স্বামীকে আত্মহত্যার প্ররোচনার অভিযোগে আটক তানজিলা হক মিতুকে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেছে পুলিশ। তরুণ চিকিৎসক মোস্তফা মোরশেদ আকাশের (৩৩) আত্মহত্যার পেছনে তার স্ত্রী মিতুর বন্ধুদের প্ররোচনা আছে কি না সে বিষয়টিও খতিয়ে দেখঅ হচ্ছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
আজ শুক্রবার দুপুরে আটক মিতুর বিষয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি)। নগরীর দামপাড়াস্থ সিএমপির কনফারেন্স রুমে মিতুকে আটকের বিষয়ে সাংবাদিকদের কাছে বিভিন্ন তথ্য তুলে ধরেন অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার (উত্তর) মো. মিজানুর রহমান।
সংবাদ সম্মেলনে মো. মিজানুর রহমান বলেন, ‘তরুণ চিকিৎসক মোস্তফা মোরশেদ আকাশের আত্মহত্যায় তার ফেসবুক আইডিতে স্ত্রীকে জড়িয়ে স্ট্যাটাস এবং আকাশের পরিবারের মৌখিক অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে মিতুকে আটক করা হয়েছে। নিহত আকাশের পরিবারের পক্ষ থেকে তানজিলা হক চৌধুরী মিতুর বিরুদ্ধে নগরীর চান্দগাঁও থানায় আত্মহত্যায় প্ররোচণার অভিযোগে মামলা দায়ের করা হচ্ছে। মামলা দায়ের হলে সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবে পুলিশ।’
পুলিশের এই কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘আকাশের আত্মহত্যায় মিতুর কোনো বন্ধুর প্ররোচনা আছে কি না তাও খতিয়ে দেখবে পুলিশ। যদি প্ররোচনার বিষয়ে কোনো সুস্পষ্ট প্রমাণ পাওয়া যায় তাহলে তাদের বিরুদ্ধেও আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
এর আগে, বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে চট্টগ্রাম মহানগরীর কোতোয়ালী থানার নন্দনকানন এলাকার একটি বাসা থেকে সিএমপির কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের একটি দল মিতুকে আটক করে।
সিটিটিসি ইউনিটের প্রধান উপপুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ জানান, আটকের পর মিতুকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। পরকীয়া এবং স্বামীর সঙ্গে দাম্পত্য কলহ নিয়ে কিছু বিষয় তিনি স্বীকার করেছেন। তবে অনেক বিষয় এড়িয়ে গিয়েছেন।
পুলিশ জানায়, আকাশের ব্যবহৃত মুঠোফোনটি পুলিশ জব্দ করেছে। আকাশ তার ফেসবুকে স্ত্রী তানজিলা হক চৌধুরী মিতুর বিরুদ্ধে পরকীয়ার অভিযোগ ও বিভিন্ন ছবি সম্বলিত যে স্ট্যাটাস দিয়েছিলেন সেটি ডিলিট করে দেওয়া হয়েছে।
এর আগে দাম্পত্য কলহের জেরে বৃহস্পতিবার ভোর ৫টার দিকে নগরীর চান্দগাঁও আবাসিক এলাকার নিজ বাসায় শরীরে ইনজেকশনের মাধ্যমে অতিরিক্তি ইনসুলিন পুশ করে মোস্তফা মোরশেদ আকাশ আত্মহত্যা করেন বলে অভিযোগ ওঠে।
আকাশ চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের তরুণ চিকিৎসক এবং জেলার চন্দনাইশ উপজেলার বরকল ইউনিয়নের বাংলাবাজার এলাকার মৃত আবদুর সবুরের ছেলে।
মৃত্যুর আগে ফেসবুকে আকাশের দেওয়া এক স্ট্যাটাসে জানা যায়, ভালবেসে ২০১৬ সালে তানজিলা হক চৌধুরী মিতুকে বিয়ে করেন আকাশ। বিয়ের পরে অন্য যুবকের সঙ্গে মিতুর সম্পর্ক থাকার বিষয়ে দুজনের সম্পর্কে টানাপোড়েনের সৃষ্টি হয়। স্ত্রীর প্রতি গভীর ভালোবাসার পরও দীর্ঘ প্রচেষ্টায় স্ত্রীকে পরকীয়া থেকে ফেরাতে ব্যর্থ হয়ে আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছেন বলে স্ট্যাটাসে উল্লেখ করেন আকাশ।
পুলিশের সংবাদ সম্মেলনে সিএমপির অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার (জনসংযোগ) মির্জা সায়েম মাহমুদ, সিনিয়র সহকারী কমিশনার (পাঁচলাইশ জোন) দেবদূত মজুমদার, চান্দগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল বাশার, পরিদর্শক (তদন্ত) জোবায়ের সৈয়দ উপস্থিত ছিলেন।