আধুনিক বাংলা সাহিত্যের অন্যতম প্রধান কবি আল মাহমুদের নামাজে জানাজা সম্পন্ন হয়েছে।
প্রথম নামাজে জানাজাটি শনিবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) দুপুর সাড়ে ১২ টার দিকে জাতীয় প্রেস ক্লাবে অনুষ্ঠিত হয়। কবির দ্বিতীয় নামাজে জানাজা বাদ জোহর বায়তুল মোকাররমে অনুষ্ঠিত হবার কথা রয়েছে।
নামাজে জানাজায় অংশ নেয়া বক্তারা বলেন, কবি আল মাহমুদ ছিলেন প্রখ্যাত মুক্তিযোদ্ধা। কিন্তু দু:খের বিষয় তার মরা দেহ শহীদ মিনারে নেওয়ার অনুমতি দেয়া হয় নাই। এমনকি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েও নেয়ার অনুমতি দেয়া হয় নাই।
জানাজা শেষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি এমাজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘কবি আল মাহমুদ ছিলেন দেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ব্যাক্তি। দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষা করার জন্য যে মহান স্বাধীনতা যুদ্ধ হয়েছে তাতে গুরুত্ব অবদান রয়েছে তার। তিনি এই সমাজকে নিয়ে যে স্বপ্ন দেখেছিলেন তার সে স্বপ্ন পূরণ হোক এটাই আশা করি।’
তিনি বলেন, ‘বর্তমান সমাজে কবি আল মাহমুদকে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন ছিলো। কিন্তু আল্লাহতায়ালা তাকে নিয়ে গেলেন। মহান আল্লাহতায়ালা তাকে সর্ব উত্তম স্থান দান করুক সে দোয়া সবাই করি।’
কবি আল মাহমুদের ছেলে মীর মোহাম্মদ মনির বলেন, ‘বাবার ইচ্ছা ছিলো শুক্রবারে যেন তার মৃত্যু হয়। আল্লাহ উনার ইচ্ছা পূরণ করেছেন। অজান্তে কোন ভুল করে থাকলে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। আপনারা দোয়া করবেন যেনো বেহেশত নসিব হয়।’
জানাজা নামাজে সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব গাজী মাজহারুল আনোয়ার, সাংবাদিক নেতা শওকত মাহমুদ, কবি আবদুল হাই শিকদার, শহিদুল ইসলাম,বিএনপি\’র ভাইস চেয়ারম্যান আহমেদ আজম খান, সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুস সালাম আজাদ, জিনাফ সভাপতি লায়ন মিয়া মোঃ আনোয়ার,কে এম রকিবুল ইসলাম রিপন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য, ধানমণ্ডির ইবনে সিনা হাসপাতালে শুক্রবার রাত ১১টা ৫ মিনিটে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন আল মাহমুদ। ৮২ বছর বয়সী আল মাহমুদ বার্ধক্যজনিত নানা জটিলতায় ভুগছিলেন।
১৯৩৬ সালের ১১ জুলাই ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার মোড়াইল গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন আল মাহমুদ। তার প্রকৃত নাম মীর আবদুস শুকুর আল মাহমুদ। সাহিত্যে অবদানের জন্য ১৯৬৮ সালে বাংলা একাডেমি পুরস্কার পান তিনি।
পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর দমন-নিপীড়নের প্রেক্ষাপটে পঞ্চাশের দশকে এসে বাংলা কবিতার বাঁক বদল ঘটে। কবিতায় এ সময় রাজনীতি, আন্দোলন- সংগ্রামের পাশাপাশি বাঙালি জাতীয়তাবাদ, লোকায়ত জীবন, সাম্যবাদ ইত্যাদি প্রবলভাবে উঠে আসতে থাকে।
পঞ্চাশের এ ধারার কবিদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য আল মাহমুদ।লোকায়ত জীবন ও সাম্যবাদ তার কবিতায় প্রতিফলিত হয়।
তার উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থের মধ্যে সোনালী কাবিন ছাড়াও লোক লোকান্তর ও কালের কলস রয়েছে।
ডাহুকী, কবি ও কোলাহর, নিশিন্দা নারী উপন্যাস লিখেছেন আল মাহমুদ। তার গল্পগ্রন্থের মধ্যে রয়েছে পানকৌড়ির রক্ত, সৌরভের কাছে পরাজিত ও গন্ধবণিক।
বাংলা একাডেমি পুরস্কার ছাড়াও একুশে পদক ও জয়বাংলা সাহিত্য পুরস্কারসহ অনেক পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন তিনি।
আল মাহমুদ দীর্ঘ দিন সাংবাদিকতায় যুক্ত ছিলেন। দেশের শীর্ষস্থানীয় অনেকগুলো দৈনিক পত্রিকায় কাজ করেছেন তিনি।
পাকিস্তান আমলে দৈনিক ইত্তেফাকের মফস্বল বিভাগের প্রধানের দায়িত্ব পালন করেন আল মাহমুদ। স্বাধীনতার পর দৈনিক গণকণ্ঠ পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন তিনি।
বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমীর পরিচালক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন আল মাহমুদ।