আসন্ন উপজেলা নির্বাচনে সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করতে না পারলে তাকে দায়িত্ব ছেড়ে চলে যেতে বলেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদা।
নির্বাচনে সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে সিইসি বলেন, ‘যদি সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করতে না পারেন, তাহলে আপনার এই দায়িত্ব পালন করার অর্থ হয় না। আপনি অযোগ্য, অপদার্থ। আপনি বাদ দিয়ে চলে যান। আপনারা যদি সবাই বলেন দায়িত্ব পালন করতে পারবেন না, তাহলে সবাই এখান থেকে চলে যান।’
মঙ্গলবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ের ইটিআই ভবনে চতুর্থ ধাপে উপজেলা নির্বাচনের রিটার্নিং ও সহকারি রিটার্নিং কর্মকর্তাদের ব্রিফিং/প্রশিক্ষণ উদ্বোধনকালে এ কথা বলেন সিইসি।
নুরুল হুদা বলেন, ‘আপনি আপনার উপজেলার নির্বাচন বন্ধ করে দিতে পারেন, একজন প্রার্থীর প্রার্থিতা বাতিল করে দিতে পারেন। যতই প্রভাবশালী হোক না কেন, আচরণবিধি ভঙ্গ করলে প্রার্থীর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে পারেন। তাকে জরিমানা করতে পারেন। তাকে জেলেও দিতে পারেন।’
‘আপনি আর কী চান? একটা নির্বাচন পরিচালনা করার প্রত্যেকটা ক্ষমতা আপনার হাতে আছে। সেই ক্ষমতা যদি প্রয়োগ করতে না পারেন, তাহলে ব্যর্থতা আপনার।’
রিটার্নিং ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তাদের উদ্দেশে সিইসি বলেন, ‘গা-ছাড়া অবস্থায়, ঢিলাঢালা অবস্থায়, হলো কি হলো না, এই মনোভাব নিয়ে দয়া করে নির্বাচন পরিচালনা করবেন না। আপনাদের হাতে সম্পূর্ণ ক্ষমতা অর্পিত আছে। সেই ক্ষমতাবলে আপনারা অনেক কিছু করতে পারেন।’
নুরুল হুদা বলেন, ‘আমরা কি বলেছি কখনও, আপনারা নির্বাচন সুষ্ঠু করবেন না। কোনো একটা প্রার্থীকে জিতিয়ে দেবেন, কোনো একটা দলের দায়িত্ব নিতে হবে– এ কথা কেউ বলেছে? তাহলে কেন মাথা উঁচু করে দৃঢ়তার সঙ্গে নির্বাচন পরিচালনা করতে পারবেন না?’
‘সুতরাং আমার কথা হলো পরিষ্কার, স্পষ্ট। নির্বাচন কমিশন আপনাকে/আপনাদের, একেকটা ব্যক্তিকে একেকটা প্রতিষ্ঠান হিসেবে দেখতে চায়। আপনি যে উপজেলার দায়িত্ব নেবেন, সেই উপজেলায় আপনি একটা প্রতিষ্ঠান। আপনি একজন নির্বাচন কমিশন। আপনি একজন নিরপেক্ষ এবং স্বাধীন একজন ব্যক্তি। যার দায়বদ্ধতা কেবল সংবিধানের ওপর।’
নুরুল হুদা বলেন, ‘আপনি ব্যর্থ হলেন, আপনাকে শোকজ করা হলো, আপনি তার উত্তর দিলেন। তারপর তদন্ত কমিটি গঠন করা হলো। এই সমস্ত জিনিস, এই সমস্ত টালবাহানা নির্বাচন পরিচালনার জন্য মোটেই হাতিয়ার নয়। আমরা এগুলোর মধ্যে দেখতে চাই না। আমরা দেখতে চাই, প্রত্যেককেই একজন দুর্ধর্ষ ব্যক্তি হিসেবে। ভয়ঙ্কর ব্যক্তি হিসেবে দেখতে চাই। যেই হোক না কেন, আপনাকে দেখলে ভয় পাবে, আতঙ্কিত থাকবে।’
সিইসি বলেন, ‘এখন যদি বলেন, বাপরে-বাপ এ তো খুব প্রভাবশালী, ক্ষমতাশালী তাকে তো কিছু করা যাবে না। তাহলে দয়া করে নির্বাচনের দায়িত্ব থেকে চলে যান। নির্বাচনের সময় আচরণবিধি ভঙ্গ করলে একজনের রাজনৈতিক পরিচয় এই, দলীয় পরিচয় এই, সামাজিক পরিচয় এই, তাকে তো আমি কিছু করতে পারব না। এরকম যদি আপনার মনে, আপনার চরিত্রে, ব্যবহারের দিকে কোথাও কিছু থেকে থাকে, তাহলে যাওয়ার সময় গোপনে বলে যাবেন সচিব সাহেবকে, আমি কিন্তু এই দায়িত্ব পালন করতে পারব না। বাঘা বাঘা লোক রয়ে গেছে, তাদেরকে আমার পক্ষে সামাল দেয়া সম্ভব না।’
নির্বাচন কমিশন সচিব হেলালুদ্দীন আহমদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে নির্বাচন কমিশনার মো. রফিকুল ইসলাম, বেগম কবিতা খানম, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) শাহাদাত হোসেন চৌধুরীসহ উর্ধ্বতন কমর্কর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য, আগামী ১০ মার্চ প্রথম ধাপে ৮৭ উপজেলায় ভোট নেওয়া হবে। পাঁচ উপজেলা নির্বাচন হবে পঞ্চম ধাপ হবে ১৮ জুন।