বাংলাদেশ ছয় ঋতুর দেশ। রূপসী বাংলার ছটি ঋতু যেন তার ছটি সন্তান। দুই মাস মিলে এক একটি ঋতু : বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ গ্রীষ্মকাল; আষাঢ়-শ্রাবণ বর্ষাকাল; ভাদ্র-আশ্বিন শরৎকাল, কার্তিক-অগ্রহায়ণ হেমন্তকাল; পৌষ-মাঘ শীতকাল; ফাল্গুন-চৈত্র বসন্তকাল।
আসছে বর্ষা মৌসুম। বৃক্ষ রোপণের তখনই প্রকৃত সময়। আর বৃক্ষ রোপণের জন্য দেশীয় প্রজাতি উদ্ভিদ নির্বাচনের কোনো বিকল্প নেই। এতে করে প্রকৃতি ফিরে পায় তার সব ধরনের সুস্থতা। তখনই প্রকৃতিতে ফিরে আসে পাখিরা। গাছে গাছে ফিরে আসে পিঁপড়ের দল। কিংবা ফিরে আসে দেশীয় প্রজাতির গাছকে আশ্রয় করে থাকা নানান প্রকারের জীববৈচিত্র্য। এর মাধ্যমে ধরিত্রী হয় সুফলা-শষ্যশ্যামলা।
একটি বৃক্ষহীন টিলাকে বা অসমলতভূমিকে যদি ফেলে রাখা হয়, তাহলে কিছু দিন পর সেখানে নানান ধরনের ছোট বড় বৃক্ষগুলোকে জন্মলাভ করতে দেখা যায়। এভাবেই মাটি তার নিজস্ব ধীর গতিতে প্রকৃতিকে জাগিয়ে তোলে। তারপর সেখানে বৃক্ষগুলো বড় হলো ফিরে আসে নানান জীববৈচিত্র্য। ক্রমে একে অপরের খাদ্যশৃংখল নিয়ন্ত্রণে অংশীদারিত্বমূলক পটভূমি তৈরি করে। এই খাদ্যশৃংখলের উপাদানগুলো ধীরে ধীরে বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয়ে সেই পরিবেশের ভারসাম্যে রাখে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা।
আজ বৃহস্পতিবার (২২ এপ্রিল) বিশ্ব ধরিত্রী দিবস উপলক্ষে যোগাযোগ করা হলে বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের সিলেট বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) রেজাউল করিম চৌধুরী প্রকৃতি রক্ষায় দেশীয় বৃক্ষ রোপণ ও পরিচর্যার কথা উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, পরিবেশ এবং প্রকৃতি রক্ষার মাধ্যমে ধরিত্রীকে টিকিয়ে রাখাই এই দিবসটির তাৎপর্য। এর জন্য আমাদের সঠিক পরিকল্পনা নিতে হবে। নগরায়ন আমাদের থামাতে হবে। শিল্পায়ন তো থামানো সম্ভব নয়। শিল্পায়নের ফলে কলকারাখানাগুলো যেন সরাসরি কার্বন প্রকৃতিতে না ছাড়ে। অর্থাৎ কার্বন ট্রিটমেন্ট প্লান্ট (পরিশোধনাগার) বসাতে হবে। আর বনায়ন তো অবশ্যই গণ্য। বনভূমিকে অন্য কোনো খাতে ব্যবহার করা যাবে না। বনভূমির নিজস্ব সম্পদগুলোকে বিনষ্ট হতে দেওয়া যাবে না।
আরেকটি বিষয় হলো, বনায়নের ক্ষেত্রে অবশ্যই দেশীয় প্রজাতি বৃক্ষ নির্বাচন করতে হবে। শুধু বৃক্ষরোপণ করতেই হবে না, রোপিত গাছগুলোকে মাঝেমধ্যে পরিচর্যাও করতে হবে। তাহলে বৃক্ষরোপণের সফলতা অনেকাংশে চলে আসবে।
নিজস্ব জমি গুরুত্ব উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমাদের বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের সাড়ে ১১ হাজার একর নিজস্ব সংরক্ষিত বনভূমি রয়েছে। চলতি বর্ষা আমরা এসব জায়গাতে ওয়াইল্ডলাইফের (বন্যপ্রাণী) জন্য দেশীয় প্রজাতির নানা বিলুপ্তপ্রায় ফলদ বৃক্ষ রোপণ করবো। তাতে করে আমাদের ওয়াইল্ডলাইফগুলোও (বন্যপ্রাণীদের) বাঁচলো, সংরক্ষিত বনের বনায়ন সম্প্রসারিত হলো এবং ক্ষতিকর কার্বন-ডাই-অক্সাইড শোষণ করানো হলো। শুধু রোপণ করেই আমাদের কাজ শেষ নয়, মাঝেমধ্যে আমরা গিয়ে দেখবো লাগানো সেই বৃক্ষগুলোর কি অবস্থা।
তুলনামূলক গুরুত্ব উল্লেখ করে ওয়াইল্ডলাইফ ডিভিশনের (বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা) ডিএফও রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, ‘বনায়ন যদি বাড়ে, শিল্পায়ন যদি কমে বা স্থিতিশীলও যদি থাকে, তারপর শিল্পায়নে যদি ক্ষতিকর বায়ু কিংবা ক্ষতিকর তরল উপাদানের পরিশোধন পদ্ধতি স্থাপন করা হয়, তারপর গাড়িও যদি তার ক্ষতিকর জ্বালানি নিঃসরণ থেকে কিছুটা নিয়ন্ত্রিত থাকে তাহলে প্রকৃতিতে বৃক্ষের সুফল অনেকাংশে বাড়বে। গাড়ির জ্বালানিই পরিবেশ-প্রকৃতি তুলনামূলকভাবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং গড় তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায়। ’
আমাদের সংরক্ষিত বনসহ দেশীয় প্রজাতির উদ্ভিদগুলোকে সংরক্ষণের মাধ্যমে পরিবেশ এবং প্রকৃতিকে সুরক্ষিত করা অনেকাংশে সম্ভব বলে জানান সিলেট ওয়াইল্ডলাইফের এই বিভাগীয় বন কর্মকর্তা।