্যে, ৩১ জনের বয়স ৪১-৫০ বছরের মধ্যে, ২৫ জনের বয়স ৩১-৪০ বছরের মধ্যে, পাঁচজনের বয়স ২১-৩০ বছরের মধ্যে, ১ জনের বয়স ১১-২০ বছরের মধ্যে এবং ১ জনের বয়স ১০ বছরের কম ছিল।
বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের প্রথম সংক্রমণ ধরা পড়েছিল গত বছর ৮ মার্চ। এ বছর ৪ আগস্ট তা ১৩ লাখ পেরিয়ে যায়। এর আগে ২৮ জুলাই দেশে রেকর্ড ১৬ হাজার ২৩০ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়। প্রথম রোগী শনাক্তের ১০ দিন পর গত বছরের ১৮ মার্চ দেশে প্রথম মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। গত ২ আগস্ট তা ২১ হাজার ছাড়ায়।
ভারতে উদ্ভূত ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের বিস্তারে গত জুলাই মাসে মহামারির সবচেয়ে কঠিন সময়ের মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে বাংলাদেশকে। ওই এক মাসেই দেশে মোট তিন লাখ ৩৬ হাজার ২২৬ জনের মধ্যে সংক্রমণ ধরা পড়েছে, মৃত্যু হয়েছে ছয় হাজার ১৮২ জনের। একক মাস হিসেবে এত রোগী শনাক্ত বা মৃত্যু এর আগে দেখতে হয়নি বাংলাদেশকে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হিসাবে দেখা যাচ্ছে, গত এপ্রিল, মে আর জুন মাস মিলিয়ে দেশে যত রোগী শনাক্ত হয়েছে, এক জুলাই মাসেই হয়েছে এর চেয়ে বেশি। আর এই এক মাসেই মারা গেছে আগের ছয় মাসের প্রায় সমান রোগী।
জুলাই মাসে কোভিডে আক্রান্ত ৩০০ জনের নমুনা থেকে পাওয়া করোনাভাইরাসের জিন বিশ্লেষণ করে ৯৮ শতাংশ ক্ষেত্রে ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট পেয়েছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) গবেষকরা। যুক্তরাষ্ট্রের সিডিসি বলছে, করোনাভাইরাসের এই ধরনটি জলবসন্তের মতোই সহজে ছড়াতে পারে। ইতোমধ্যে বিশ্বের অধিকাংশ দেশে ছড়িয়ে পড়া ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের সংক্রমণে অসুস্থতার মাত্রাও আগের তুলনায় বেশি হচ্ছে।