করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবের ভয়াবহতার মধ্যেও অবিশ্বাস্য নজির দেখিয়ে যাচ্ছে দক্ষিণ কোরিয়া এটা কি সাহসিকতা না বোকামি এটা ভালো জানেন দক্ষিণ কোরিয়ার দেশ প্রধানরা। গোটা বিশ্ব যেখানে মহামারীতে রোগী আর মৃতের সংখ্যা গণনায় ব্যস্ত, সেখানে নির্বাচনী লড়াইয়ে নেমেছে দক্ষিণ কোরিয়া।
গত ডিসেম্বরের শেষ দিনে চীনের উহান থেকে ভাইরাসের বিস্তার শুরু হওয়ার পর শ্রীলংকা, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও ইথিওপিয়াসহ অন্তত আট দেশ তাদের নির্বাচন স্থগিত করেছে।
কিন্তু দক্ষিণ কোরিয়ায় পূর্বনির্ধারিত সময় অনুযায়ী বুধবার জাতীয় নির্বাচন চলছে। কোভিড-১৯ রোগের দরুন জনসমাগম এড়াতে আগাম ভোটের ব্যবস্থা করেছে দেশটি। গত শুক্রবার থেকে আগাম ভোট হয়েছিল। আর বুধবার সকাল ৬টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত চলবে ভোটগ্রহণ।
রাতে ভোট গণনার পর বৃহস্পতিবার সকালে চূড়ান্ত ফল ঘোষণা করা হবে। জাতীয় পরিষদে তিন শতাধিক আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হচ্ছে।
নির্বাচনে ৩৫ দল প্রার্থী দিয়েছে। তবে প্রতিযোগিতাটি হবে ক্ষমতাসীন মিনজু (গণতান্ত্রিক) পার্টি এবং প্রধান বিরোধী রক্ষণশীল ইউনাইটেড ফিউচার পার্টির মধ্যে।
ভোট দেয়ার শর্ত হিসেবে ভোটারদের অবশ্যই মাস্ক পরে আসতে হবে। কমপক্ষে ৩ ফুট দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। একটি দল তাদের তাপমাত্রা পরীক্ষা করবে। ভোটাররা তাদের হাত জীবাণুমুক্ত করবেন এবং প্লাস্টিকের গ্লোভস পরবেন।
তবেই তাদের ভোটদানের স্লিপ দেয়া হবে এবং তাদের ব্যালট দেয়ার জন্য বুথে যাওয়ার অনুমতি দেয়া হবে। প্রায় ১৪০০ ভোটকেন্দ্রকে জীবাণুমুক্ত করা হয়েছে।
তাপমাত্রায় পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে না পারলে ভোটারের প্রবেশাধিকার মিলবে না। তবে তাদের জন্য বিশেষ বুথে ভোট দেয়ার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। এ ছাড়া সিউল ও দায়েগু শহরে আলাদা কেন্দ্রে করোনায় আক্রান্ত তিন হাজারের বেশি রোগী ও ৯০০ স্বাস্থ্যকর্মীর ভোট দেয়ার ব্যবস্থা রয়েছে।
ইতিমধ্যে রেকর্ড ৫০ লাখের বেশি আগাম ভোট পড়েছে। ছোট ছোট জটলায় ভোটের প্রচার চালিয়েছেন প্রার্থীরা। মাস্ক পরেই দিয়েছেন ভাষণ।
বিশ্লেষকরা বলছেন, নতুন চাকরির সুযোগ তৈরি, বেতনভাতা এবং উত্তর কোরিয়ার নিউক্লিয়ার কর্মসূচি নির্বাচনে প্রভাব রাখার কথা ছিল। কিন্তু করোনা মোকাবেলায় দেশটির বর্তমান প্রেসিডেন্ট মুন জে ইনের নেয়া পদক্ষেপ বাকি সব কিছুকে আড়াল করে দিয়েছে।
রাজধানী সিউলের ইয়ুন্সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক ইয়াং সেয়ুং হাম বলছেন, জাতীয় দুর্যোগ বা সংকটের সময় সাধারণত ক্ষমতাসীন দল রক্ষণশীল আচরণ করে। কিন্তু করোনা মহামারীর গতি কমিয়ে আনতে পারায় সরকারি দলের পক্ষে চলে গেছে স্রোত।
দক্ষিণ কোরিয়ায় এখন দিনে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা ৫০ জনের কম। ফেব্রুয়ারির শেষের দিকে এটি ৯০০ ছাড়িয়ে গিয়েছিল। ব্যাপক হারে পরীক্ষা, নজরদারি, সামাজিক দূরত্ব রক্ষা ও বিদেশ থেকে আসা ব্যক্তিদের বাধ্যতামূলক কোয়ারেন্টিন নিশ্চিত করে এ সফলতা পেয়েছে কোরিয়া।
কোরিয়া রোগ নিয়ন্ত্রণ ও সুরক্ষা কেন্দ্রের (কেসিডিসি) তথ্যমতে, দক্ষিণ কোরিয়ায় এখন পর্যন্ত মোট করোনা আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১০ হাজার ৫৯১ জন। তাদের মধ্যে মারা গেছে ২২৫ জন। আর সুস্থ হয়ে হাসপাতাল ছেড়েছে ৭ হাজার ৬১৬ জন।
নির্বাচনে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতির মধ্য দিয়ে দ্বিতীয় দফায় করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়তে পারে বলে শঙ্কায় আছেন দেশটির লাখো নাগরিক। তবে কেন্দ্রে লম্বা সময় ধরে অপেক্ষা করতে হলেও ভোট চালিয়ে যাওয়ারও পক্ষে মত দিয়েছেন দেশটির অনেক নাগরিক।