অন্যকে ফাঁসাতে আত্মগোপন করেছিলেন জামালপুরের সরিষাবাড়ী পৌরসভার মেয়র মোহাম্মদ রুকুনুজ্জামান। এমন ধারণা করছেন জিজ্ঞাসাবাদকারী গোয়েন্দারা। তবে গোয়েন্দাদের জিজ্ঞাসাবাদে রুকুনুজ্জামান বলেছেন, তিনি অসুস্থ। সুস্থ হওবার পর তিনি বিস্তারিত জানাবেন। গতকাল রাজধানীর মিন্টো রোডে ডিবি কার্যালয়ে জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে ভর্তি করা হয় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। পরে সেখান থেকে তাকে স্থানান্তর করা হয়েছে গুলশানের ইউনাইটেড হাসপাতালে। হাসপাতালের কাস্টমার সার্ভিস কর্মী সোহেল জানান, রুকুনুজ্জামানকে সন্ধ্যা ৬টার দিকে ভর্তি করা হয়েছে।
রাজধানীর উত্তরা ১৩ নম্বর সেকশনের ১৪ নম্বর রোডের ৬০ নম্বর বাড়ির একটি ফ্ল্যাটে দ্বিতীয় স্ত্রী শাহানা ইয়াসমিন মৌসুমীকে নিয়ে থাকেন পৌর মেয়র রুকুনুজ্জামান রুকন। গত সোমবার সকালে উত্তরা ৭ নম্বর সেক্টরে পার্কে প্রাতঃভ্রমণে গিয়ে তিনি নিখোঁজ হন। এ ঘটনায় সোমবার রাতে তার বড় ভাই সাইফুল ইসলাম টুকুন উত্তরা পশ্চিম থানায় একটি জিডি করেন।
নিখোঁজের আগের দিন রবিবার রাত ৯টা ১৩ মিনিটে তার ফেসবুকে দেওয়া একটি স্ট্যাটাসে বলা হয়েছে, ‘নতুন প্রজন্মের কাছে আমার আহ্বান যে আমাকে হত্যা করা হলেও তোমাদের সিক্ত ভালোবাসা যেন অটুট থাকে এবং আমার উন্নয়নের ধারাবাহিকতা তোমরা ধরে রাখবা’। বুধবার দুপুরে শ্রীমঙ্গলের ৮ নং কালীঘাট ইউনিয়ন পরিষদের সামনে একটি মাইক্রোবাস থেকে কিছু লোক তাকে নামিয়ে দিয়ে পালিয়ে যায়। পরে রাতেই তাকে ঢাকায় ডিবি কার্যালয়ে হেফাজতে নেওয়া হয়।
মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের একজন কর্মকর্তা বলেন, মেয়র নিখোঁজের বিষয়টি পুরোপুরি রহস্যজনক। উদ্ধারের পর নিখোঁজ হওয়ার ব্যাপারে মুখ খোলেননি। বার বার বলছেন, তিনি অসুস্থ। সুস্থ হবার পরপরই বিস্তারিত জানাবেন। ওই কর্মকর্তা বলেন, রুকুনুজ্জামান নিখোঁজ হওয়ার পর আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর একাধিক সংস্থা তাকে উদ্ধারে তত্পরতা চালিয়েছে। তবে বিভিন্ন তথ্যে নিশ্চিত হওয়া যায় যে রুকুনুজ্জামান অপহরণের মধ্যে কোন একটা রহস্য লুকিয়ে আছে। ধারণা করা হচ্ছে একটি পক্ষকে ফাঁসাতে গিয়ে তিনি আত্মগোপনের নাটক সাজাবার চেষ্টা করেছিলেন।
ওই কর্মকর্তা আরো বলেন, বিষয়টি আঁচ করতে পেরে আমরা রুকুনুজ্জামানের পরিবারের উপর এক অর্থে চাপ সৃষ্টি করেছিলাম। যারই ফলশ্রুতিতে রুকুনুজ্জামান দ্রুত তার গোপন অবস্থান থেকে বেরিয়ে আসতে বাধ্য হয়েছেন বলে আমরা মনে করছি।
পুলিশের একটি সূত্র জানায়, মেয়র নিখোঁজের সঙ্গে তার দাম্পত্য কলহ ও আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের হয়ে অংশগ্রহণ করা অর্থাত্ রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব জড়িত থাকতে পারে। প্রথম স্ত্রী কামরুন নাহার হ্যাপীর কাছে তথ্য গোপন করে তিনি বড় ভাইয়ের শ্যালিকাকে বিয়ে করায় তাদের দাম্পত্য কলহ তুঙ্গে ওঠে।
এছাড়া চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সভাপতি মিশা সওদাগরের সঙ্গে তার চলচ্চিত্র ব্যবসায় পার্টনারশীপ রয়েছে। চলচ্চিত্র জগতে চলাফেরার কারণে কয়েকজন মডেলের সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এ থেকে দ্বিতীয় স্ত্রীর সঙ্গেও তার দাম্পত্য কলহের সৃষ্টি হয়। দুই সংসারে দাম্পত্য কলহের জের ধরে মেয়র ঢাকা থেকে সরিষাবাড়ীতে তার দাপ্তরিক কাজ শেষ করে আবার ঢাকায় ফিরে আসেন। সরিষাবাড়ীতে প্রথম স্ত্রীর বাড়িতে তিনি যান না। সূত্র- ইত্তেফাক।
বাংলাদেশ সময়: ১০১৫ ঘণ্টা, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৭
লেটেস্টবিডিনিউজ.কম/কেএসপি