ঘূর্ণিঝড় বুলবুল, ফনী, আইলা এবং আম্পানে ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধ মেরামতের জন্য প্রতি মিটারে ব্যয় চাওয়া হয়েছে ৩১ হাজার ৭৯৮ টাকা। প্রস্তাবিত এ ব্যয়কে অত্যাধিক মনে করে প্রশ্ন তুলেছে পরিকল্পনা কমিশনের কৃষি, পানি সম্পদ ও পল্লী প্রতিষ্ঠান বিভাগ।
‘ বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের খুলনা বিভাগের প্রশাসনিক অঞ্চল সাতক্ষীরা জেলার পোল্ডার নং ১৫ পুনর্বাসন’ প্রকল্প এমন অত্যাধিক অর্থের আবদার করা হয়েছে।
প্রস্তাবিত প্রকল্পের আওতায় ১ দশমিক ৬০ কিলোমিটার বাঁধ পুনর্বাসন বাবদ ৫ কোটি টাকা চাওয়া হয়েছে। ফলে প্রতি মিটারে পুনর্বাসন ব্যয় দাঁড়ায় ৩১ হাজার ৭৮৯ টাকা। প্রকল্পের মূল কাজ অর্থাৎ বাঁধ নির্মাণ, সংরক্ষণ, মেরামত ইত্যাদি কাজের প্রাক্কলন পূর্বের প্রাক্কলন এবং সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ কিনা তা যাচাই করে দেখার প্রয়োজন আছে বলে জানিয়েছে কমিশন।
এ বিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে, প্রকল্পের প্রস্তাবিত ব্যয় পুনর্গঠন করে পুনরায় জমা দেওয়া হবে।
প্রকল্পটি নিয়ে সম্প্রতি পরিকল্পনা কমিশনের কৃষি, পানি সম্পদ ও পল্লী প্রতিষ্ঠান বিভাগের সদস্য (সচিব) রমেন্দ্র নাথ বিশ্বাসের সভাপতিত্বে আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সভায় প্রকল্পের ব্যয় নিয়ে নানা ধরণের প্রশ্ন তোলা হয়।
প্রকল্পের আওতায় মোটরযান মেরামত ও সংরক্ষণ বাবদ ৯ লাখ, সেমিনার কনফারেন্স বাবদ ৬ লাখ, তিনটি রেস্ট হাউজ, অফিস ভবন মেরামত বাবদ ১ কোটি টাকা প্রকল্প থেকে বাদ দেওয়ার সুপারিশ করেছে পরিকল্পনা কমিশন। অন্যদিকে প্রকল্পে সম্মানী ভাতা বাবদ ৮ লাখ, কম্পিউটার কেনা বাবদ ২ লাখ এবং মধ্যবর্তী মূল্যায়ন বাবদ ১০ লাখ টাকা প্রকল্পের আওতায় বরাদ্দ দেওয়ার বিষয়ে সভায় একমত পোষণ করা হয়।
পরিকল্পনা কমিশনের কৃষি, পানি সম্পদ ও পল্লী প্রতিষ্ঠান বিভাগের প্রধান (অতিরিক্ত সচিব) মো. মতিউর রহমান বলেন, প্রকল্পটি নিয়ে পিইসি সভা হয়েছে। প্রকল্পের কিছু ব্যয় বেশি মনে হয়েছে। এই বিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কাছে জবাব চাওয়া হয়েছে। তারা (বাপাউবো) জবাব দিলেই বিষয়গুলো প্রকল্প প্রস্তাবনায় পুনরায় সংযুক্ত করে একনেক সভার জন্য প্রস্তুত করা হবে।
প্রকল্পের আওতায় ২২ দশমিক ৫০ কিলোমিটার নিষ্কাশন খাল পুনঃখনন বাবদ ১৭ কোটি ১৯ লাখ টাকা সংস্থান রাখা হয়েছে। ফলে প্রতি মিটারে নিষ্কাশন বাবদ খরচ পড়ে ৭ হাজার ৬৪০ টাকা। এই বিষয়ে নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে কমিশন।
নিষ্কাশন খাল পুনঃখননের যৌক্তিকতার বিষয়ে বাপাউবো প্রতিনিধি জানায়, পোল্ডার অভ্যন্তরে জলাবদ্ধতা নিরসনের জন্য নিষ্কাশন খাল পুনঃখনন করা প্রয়োজন।
সভায় পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) প্রতিনিধি বলেন, বাঁধ প্রতিরক্ষার ক্ষেত্রে কী ধরনের জিও ব্যাগ ব্যবহার করা হবে সে বিষয়ে ব্যাখ্যা প্রকল্পে অনর্ভূক্ত করা হয়নি। বাঁধের ঢাল সংরক্ষণ কাজে ব্যবহারের জন্য ব্লকের পুরত্ব ৩০০ মিলি মিটারের পরিবর্তে ২০০ মিলি মিটার করা যায় কি না বিষয়টি নিয়ে বিবেচনা করা প্রয়োজন। নদী তীরে কী ধরনের জিও ব্যাগ ব্যবহার করা হবে তার সুনির্দিষ্ট বিবরণ প্রকল্পে অন্তর্ভূক্ত করা প্রয়োজন।
প্রকল্পের মোট প্রস্তাবিত ব্যয় ১ হাজার ২৩ কোটি টাকা। চলতি সময় থেকে ২০২৩ সালের জুন মেয়াদে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করতে চায় বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড। প্রকল্পের অন্যাতম উদ্দেশ্য টেকসই বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ নির্মাণের মাধ্যমে সাতক্ষীরা জেলার শ্যামনগর উপজেলার গাবুরা ইউনিয়নের ৩ হাজার ৪৪১ হেক্টর এলাকায় প্রাকৃতিক দুর্যোগের ফলে উদ্ভূত ক্ষতির প্রভাব কমিয়ে আনা এবং উন্নত পানি ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা। নিষ্কাশন ব্যবস্থার উন্নতি ও নদীর নাব্যতা ফিরিয়ে আনা এবং প্রকল্পের মাধ্যমে পোল্ডারিং ব্যবস্থাকে পুনরুজীবিত করে বিদ্যমান কৃষি ও মৎস্য উৎপাদন নির্বিঘ্ন করা। একই সাথে প্রায় ৫ হাজার মেট্রিক টন অতিরিক্ত ফসল উৎপাদনে সহায়তা করা।
বাপাউবো সূত্র জানায়, ১৫ নং পোল্ডারটি সাতক্ষীরা জেলার শ্যামনগর উপজেলার দ্বীপ খ্যাত গাবুরা ইউনিয়নে অবস্থিত। পোল্ডারটির পূর্বে কপোতাক্ষ নদ, উত্তর, দক্ষিণ ও পশ্চিমে খোলপেটুয়া নদী দ্বারা বেষ্টিত। এ অঞ্চলে লবণাক্ততার অনুপ্রবেশ রোধ, কৃষি জমি সম্প্রসারণ ও লবণাক্ততার কবল হতে প্রকল্প এলাকা রক্ষাকল্পে ১৯৭০ এর দশকে উপকূলীয় বাঁধ নির্মাণের মাধ্যমে পোল্ডারিং করা হয়। প্রতিনিয়ত জোয়ার ভাটা, বাতাসের সৃষ্ট ঢেউয়ে আঘাত এবং মৌসুমী নিম্ন চাপের কারণে পোল্ডারসমূহের অবকাঠামো ক্ষয়-ক্ষতি হচ্ছে। ঘূর্ণিঝড় আইলা, বুলবুল, ফনী এবং আম্পানের কারণে পোল্ডারটি মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং অর্ধশতাধিক স্থান ব্রিচ হয়ে যায় এবং অন্যান্য বাঁধগুলো দুর্বল হয়ে যায়। এই সমস্যা সমাধানের জন্য প্রকল্পটি নেওয়া হচ্ছে।