একাদশ সংসদ নির্বাচনের রেশ কাটতে না কাটতেই উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের দামামা শুরু হতে যাচ্ছে। এবার দেশের ৪৯২ উপজেলার মধ্যে ৪৮০ উপজেলা পরিষদে পাঁচ ধাপে নির্বাচন আয়োজনে প্রস্তুত নির্বাচন কমিশন (ইসি)। বিভিন্ন জটিলতার কারণে ১২ উপজেলা পরিষদে ভোট হচ্ছে না।
এদিকে সারা দেশের সদর জেলার উপজেলা পরিষদে প্রথমবারের মতো ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইসি। এ লক্ষ্যে উপজেলা পরিষদ বিধিমালায় পরিবর্তন আনছে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানটি। এ নির্বাচন প্রথমবারের মত লড়াই হবে দলীয় প্রতীকে। প্রথম ধাপের তফসিল ৩ অথবা ৪ ফেব্রুয়ারি ঘোষণা করে মার্চে ভোট করার পরিকল্পনা সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানটির।
ইসির নির্বাচন পরিচালনা শাখা জানায়, এ বছর ৪৮০ উপজেলা পরিষদে পাঁচ ধাপে ভোট হবে। এর মধ্যে ঢাকা অঞ্চলে ৩৪ উপজেলার মধ্যে ভোট হবে ৩৩টিতে। এ বিভাগের নারায়ণগঞ্জ জেলার সদর উপজেলা সীমানা সংক্রান্ত মামলার কারণে নির্বাচন হচ্ছে না। চট্টগ্রাম অঞ্চলে ৪৯ উপজেলার মধ্যে ৪৭টিতে ভোট হবে। চট্টগ্রামের কর্ণফুলী ও খাগড়াছড়ির গুইমারা উপজেলার মেয়াদ শেষ হবে ২০২২ সালে। এ কারণে এ দুই উপজেলা পরিষদে ভোট হবে না এ বছর। রংপুর অঞ্চলে ৫৮টির মধ্যে ৫৭ উপজেলায় ভোট গ্রহণ হবে। রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলা পরিষদের প্রথম সভা অনুষ্ঠিত হয়নি। এ কারণে এ বছর ভোট হচ্ছে না। ময়মনসিংহ ৬০টির মধ্যে ৫৯ উপজেলায় ভোট হবে। তারাকান্দা উপজেলার মেয়াদ শেষ হবে ২০২৩ সালে। এ কারণে উপজেলাটিতে ভোট হবে না।
রাজশাহী অঞ্চলে ৬৭ উপজেলার মধ্যে ৬৭টিতে এ বছর ভোট করবে ইসি। বরিশাল অঞ্চলে ৪২ উপজেলার মধ্যে ৪২টিতে ভোট হবে। খুলনা অঞ্চলে ৫৯ উপজেলার মধ্যে ৫৯টিতে ভোট হবে। ফরিদপুর অঞ্চলে ২৯ মধ্যে ২৯ উপজেলায় ভোট হবে। কুমিল্লা অঞ্চলে ৫৪টির মধ্যে ৫১টিতে ভোট হবে। নোয়াখালী সদর, কুমিল্লার দাউদকান্দি ও লালমাই উপজেলায় ভোট হবে না এ বছর। সিলেট অঞ্চলে ৪০টির মধ্যে ৩৬টিতে ভোট হবে। সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলা, ওসমানীনগর, সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর, হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলা পরিষদে এ বছর ভোট হবে না।
ইসির কর্মকর্তারা জানান, এবার উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রথমবারের মতো ইভিএম ব্যবহার হবে। এ লক্ষ্যে উপজেলা পরিষদ বিধিমালায় পরিবর্তন হবে। ফেব্রুয়ারির ৩ অথবা ৪ তারিখে তফসিল দিয়ে মার্চে পাঁচ ধাপে ভোট শুরু করবে ইসি।
ইসি সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ বলেছেন, উপজেলা নির্বাচন তো নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই করতে হবে। যেহেতু ফেব্রুয়ারি মাসে এসএসসি পরীক্ষা আর এপ্রিলে এইচএসসি পরীক্ষা। তাই আমরা মার্চ মাস ধার্য করেছি উপজেলা নির্বাচন করার জন্য। পাঁচ ধাপে আমরা ভোট গ্রহণ করব। আইন অনুযায়ী, কোনো উপজেলা পরিষদের মেয়াদপূর্তির আগের ছয় মাসের মধ্যে নির্বাচন করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে।
সচিব বলেন, ‘নির্বাচনের নির্বাচন সামগ্রী আগেই কেনা রয়েছে। নির্বাচনে ব্যবহারের জন্য ইভিএম মেশিনও যথেষ্ঠ পরিমাণে প্রস্তুত রয়েছে। তাই নির্বাচনের সিংহভাগ প্রস্তুতি সম্পন্ন বলা যায়। এখন শুধু ভোটের জন্য স্থানীয় সরকারের সম্মতি প্রয়োজন।’
তিনি বলেন, ‘দলীয় প্রতীকের নির্বাচন হলেও স্থানীয় সরকারের নির্বাচনে সব দলকে এখানে অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে এমন কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। আমরা সময়মতো নির্বাচন করব। এক কথায় যদি বলি, এখানে কোনো দল অংশ নিল, কে নিল না তার জন্য ইসির কোনো অপেক্ষা থাকবে না।’
ইসির যুগ্ম সচিব ফরহাদ হোসেন জানান, ‘এবার প্রথমবারের মতো দলীয় প্রতীকে চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস-চেয়ারম্যান পদে উপজেলা পরিষদ ভোট হবে। ভোটের তফসিল হওয়ার পর ৩৫ থেকে ৪০ দিন সময় রাখা হতে পারে ভোটের জন্য। পাঁচ ধাপে ভোট হলে প্রতিটি ধাপের জন্য আলাদা আলাদা তফসিল হবে।’
উল্লেখ, দেশে প্রথমবারের মতো উপজেলা পরিষদ নির্বাচন ১৯৮৫ সালে অনুষ্ঠিত হয়। ওই বছর ৪৬০ উপজেলায় নির্বাচন হয়। দ্বিতীয়বারের মতো উপজেলা পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ১৯৯০ সালে। ওই বছরও ৪৬০ উপজেলায় এ নির্বাচন হয়। তৃতীয়বারের মতো উপজেলা পরিষদ নির্বাচন ২০০৯ সালে অনুষ্ঠিত হয়। ওই বছর ৪৭৫ উপজেলায় নির্বাচন হয়। চতুর্থবারের মতো ২০১৪ সালে উপজেলা পরিষদ নির্বাচন হয়। ছয় ধাপে ৪৮৭টিতে নির্বাচন হয়।