মোটরসাইকেলের নিয়ন্ত্রণহীন ব্যবহারে রাজধানী ঢাকা যানজটে অচল, স্থবির, অবরুদ্ধ। ঢাকার সড়কে এ জন্য দুর্ঘটনাও বাড়ছে। এ অবস্থার বড় কারণ অ্যাপভিত্তিক যাত্রীসেবায় ব্যাপক হারে মোটরসাইকেলের ব্যবহার। এ অবস্থায় ঢাকা মহানগর পুলিশ ঢাকায় মোটরসাইকেল ব্যবহার নিয়ন্ত্রণে আনার লক্ষ্যে ঢাকার বাইরের কোনো জেলায় নিবন্ধিত মোটরসাইকেল রাজধানীতে উবার-পাঠাওসহ অন্যান্য রাইড শেয়ারিং অ্যাপে চলতে না দেওয়ার প্রস্তাব তৈরি করেছে।
এ নিয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশ বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ-বিআরটিএর সঙ্গে গত বুধবার বৈঠকও করেছে।
জানা গেছে, ঢাকায় কী পরিমাণ মোটরসাইকেল অ্যাপভিত্তিক পরিবহনসেবায় যুক্ত থাকবে তা নিরূপণ করা হবে। এ ছাড়া মোটরসাইকেলে ব্যবহারের জন্য হেলমেটের আদর্শ নমুনা নির্দিষ্ট করে দেওয়া হবে। কারণ যেনতেন ধরনের হেলমেট ব্যবহার করে চালকরা মামলা এড়াচ্ছে।
এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের যুগ্ম কমিশনার মফিজ উদ্দিন আহমেদ গতকাল সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘মোটরসাইকেল নিয়ন্ত্রণ করা দরকার। এ জন্য ঢাকা মেট্রো ছাড়া অন্য জেলা থেকে নিবন্ধিত মোটরসাইকেল ঢাকায় চলাচলের অনুমোদন না দেওয়ার একটি প্রস্তাব আমরা তৈরি করেছি। তা গত বুধবারের বৈঠকে আমরা উপস্থাপন করেছি। বৈঠকটি হয়েছে বিআরটিএর প্রধান কার্যালয়ে। সেখানে সংশ্লিষ্ট অংশীজনরা উপস্থিত ছিলেন। আমরা আশা করছি, দ্রুত সিদ্ধান্ত আসবে। কারণ এখন অবাধে মোটরসাইকেল নিবন্ধন দেওয়া হচ্ছে। শৃঙ্খলা নষ্ট ও অপরাধ বাড়ছে এসব যানের ব্যাপক ব্যবহারে।’
ঢাকা মহানগর পুলিশ বলছে, উবার-পাঠাওসহ রাইড শেয়ারিং অ্যাপের যাত্রীসেবার ফলে রাজধানীতে মোটরসাইকেল চলাচল বেড়ে গেছে। এসব মোটরসাইকেলের চালকরা ফুটপাত দিয়েও চলাচল করে। যেখানে-সেখানে দাঁড়িয়ে যাত্রী ওঠানামা করানো হচ্ছে। তাতে সড়কে বিশৃঙ্খলা আরো বেড়েছে।
বিআরটিএ সূত্রে জানা গেছে, ২০১৭ সাল পর্যন্ত ঢাকায় মোটরসাইকেল নিবন্ধিত হয়েছে পাঁচ লাখ ৮৫ হাজার ৪৯০টি। ঢাকায় এখন প্রতিদিন গড়ে ৪৭টি করে নতুন মোটরসাইকেল নামছে। অন্যদিকে বুয়েটের দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউট এআরআইয়ের হিসাবে, ২০১৭ সালে রাজধানীতে ৪৮টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় ৫৩ জন নিহত হন। গত বছর বা ২০১৮ সালে ঢাকার সড়কে মোটরসাইকেলে প্রাণহানি ২০১৭ সালের চেয়ে ৩০ শতাংশ বেশি হয়েছে।
পরিবহন বিশেষজ্ঞ ও বুয়েটের অধ্যাপক ড. সামসুল হক সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘গণপরিবহনের বিকল্প হিসেবে মোটরসাইকেল ব্যবহার বাড়ছে। এটা ভয়ানক ব্যাপার। মোটরসাইকেল ঝুঁকিপূর্ণ বাহন। তাতে দুর্ঘটনায় মানব শরীরের ক্ষতি ৩০ শতাংশ বেশি।’