বাংলাদেশের পূর্ব-পাহাড়ি অঞ্চলের খাগড়াছড়ি ও চট্টগ্রাম জেলার এবং দেশের একমাত্র প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন কেন্দ্র হালদা নদীতে নমুনা ডিম ছেড়েছে মা মাছ। গতকাল মঙ্গলবার (২৫ মে) মধ্যরাতে নদীতে মা মাছ নমুনা ডিম ছাড়ে বলে জানিয়েছেন হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মোহাম্মদ রুহুল আমিন।
তিনি বলেন, রাতে এক জেলে ফোন করে জানিয়েছেন- মা মাছ নমুনা ডিম ছেড়েছে। আমরা তৎক্ষণাৎ পরিদর্শনও করেছি। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে মা মাছ ডিম ছাড়বে।
পোনা আহরণকারীরা জানান, রাত বারোটার পর হালদার আজিমের ঘাটা, নাপিতের ঘোনা, স্লুইসগেট, মাছুয়া ঘোনা, নোয়াহাটসহ বিভিন্ন এলাকায় মা মাছ নমুনা ডিম ছেড়েছে।
হালদা গবেষক চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ড. মঞ্জুরুল কিবরিয়া বলেন, সারারাত হালদা নদীর পাড়ে কাটালাম। কিন্তু মা মাছ ডিম ছাড়েনি। রাত বারোটার দিকে শুধুমাত্র কিছু নমুনা ডিম পাওয়া গেছে।
তিনি বলেন, গত বছরও প্রায় একইসময়ে মা মাছ ডিম ছেড়েছিল। তবে নদীর পানিতে লবণাক্ততার পরিমাণ বেশি থাকায় মা মাছ ডিম ছাড়ছে না। প্রচুর পরিমাণ বৃষ্টি হলে কয়েকদিনের মধ্যে মা ডিম ছাড়বে বলে আশা করছি।
পোনা আহরণকারী জেলে মো.শাহ আলম জানান, প্রতিবছর চৈত্র থেকে বৈশাখ মাসে অমাবস্যা বা পূর্ণিমা তিথিতে বৃষ্টির প্রবল স্রোত হলে হালদা নদীতে ডিম ছাড়ে মা মাছ। কিন্তু এ বছর তেমন বৃষ্টি হয়নি। তবুও ডিমের আশায় হালদা পাড়ে পোনা আহরণকারীরা অপেক্ষার প্রহর গুণছে।
স্থানীয় কামাল সওদাগর, আশু বড়ুয়া ও আবদুল কাদের বলেন, নমুনা ডিম ছাড়ার পর যে কোনও সময় ডিম ছাড়বে মা মাছ। আমরা সারা রাত হালদার পাড়ে কাটিয়েছি। মা মাছ ডিম ছাড়েনি। তবে, কিছু নমুনা ডিম ছেড়েছে। নমুনা ডিম দিলে আমরা মনে করি মা মাছ ডিম ছাড়বে। আজ রাত (বুধবার) বা আগামীকাল ডিম ছাড়তে পারে।
প্রসঙ্গত, প্রতি বছর এপ্রিল থেকে জুন মাসের মধ্যে হালদায় মা মাছ ডিম ছাড়ে। পূর্ণিমা ও অমাবস্যা তিথি ডিম ছাড়ার উপযুক্ত সময়। এসব তিথিতে বজ্রসহ প্রবল বর্ষণের ফলে নদীতে ঢলের সৃষ্টি হয়। বিশেষ করে নদীর ওপর অংশ খাগড়াছড়ি, মানিকছড়ি ও উত্তর ফটিকছড়িতে প্রবল বর্ষণের ফলে নদীর সঙ্গে সংযুক্ত ছড়া ও শাখা খালের মাধ্যমে পাহাড়ি ঢল হালদা নদীতে এসে পড়ে। ঢলের সময় মা মাছ ডিম ছাড়ে।