গ্রীষ্ম ও বর্ষা মৌসুমের জনপ্রিয় ফল কাঁঠাল। কাঁঠাল পুষ্টি সমৃদ্ধ। এতে আছে থায়ামিন,রিবোফ্লাভিন, ক্যালসিয়াম, পটাসিয়াম, আয়রন, সোডিয়াম, জিঙ্ক এবং নায়াসিনসহ বিভিন্ন প্রকার পুষ্টি উপাদান। অন্যদিকে কাঁঠালে প্রচুর পরিমাণে আমিষ, শর্করা ও ভিটামিন থাকায় তা মানব দেহের জন্য বিশেষ উপকারী। প্রাপ্তির সহজলভ্যতা, পুষ্টিগুণ ও উপকারিতার মানদণ্ড বিবেচনায় ‘জাতীয় ফল’ এর মর্যাদায় অধিষ্ঠিত কাঁঠাল।
দেশে কাঁঠাল রয়েছে নানা জাতের। নানা প্রজাতির কাঁঠালের মধ্যে গোল-কাঁঠাল একটি। যা দেশের সব জায়গায় উৎপন্ন হতে দেখা যায় না। এই কাঁঠালগুলো দেখতে তাল বা জাম্বুরার মতো।
সম্প্রতি সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানে এমন প্রজাতির কাঁঠাল আগত পথচারীদের দৃষ্টি আর্ষকণ করে। কেউ কেউ আগ্রহসহকারে এই প্রজাতির কাঁঠাল সম্পর্কে খোঁজ-খবর নেন।
বাংলাদেশে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, পৃথিবীতে কাঁঠাল উৎপাদনের দিক থেকে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ। দেশে ৭৬ হাজার ২৯৫ হেক্টর জমিতে কাঁঠাল চাষ হচ্ছে এবং মোট উৎপাদন ১৭ লাখ ৫১ হাজার ৫৪৯ টন। তবে প্রথম স্থানটি ধরে রেখেছে ভারত।
এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন বলেন, ‘কাঁঠালের ইংরেজি নাম Jackfruit এবং বৈজ্ঞানিক নাম Artocarpus heterophyllus। কাঁঠালের অনেকগুলো ভ্যারাইটি রয়েছে। এর মধ্যে এই গোল-কাঁঠালও একটি ভ্যারাইটি। এটা বেলের মতো, তালের মতো বা জাম্বুরার মতো গোলাকৃতির হয়। দেখতেও সুন্দর লাগে। এ ধরনের কাঁঠাল সচরাচর কম দেখা যায়। অপ্রতুল বলতে হবে।
‘আমাদের জাতীয় ফলের অধীনে কিন্তু অনেকগুলো ভ্যারাইটি আছে। কতগুলো আষাঢ়-শ্রাবণ মাসে পাকে। আবার কতগুলো বৈশাখেই পেকে যায়। কতগুলো কড়া মিষ্টি। কতগুলো শক্ত কোষজাতীয়। কতগুলো আবার নরম কোষ। বিভিন্ন সাইজ। এটা হচ্ছে জেনেটিক ভ্যারিয়েশন। ’
তিনি আরো বলেন, আকার, আকৃতি, বর্ণ, গন্ধ, স্বাদ, উৎপাদনের সময়কাল, কোষ বিভাজন- অনেকগুলো বিষয় বিবেচনায় আমাদের দেশে কাঁঠালের হাজারো রকমের ভ্যারাইটি রয়েছে। এর মধ্যে এই একটা গোলাকৃতির কাঁঠাল পাওয়া গেল। যা ব্যতিক্রম।
আরো একটি বিষয় এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন, কাঁঠাল ছোট হলে আরো একটি বিশেষ সুবিধা রয়েছে। তা হলো ইউজ ফ্রেন্ডলি অর্থাৎ ব্যবহারে বন্ধুসুলভ সুবিধা। বড় একটা কাঁঠাল ভাঙলে রেখে দিতে হয় দু’ দিন। তখন স্বাস্থ্যঝুঁকির দিকটিও চলে আসে। কিন্তু ছোট কাঁঠাল হলে একবারে একদিনেই শেষ। অর্থাৎ স্বাস্থ্যসুরক্ষার দিকটিও ছোট কাঁঠালের অনেক বেশি রয়েছে বলে জানান অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন।
সাতছড়ির স্থানীয় এলাকাবাসী জুবায়ের বলেন, এগুলো বারোমাসি কাঁঠাল। শুধু এক মৌসুমেই যে ধরে তা নয়, গাছে মোটামুটি সারাবছর পাওয়া যায়। খেতে খুবই মিষ্টি এবং কাঠালের কোষগুলো ছোট ছোট।