রাজশাহীর আমের খ্যাতি বিশ্বজুড়ে। সারাদেশে এককথায় বিক্রি হয়, মানুষ কেনেও দেদার। দেশের চাহিদা মিটিয়ে কয়েক বছর ধরেই ইউরোপের বিভিন্ন দেশে যাচ্ছে ‘আমের রাজধানী’ খ্যাত রাজশাহীর আম।
এ বছরও ইউরোপের ৪ দেশে যাবে রাজশাহীর আম। ব্যাগিং পদ্ধতিতে উৎপাদিত এসব আমে কোনো ধরনের রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহার হয়নি।
বেসরকারি উদ্যোগে জার্মানি, ফ্রান্স, ইতালি ও সুইজারল্যান্ডে যাবে রাজশাহীর আম। ‘বাংলাদেশ ফ্রুটস ভেজিটেবলস অ্যান্ড অ্যালাইড প্রোডাক্টস এক্সপোর্টার অ্যাসোসিয়েশন’ নামে একটি সংগঠন আম রপ্তানি করবে।
রাজশাহীর বিভিন্ন আমের জাতের মধ্যে হিমসাগর, ল্যাংড়া, আম্রপালি ও তোতাপুড়ি আম রপ্তানি হবে। এজন্য লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৩৩৩ মেট্রিক টন।
রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, বিদেশে আম রপ্তানি করতে হলে ২৬টি শর্ত মানতে হয়। ‘ব্যাগিং’ হচ্ছে শর্তগুলোর একটি। তবে, ব্যাগিং করা না হলেও আমের মান ভালো হলে রপ্তানি করা যায়। বিদেশ পাঠাতে হলে সব আম কোয়ারেন্টিন পরীক্ষা করা হয়। এজন্য রপ্তানিকারকরা আম ঢাকার শ্যামপুর প্ল্যান কোয়ারেন্টিন উইং সেন্ট্রাল প্যাকিং হাউসে নিয়ে যান। সেখানে আমের মান ভালো হলে প্রতিষ্ঠান থেকে ছাড়পত্র দেয় কর্তৃপক্ষ। এরপরই জাহাজে করে আম বিদেশে যায়।
এর আগে ২০১৯ সালে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে রাজশাহীর প্রায় ৩৫ দশমিক ৭৫ মেট্রিক টন আম রপ্তানি হয়েছিল। এর মধ্যে গোপালভোগ, ল্যাংড়া, আম্রপালি, হিমসাগর ছিলো।
করোনার কারণে ২০২০ সালে রাজশাহী থেকে কোনো আম সরকারিভাবে রপ্তানি হয়নি। তবে বাঘা উপজেলা থেকে ‘বাংলাদেশ ফ্রুটস ভেজিটেবলস অ্যান্ড অ্যালাইড প্রোডাক্টস এক্সপোর্টার অ্যাসোসিয়েশন’ ৯ মেট্রিক টন এবং অন্যান্য উপজেলা থেকে ১২ মেট্রিক টন আম রপ্তানি করে।
রাজশাহীর বাঘা উপজেলার আম ব্যবসায়ী রাশেদুল ইসলাম রাজু বাংলানিউজকে বলেন, বিদেশিদের শর্ত মেনে ২০১৬ সাল থেকে আম রপ্তানি করছেন তারা। এখন পর্যন্ত ক্রেতাদের কাছ থেকে কোনো অভিযোগ আসেনি। এবারও তারা উন্নত ‘ফ্রুট ব্যাগিং’ পদ্ধতিতে ভালোভাবে আম চাষ করেছেন। আশা করছেন রপ্তানি করতে পারবেন। কারণ রাসায়নিকমুক্ত এই আমের গুণগত মান ভালো। বর্হিবিশ্বে রাজশাহীর আমের প্রচুর চাহিদা ও সুনাম রয়েছে।
করোনা ভাইরাসের সংক্রমণের কারণে রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা অর্জন নিয়ে শঙ্কিত আম ব্যবসায়ীরা।
বাঘার আরেক আম ব্যবসায়ী গোলাম কিবরিয়া বলেন, করোনার কারণে রাজশাহীর আম চাষি ও ব্যবসায়ীরা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। বিশেষ করে বাইরে আম রপ্তানি করতে না পেরে। করোনার কারণে ২০২০ সালে রাজশাহী থেকে কোনো আম সরকারিভাবে রপ্তানি হয়নি। এবার ৩৩৩ মেট্রিক টন আম রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া রয়েছে। বিশ্বব্যাপী করোনার সংক্রমণ ফের বেড়ে গেলে রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সম্ভব নাও হতে পারে।
জানতে চাইলে রাজশাহীর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মুহাম্মদ শরীফুল হক বাংলানিউজকে বলেন, বাঘা উপজেলাসহ রাজশাহীর কয়েকটি উপজেলা থেকে এবার ইউরোপের ৪ দেশে বেসরকারি আম রপ্তানি হবে। আমচাষি ও ব্যবসায়ীদের সার্বিক সহায়তা দেওয়া হবে। এছাড়াও দেশের সম্মান বিদেশে যেন খর্ব না হয় সেটি মাথায় রেখে উপজেলা পর্যায়ে মনিটরিং টিম কাজ করছে।
জানতে চাইলে রাজশাহী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সহকারী উপ পরিচালক তৌফিকুর রহমান বলেন, স্থানীয় আমচাষি ও ব্যবসায়ীদের বিদেশে রপ্তানিযোগ্য আম কিভাবে উৎপাদন, সংগ্রহ ও সংগ্রহোত্তর ব্যবস্থাপনা করা যায়, এ নিয়ে ট্রেনিং দেওয়া হচ্ছে। আশা করছি, এবার আম রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হবে।