এফআর টাওয়ারে অগ্নিকাণ্ডে আটকে পড়া মানুষদের উদ্ধার করতে প্রাণপণ চেষ্টা চালাচ্ছে ফায়ার সার্ভিসের ২১টি ইউনিটের ১৩৩ জন কর্মী। আগুনের ভয়াবহতা যখন প্রতিকূলে তখন সেনাবাহিনী, নৌ-বাহিনী, বিমানবাহিনীর সদস্যরাও যোগ দেন উদ্ধারকাজে। সাহায্যে এগিয়ে আসে স্থানীয় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্ররা। মানুষকে বিপদের মুখে দেখে নিজের সবটুকু দিয়ে চেষ্টা করছে স্থানীয় অনেকেই।
ঠিক এই মূহুর্তে এগিয়ে এসেছিল ১৪ বছরে এক বালকও। ছোট মনে হয়তো তাড়না বোধ করছিল বিপদে পড়া মানুষের জন্য কিছু করার। রাজধানীর বনানীর এফআর টাওয়ারে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার পর থেকে একটি ছেলের ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রশংসা কুড়াচ্ছে। ছবিতে দেখা যায়, আগুন নেভানোর কাজে ব্যবহৃত একটি পাইপের ফাটা অংশ দুহাতে চেপে ধরে আছে এক শিশু। ছবিটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়ার পর ওই ছেলে এখন বীর বনে গেছে।
ছেলেটির নাম নাঈম ইসলাম। রাজধানীর কড়াইল বস্তিতে বাবা-মায়ের সঙ্গে থাকে সে। পড়ে ব্র্যাকের আনন্দ স্কুলের পঞ্চম শ্রেণিতে। নাঈমের বাবা একজন ডাব বিক্রেতা, আর মা কর্মজীবী।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নাঈমের একটি ছবি ভাইরাল হলো। ছবিতে দেখা যায় নাঈম এফআর টাওয়ারের আগুন নেভানোরত ফায়ার সার্ভিসের পানির পাইপের ফাটা অংশের ওপর পলিথিন পেঁচিয়ে তার ওপর সর্বশক্তি দিয়ে আটকে রেখেছে, যাতে ঠিকমতো পানি সরবরাহ হয় অগ্নিনির্বাপন মেশিনে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছবিটি আসার পর কিছু সময়ের মধ্যেই তা ছড়িয়ে পড়ে। মাত্র ১৪ বছর বয়সের বালকের এই প্রাণপ্রাণ চেষ্টাকে সাধবাদ জানিয়েছে সব পর্যায়ের মানুষ। কেউ কেউ তাকে দিয়েছেন বীরের খেতাব।
ফাটা পাইপ দিয়ে পানি বেরিয়ে যাওয়ার কারণে দমকল কর্মীরা ঠিকমতো পানি পাচ্ছেন না এটেই মাথায় এসেছিল নাঈমের। আর কোনো কোনো কিছু ভাবেনি সে। আলাপকালে নাঈম জানায়, যখন ফায়ার সার্ভিসসহ অন্যান্য সংস্থা ও সাধারণ মানুষ আগুন নেভাতে কাজ করছিল, তখন বারবার পানি শেষ হয়ে যাচ্ছিল। ফায়ার সার্ভিসের পানির পাইপ এক জায়গায় ফাটা ছিল। ফাটা অংশ দিয়ে অনেক পানি নষ্ট হয়ে যাচ্ছিল। তখন পাশ থেকে একটি পলিথিন নিয়ে পাইপের ফাটা অংশটি চেপে ধরে সে।
নাঈম বলে, আমি আর কোনো কিছু না ভেবেই এটা করেছি। আমি দেখতে ছিলাম পানি বের হচ্ছিল। আমি পাইপটারে পলিথিন দিয়ে চেপে ধরেছি, যাতে পানি বাইরে নষ্ট না হয়।
মা আর এক বোনোর সঙ্গে ঢাকার কড়াইল বস্তিতে থাকে নাঈম। বাবা থাকলেও তাদের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ নেই বলে জানান নাঈমের মা।
দারিদ্র্য যেখানে পিছু ছাড়ছে না, যেখানে সন্তানদের ভালো জায়গায় পড়াশোনা করানো স্বপ্ন বলে জানান নাঈমের মা। বলেন, যে টাকার কাম করি তা দিয়ে চলাও কষ্ট। পোলাপানগুলারে ভালো জাগায় পড়ামু ক্যামনে?
নাঈম কড়াইল বস্তির বড় নৌকাঘাট আরবার স্লাম আনন্দ স্কুলে পঞ্চম শ্রেণিতে পড়াশোনা করে। একই স্কুলে চতুর্থ শ্রেণীতে পড়ছে নাইমের ছোট বোন। নাঈমের মা নাজমা বেগম স্বপ্ন দেখেন তার ছেলেমেয়েরা তার মতো কষ্টের জীবন কাটাবে না। সমাজের আর সব সাধারণ মানুষের মতো ভালো স্কুলে-কলেজে পড়াশোনা করে সম্মানের জীবন কাটাবে।