ফলন-বাজার দুই-ই ভালো, তাই খুশি লালমনিরহাটের শসা চাষিরা

বাংলার এক এক জন কৃষক হচ্ছে এই সবুজ বাংলার যোদ্ধা। তার তাদের কষ্টের মাধ্যমে ফসল উৎপাদন করে চাহিদা মেটায় আমাদের সকলের। অল্প সময়ে কম খরচে অধিক মুনাফা অর্জনের কৃষিপণ্য শসা। আর এই শসার চাষ করে বাম্পার ফলন ও বাজারে ভালো দাম পাওয়ায় হাসি ফুটেছে লালমনিরহাটের চাষিদের মুখে।

কৃষকরা জানান, বীজ বপন থেকে মাত্র তিন মাসের মধ্যেই ফল আসে শসা গাছে। পানি জমে না এমন বেলে দো-আঁশ মাটি শসা চাষের জন্য যথেষ্ট উপযোগী। গর্ত করে প্রয়োজনীয় জৈব সার প্রয়োগ করে বীজ বপন করে একটু সেচ ও পরিচর্যা করলেই শসা ফলানো সম্ভব। গাছ কিছুটা বড় হলে মাচাং বানিয়ে দিলে আড়াই মাসেই ফুল ও ফল আসে শসার গাছে। ফলে উৎপাদন খরচ একেবারেই কম। ফসল সংগ্রহ শুরু হলে একদিন পর পরই শসা তুলে বাজারে পাঠানো যায়।

লালমনিরহাটের ৫টি উপজেলার মধ্যে সব থেকে বেশি শসার চাষাবাদ হয় আদিতমারী উপজেলায়। এ উপজেলার কমলাবাড়ি ইউনিয়ন সবজি চাষের জন্য বিখ্যাত। তাই স্থানীয়ভাবে কমলাবাড়ি সবজি এলাকা বলে খ্যাত। এই এলাকায় মাঠের পর মাঠ কৃষকের বিভিন্ন জাতের সবজিতে ছেঁয়ে থাকে। রবি ও খরিপ দুই মৌসুমেই সবজির চাষাবাদ করেন এখানকার কৃষকরা। এ অঞ্চলের এক একজন চাষি সবজি চাষে বেশ দক্ষ। এই এলাকা থেকে প্রতিদিন ট্রাক ভরে বিভিন্ন জাতের সবজি রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশের বড় বড় সবজি মোকামে পাইকারি দরে বিক্রি হয়।

সবজির চাষাবাদ করে কৃষকরা যেমন লাভবান হচ্ছেন। অনুরূপভাবে কৃষি শ্রমিকরা সারা বছর কাজের সুযোগ পাচ্ছেন। স্থানীয় বাজারে বা মাঠে কৃষকদের কাছ থেকে সবজি ক্রয় করে সারাদেশের বাজার পাঠিয়ে লাভবান হচ্ছেন হাজারো ব্যবসায়ী। এভাবে জেলার অর্থনীতি সচল রেখেছেন চাষিরা। এ জেলার অর্থনীতির প্রধান উৎস কৃষি তথা সবজি চাষাবাদ। বর্তমানে সবজি ক্ষেতের বড় অংশই জুড়ে আছে শসা।

চলতি মৌসুমে আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় শসার বাম্পার ফলন হয়েছে। একইভাবে বাজারে শসার ব্যাপক চাহিদা থাকায় বাজার দরও ভালো। সব মিলিয়ে লাভবান হচ্ছেন চাষিরা। বাজারে চাহিদা থাকায় শসা কৃষকের ক্ষেতেই বিক্রি হচ্ছে। বর্তমানে কৃষকের ক্ষেতে শসা প্রতি মণ দেড় হাজার টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। যা ঢাকার পাইকারি বাজারে প্রতিমণ ২ হাজার থেকে ২ হাজার ৩শ টাকা দরে বিক্রি করছেন ব্যবসায়ীরা। এসব অঞ্চলে এক সময় তীব্র খাদ্য সংকট ছিল। সেই অঞ্চলে এখন বড় বড় দালানকোঠা গড়ে উঠেছে। সবই সবজি চাষাবাদের টাকায়। এখন অভাব কেটে গেছে এসব অঞ্চলের মানুষের।

আদিতমারী উপজেলা কৃষি অফিস জানায়, চলতি খরিপ মৌসুমে শাকসবজি চাষের জন্য ৭৩০ হেক্টর লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও অর্জিত হয়েছে ৯৭০ হেক্টর। তার মধ্যে ৮০ হেক্টরের বেশি জমিতে শুধু শসা চাষ হয়েছে। তবে স্থানীয় চাষিদের দাবি শতাধিক হেক্টর জমিতে শসার চাষ হয়েছে।

বড় কমলাবাড়ী বটতলা গ্রামের কৃষক আকতার হোসেন জানান, নিজের জমি না থাকায় অন্যের এক একর জমি বর্গা নিয়ে লাখ টাকা খরচ করে শসা চাষ করেছেন। তার ক্ষেত থেকে গত সপ্তাহ থেকে শসা তোলা শুরু করেছেন। এক একর জমি থেকে দুই দিনে ৫০ হাজার টাকার শসা বিক্রি করেছেন তিনি। এখন প্রতি দুই দিন পর পর শসা সংগ্রহ করে বিক্রি করবেন। এখন মাঝে মধ্যে পোকা দমনে সামান্য কিছু কীটনাশক স্প্রে করতে হবে। আবহাওয়া ও বাজার অনুকলে থাকলে এই এক একর জমির শসা বিক্রি করে ৬/৭ লাখ টাকা লাভের আশা করছেন আকতার হোসেন।

\"Cucumber\"

ভাদাই ইউনিয়নের কৃষক মানিক মিয়া জানান, বেশ মুনাফা পাওয়ায় প্রতি বছর শসা চাষ করেন তিনি। চলতি মৌসুমেও অন্যের এক একর জমি ২০ হাজার টাকায় লিজ নিয়ে শসা চাষ করেছেন। খরচ ইতোমধ্যে লাখ টাকা করেছেন। তার ক্ষেতে শসা ধরেছে। দুই/চার দিনের মধ্যে তিনিও শসা বাজারে বিক্রি শুরু করবেন। তারও আশা ৫ লক্ষাধিক টাকা আয়ের।

পাইকারি সবজি ব্যবসায়ী হাদিকুল ইসলাম হাদু জানান, প্রতিদিন চাষিদের ক্ষেত থেকে সকালে সবজি ক্রয় করে বিকেলে ট্রাকে করে পাঠানো হয় ঢাকাসহ সারাদেশের পাইকারি বাজারে। সেখানে পরদিন সকালেই টাটকা সবজি চলে যায় ভোক্তাদের হাতে। বিক্রির পর পাইকারি ব্যবসায়ীরা অনলাইনের মাধ্যমে ওই দিনই টাকা পাঠান। বর্তমানে তিনি একাই দৈনিক ৪/৫ ট্রাক শসা পাঠাচ্ছেন ঢাকা, চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন পাইকারি বাজারে। বাজারে শসার চাহিদা থাকায় বিক্রিতে কোনো ঝামেলা নেই। পরিবহন খরচ দিয়েও প্রতি মৌসুমে ৫/৭ লাখ টাকা আয় হয় তার। তার মত হাজারো ব্যবসায়ী রয়েছেন এ অঞ্চলে।

আদিতমারী উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ আলীনুর রহমান বলেন, এ উপজেলার অধিকাংশ জমি সবজি চাষের জন্য উপযুক্ত। বিশেষ করে কমলাবাড়ি এলাকায় সারা বছর বিভিন্ন জাতের সবজি চাষাবাদ হয়ে থাকে। এ বছর আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় শসার বাম্পার ফলন হয়েছে। বাজারে চাহিদা ভালো থাকায় বেশ মুনাফাও পাচ্ছেন চাষিরা।

Scroll to Top