বর্তমানে বিশ্বজুড়ে করোনার যে ঢেউ দেখা যাচ্ছে তার প্রধানতম কারণ হিসেবে জনস্বাস্থ্যবিদগণ দায়ী করছেন করোনার ‘ডেল্টা ধরনকে’। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংবাদমাধ্যম সিএনএন সম্প্রতি এ বিষয়ে এক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। যেখানে ডেল্টাকে সবচেয়ে বিপজ্জনক ধরন হিসেবে আখ্যা দেওয়া হয়েছে।
ওই প্রতিবেদনে জানানো হয়, করোনার ডেল্টা ধরন ২০২০ সালের শেষ দিকে ভারতে প্রথম শনাক্ত হয়। একে শুরুর দিকে করোনার ভারতীয় ধরন বলা হতো। পরে ডব্লিউএইচওর পক্ষ থেকে এই ধরনের নতুন নাম দেওয়া হয় ‘ডেল্টা ভেরিয়েন্ট’। ধরনটির বৈজ্ঞানিক নাম (বি.১.৬১৭)। গত মে মাসে করোনার ডেল্টা ধরনকে ‘উদ্বেগজনক ধরন’ হিসেবে তালিকাভুক্ত করে ডব্লিউএইচও।
করোনার ডেল্টা ধরন ভারতে শনাক্তের পর দেশটিতে তা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। একপর্যায়ে ভারতে করোনার ডেল্টা ধরন প্রাধান্যশীল হয়ে ওঠে। এ ধরনের কারণেই ভারতে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ মারাত্মক আকার ধারণ করে। সংক্রমণে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে দেশটি। এতে ভারতের স্বাস্থ্যব্যবস্থা কার্যত ভেঙে পড়ে। পরে করোনার ডেল্টা ধরন যুক্তরাজ্যে শনাক্ত হয়। এরপর একের পর এক দেশে ডেল্টা ধরন শনাক্ত হওয়ার খবর আসতে থাকে।
ডব্লিউএইচও বলছে, বর্তমানে বিশ্বের প্রায় ১০০টি দেশে শনাক্ত হয়েছে করোনার ‘ডেল্টা’ ধরন। ডব্লিউএইচও সতর্ক করে বলেছে, বিশ্বে ডেল্টার সংক্রমণ দ্রুত বাড়ছে। ফলে করোনার এই ধরন অন্য সব ধরনকে দ্রুত ছাপিয়ে যেতে পারে। এভাবে শিগগিরই বিশ্বে ডেল্টা করোনার আধিপত্যশীল ধরন হয়ে উঠতে পারে।
সিএনএন জানায়, একটি গবেষণা ইঙ্গিত দিয়েছে যে করোনার অন্য সব ধরনের চেয়ে এই ডেল্টা ধরন মানুষের মধ্যে দ্রুতগতিতে সংক্রমণ ছড়িয়ে থাকতে পারে। কারণ, ধরনটি মানুষের শরীরে দ্রুত হারে নিজের অনেকগুলো ‘কপি’ করতে পারে।
চীনের বিজ্ঞানীরা ডেল্টায় সংক্রমিত রোগীদের নিয়ে গবেষণা করেছেন। এ ক্ষেত্রে তারা মহামারির শুরুর দিকে আক্রান্ত রোগীদের সঙ্গে ডেল্টায় সংক্রমিত রোগীদের তুলনা করেছেন। তারা দেখতে পেয়েছেন যে ডেল্টায় সংক্রমিত রোগীদের শরীরে ভাইরাসের উপস্থিতি অনেক বেশি। তুলনামূলক বিচারে এই পরিমাণ ১ হাজার ২৬০ গুণ বেশি।
ব্রাউন ইউনিভার্সিটির স্কুল অব পাবলিক হেলথের ডিন আশীষ ঝা বলেন, ‘যারা ডেল্টা ধরনে সংক্রমিত হচ্ছেন, তাদের শরীরে ভাইরাসের পরিমাণ অনেক বেশি। শরীরে ভাইরাস প্রবেশের খুব অল্প সময়ের মধ্যেই তা অনেক বেড়ে যাচ্ছে। এই সময়টা পাঁচ বা সাত মিনিট। তা ছাড়া এই ধরনে সংক্রমিত হতে আক্রান্ত ব্যক্তির ছয় ফুট দূরত্বের মধ্যেও কাউকে আসতে হবে না।’
যারা মানুষ টিকা নেননি, তারাই বেশি ডেল্টায় সংক্রমিত হচ্ছেন বলে জানান আশীষ ঝা। তিনি আরও বলেন, ‘ডেল্টা থেকে লোকজন সহজেই সংক্রমিত হচ্ছেন।’
সংবাদ সূত্রঃ সিএনএন