রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলায় নদীভাঙনের কারণে দৌলতদিয়ার তিনটি ফেরিঘাট বন্ধ রাখা হয়েছে। ঘাট স্বল্পতার কারণে কর্তৃপক্ষ চারটি ফেরি বসিয়ে রেখেছে। ফলে ঘাটে প্রায় তিন কিলোমিটার লম্বা সারিতে যাত্রীবাহী বাস ও পণ্যবাহী গাড়ি আটকে রয়েছে।
৩ নম্বর ফেরিঘাট এলাকায় গতকাল শুক্রবার রাতে আরও প্রায় ২০ মিটার এলাকা নদীতে বিলীন হয়েছে। ফলে আজ শনিবার বিকেল পর্যন্ত বন্ধ থাকা ৩ নম্বর ঘাটটি চালু করা সম্ভব হয়নি। ভাঙন ঠেকাতে, ঘাট চালু করতে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) বালুভর্তি জিওব্যাগ ফেলা অব্যাহত রেখেছে। আজ সন্ধ্যা নাগাদ ঘাটটি চালু করার প্রাণপণ চালুর চেষ্টা চলছে।
এদিকে দৌলতদিয়ার ছয়টি ঘাটের মধ্যে ভাঙনের কবলে পড়ায় তিনটি ঘাট বন্ধ রয়েছে। এর আগে গত বৃহস্পতিবার দুই দিনের বৃষ্টি ও বাতাস থাকায় ৩ নম্বর ফেরিঘাট এলাকার প্রায় ৫০ মিটার অংশ নদীতে বিলীন হলে ঘাটটি বন্ধ হয়ে যায়। ভাঙনের কবলে পড়ায় ১ ও ২ নম্বর ফেরিঘাট আগ থেকেই বন্ধ রয়েছে। এখন ৪, ৫ ও ৬ নম্বর ঘাট চালু রয়েছে। ঘাট স্বল্পতার কারণে কর্তৃপক্ষ চারটি ফেরি বসিয়ে রেখেছেন। এতে গাড়ি পারাপার ব্যাহত হওয়ায় উভয় ঘাটে কয়েক শ গাড়ি আটকে আছে। আজ বিকেল পর্যন্ত দৌলতদিয়ায় ঢাকাগামী প্রায় তিন কিলোমিটার লম্বা লাইনে যাত্রীবাহী বাস ও পণ্যবাহী গাড়ি আটকে রয়েছে।
আজ দুপুরে দেখা যায়, বিআইডব্লিউটিএর অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী ফরহাদ উজ্জামান, নির্বাহী প্রকৌশলী নিজাম উদ্দীন পাঠান, বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশনের (বিআইডব্লিউটিসি) সহকারী মহাব্যবস্থাপক (মেরিন) আবদুস সোবহানসহ অন্য কর্মকর্তারা ঘাটের সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন। তাঁদের উপস্থিতিতে শ্রমিকেরা বালুভর্তি জিওব্যাগ ফেলছেন। ৩ নম্বর ফেরিঘাট থেকে ২ নম্বর ঘাটের আগ পর্যন্ত প্রায় ২০০ ফুট এলাকায় ভাঙন দেখা দেওয়ায় সেখানে বালুর বস্তা ফেলছেন। এ ছাড়া প্রায় তিন কিলোমিটার লম্বা লাইনে দীর্ঘক্ষণ গাড়ি আটকে থাকছে। দর্শনা থেকে আসা দর্শনা ডিলাক্স পরিবহনের চালক আনোয়ার হোসেন বলেন, সকাল ১০টায় ঘাটে এসে বেলা প্রায় ২টা বাজে, ফেরিতে ওঠার লাইনে রয়েছি। অধিকাংশ গাড়ির একই অবস্থা বলে জানান।
বিআইডব্লিউটিএর আরিচা কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী নিজাম উদ্দীন পাঠান বলেন, তিন দিন ধরে বৃষ্টির সঙ্গে বাতাস থাকায় পদ্মা তীরবর্তী এলাকা ভাঙছে। গত বৃহস্পতিবার সকাল থেকে ঘন বৃষ্টির সঙ্গে বাতাসে নদী উত্তাল হয়ে উঠলে নদীর পাড় ভাঙতে শুরু করে। ৩ নম্বর থেকে ২ নম্বর ঘাটের আগ পর্যন্ত প্রায় ২০০ ফুট লম্বা ও ৬০ ফুট প্রশস্ত করে ফেরিঘাটের সংযোগ সড়কসহ পন্টুন ধরে রাখার বেসমেন্ট দেবে যায়। ফলে পুরো ঘাটটি বন্ধ হয়ে যায়। গতকাল রাতের মধ্যে আরও প্রায় ২০ মিটার নদীতে বিলীন হয়। ঘাট চালু করতে জরুরি ভিত্তিতে গতাল সকাল থেকে বালুভর্তি জিওব্যাগ ফেলার কাজ শুরু করা হয়েছে। তবে ভাঙন এখনো পুরোপুরি বন্ধ হয়নি। আজ দুপুর পর্যন্ত দুই দিনে ৩ হাজার ২০০ বালুভর্তি বস্তা ফেলা হয়েছে। যতক্ষণ পর্যন্ত পানির তলদেশ থেকে জেগে না উঠবে ততক্ষণ পর্যন্ত বালুভর্তি বস্তা ফেলা হবে। এরপর পন্টুনটি বসানো হবে বলে তিনি জানান।
এদিকে বিআইডব্লিউটিসি দৌলতদিয়া কার্যালয়ের সহকারী ব্যবস্থাপক রুহুল আমিন বলেন, দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌপথে ছোট-বড় মিলে ১৭টি ফেরির মধ্যে ১৩টি চালু রয়েছে। ভাঙনের কবলে পড়ে তিনটি ঘাট বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ঘাট স্বল্পতা দেখা দিয়েছে। চালু থাকা তিনটি ঘাটের মধ্যে একটি ছোট ঘাট রয়েছে। ফলে সব ফেরি চালু রাখতে গেলে তিনটি ঘাট দিয়ে সামাল দেওয়া সম্ভব না। যে কারণে দুই দিন ধরে তিনটি বড় একটি ছোট ফেরি বসিয়ে রাখা হয়েছে। ঘাট স্বল্পতায় গাড়ি পারাপার ব্যাহত হওয়ায় উভয় ঘাটে গাড়ির লম্বা লাইন তৈরি হচ্ছে। ফেরিঘাট থেকে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কে ঢাকাগামী গাড়ির লম্বা লাইন তৈরি হচ্ছে।
আরিচা কার্যালয়ের সহকারী মহাব্যবস্থাপক (মেরিন) আবদুস সোবহান বলেন, ‘এ মুহূর্তে ঘাট স্বল্পতার কারণে সব ফেরি চালু রাখা সম্ভব হচ্ছে না। আশা করি শনিবার সন্ধ্যা নাগাদ ৩ নম্বর ঘাটটি চালু হলে ফেরির সংখ্যা বাড়ানো হবে। তিনটি ঘাট বন্ধ ও সব ফেরি চলাচল না করায় উভয় ঘাটে গাড়ি আটকে থাকছে।’