১৯৮৬ সালে সুইডেনের সাবেক প্রধানমন্ত্রী উলফ প্যালমেকে কে খুন করেছিল, ৩৪ বছর পর সেই রহস্য উদঘাটন করা হয়েছে। সুইডিশ কৌঁসুলিরা জানিয়েছেন, আততায়ীর নাম স্টিগ এংগস্ট্রম যে \”স্ক্যানডিয়া ম্যান\” নামেও পরিচিত ছিল। ২০০০ সালে সে আত্মহত্যা করে।
তবে এই ঘটনায় সাজা হয় অন্য দুজনের। তবে বিস্ময়কর হচ্ছে ওই খুনের ঘটনায় দোষ স্বীকার করেছিল ১৩০ জনের বেশি।
১৯৮৬ সালে বিতর্কিত এবং স্পষ্টবক্তা উলফ প্যালমে দ্বিতীয় মেয়াদে সুইডেনের প্রধানমন্ত্রী হন। কিন্তু তিনি যতটা সম্ভব সাধারণ মানুষের মতো থাকতে পছন্দ করতেন। প্রায়ই তিনি বাইরে বের হবার সময় পুলিশি নিরাপত্তা নিতে অপছন্দ করতেন। ঘটনার রাতেও তিনি কোনো পুলিশ বা রক্ষী নেননি। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে বাসায় ফিরে নিরাপত্তারক্ষীদের বিদায় দেন তিনি।
প্যালমে স্ত্রীকে নিয়ে বেরিয়ে পড়েন গণপরিবহনে সিনেমা হলের উদ্দেশে। পাতাল রেলে চড়ে পুরনো শহর এলাকা থেকে শহর কেন্দ্রে গিয়ে নামেন তারা। সিনেমা দেখে বের হবার পর সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও তার স্ত্রী ব্যস্ত রাজপথ ধরেন। ছেলে ও ছেলের বান্ধবী চলে যান অন্য পথে।
রাত তখন প্রায় সাড়ে ১১টা। দুজনে হেঁটে বাসায় ফিরছিলেন। ব্যস্ত এক রাস্তার মোড়ে একজন দীর্ঘদেহী মানুষ হঠাৎই পেছনে এসে খুবই কাছ থেকে দুবার গুলি চালায়। আততায়ীর একটা গুলি লাগে প্যালমের পিঠে। অন্য গুলি লাগে লিসবেটের গায়ে। আততায়ী ছুটে পালায়। পাশের এক রাস্তার সিঁড়ি বেয়ে ওঠে, তারপর মিলিয়ে যায়। ঘটনাস্থলেই মারা যান প্যালমে। সুইডেনের মানুষ ঘটনার আকস্মিকতায় স্তম্ভিত হয়ে যান।
সুইডেনের ব্যস্ততম রাস্তায় এই খুনের ঘটনা ঘটার পরও হত্যাকারীকে কখনোই খুঁজে পাওয়া যায়নি, যদিও জনা বারোর বেশি লোক লম্বা চেহারার এক লোককে গুলি করে ছুটে পালাতে দেখেছিল।
খুনের ঘটনায় হাজার হাজার মানুষকে জেরা করা হয়। এক ছিঁচকে অপরাধীকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়। পরে আবার সেই রায় নাকচ করে দেওয়া হয়। সন্দেহভাজন অপরাধীদের লাইন করে যখন হাজির করা হয়, তখন সাবেক প্রধানমন্ত্রীর স্ত্রী তাকে অপরাধী হিসেবে শনাক্ত করেছিলেন।
১৯৮৯ সালে তার যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়েছিল। পরে অবশ্য অল্পদিনের মধ্যেই এক আপিলে ওই রায় খারিজ করে দেওয়া হয়। তার কোনো উদ্দেশ্য প্রমাণ হয়নি। তার কাছে কোনো অস্ত্রও পাওয়া যায়নি। ওই ব্যক্তি ২০০৪ সালে মারা যায়।
তবে বিস্ময়কর এক তথ্য জানান, তদন্তকারী দলের প্রধান হান্স মেলান্ডার। তিনি জানান, ওই খুনের ঘটনায় দোষ স্বীকার করেছিল ১৩০ জনের বেশি।
বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনে মামলার প্রধান কৌঁসুলি ক্রিস্টার পিটারসন বলেছেন, ‘স্টিগ এংগস্ট্রম যেহেতু বেঁচে নেই, তাই তার বিরুদ্ধে আমরা অভিযোগ গঠন করতে পারব না। তাই এই তদন্তের এখানেই ইতি টানার সিদ্ধান্ত আমরা নিয়েছি।’
তিনি বলেছেন, এই খুনের তদন্তে প্রথমে স্টিগ এংগস্ট্রমকে সন্দেহ করা হয়নি। কিন্তু যখন তার নাম সন্দেহভাজনদের তালিকায় আসে, তখন তারা জানতে পারেন সে আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহারে দক্ষ, কারণ সে সেনাবাহিনীতে ছিল এবং একটি শুটিং ক্লাবের সদস্য ছিল।
শুধু তাই নয়, উলফ প্যালমের বামপন্থি নীতির বিরোধী ছিলেন এংগস্ট্রম এবং তার নিজের এলাকায় সাবেক প্রধানমন্ত্রীর সমালোচক এক গোষ্ঠীর সঙ্গে তার যোগাযোগ ছিল। এংগস্ট্রম স্ক্যানডিয়া নামে একটি বীমা কোম্পানিতে কাজ করতেন, যে কারণে পরে তাকে ‘স্ক্যানডিয়া ম্যান’ নামেও উল্লেখ করা হতো। ঘটনার দিন তিনি দেরি করে কাজ করছিলেন এবং তার অফিসের সদর দপ্তর ছিল ঘটনাস্থলের খুবই কাছে। প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে পুলিশ তাকে যখন জেরা করে, তখন মি. এংগস্ট্রম খুনের ঘটনা সম্পর্কে মিথ্যা তথ্য দিয়েছিলেন।
২০১৮ সালে উলফ প্যালমের স্ত্রী লিসবেট প্যালমে মারা যান। তিনি জেনে যেতে পারেননি তার স্বামীর প্রকৃত খুনি কে ছিল। তবে কয়েক দশক ধরে এই খুনের তদন্ত সুইডেনের পুলিশকে ব্যস্ত রেখেছিল।