সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও বর্তমান শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনির একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। যেখানে দেখা যাচ্ছে, তিনি ঝাড়ু হাতে মেঝে পরিস্কার করছেন।
দিনভর আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু ছিল ছবিটি। দীপু মনির অসংখ্য ভক্ত-সমর্থক ছবিটি শেয়ার করছেন, ভাসাচ্ছেন প্রশংসার জোয়ারে।
না বুঝেই কেউ কেউ বলেছেন – মন্ত্রী হিসেবে শপথ নেওয়ার পরদিন প্রথম কার্সদিবসে অফিসে নিজেই দপ্তর পরিষ্কার করলেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নতুন দায়িত্ব নেওয়া মন্ত্রী ডা. দীপু মনি।
সোহেল রানা নামের এক ব্যক্তি ছবিটি শেয়ার করে লিখেছেন,
‘এভাবেই চাঁদপুর ও হাইমচর এলাকার মাদক বাণিজ্য, টেন্ডারবাজি, দখলবাজি, সন্ত্রাস- নৈরাজ্য ও নানা ধরণের দুর্নীতি এবং অনিয়মের আবর্জনা ঝাড়ু দিয়ে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখবেন চাঁদপুর -৩ আসনের সংসদ সদস্য ও শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মণি। জয় বাংলা।’
তবে এর বিপরীত চিত্রও দেখা গেছে। অনেকের টাইমলাইন ও গ্রুপে পোস্ট করা ছবিটিতে পড়েছে অসংখ্য নেতিবাচক মন্তব্য।
কেউ কেউ এ ধরনের কর্মকাণ্ডকে সাজানো বলে বিদ্রুপও করেছেন।
কেউ বলেছেন- একজন শিক্ষামন্ত্রীকে ঝাড়ু কেন দিতে হবে অফিসে? তিনিতো পরিস্কার করবেন শিক্ষা বিভাগ। দপ্তরের ফ্লোর নয়।
ছবিটি নিয়ে নানা মুখরোচক স্যাটায়ার পোস্টও করে ফেলেছেন অতিউৎসাহী সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারকারী। অথচ পুরো বিষয়টিই ছিল নিছক গুজব।
বিভিন্ন ভুঁইফোড় অনলাইন ছিল এ গুজবের ইন্ধনে। ঘটনার যাচাই বাছাই না করে সঙ্গে যোগ দিয়েছিল কয়েকটি উল্লেখযোগ্য অনলাইন সংবাদমাধ্যমও।
এসব গণমাধ্যমে ড. দীপু মনির ঝাড়ু দেয়ার ছবিটি প্রসঙ্গে লিখেছে – মঙ্গলবার (৮ জানুয়ারি) মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনির ১ম কর্ম দিবসে ঝাড়ু দিয়ে তার নিজ অফিসকক্ষ পরিষ্কার করছেন।
অথচ বিশ্বস্ত সূত্রের খবর, ছবিটি একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগের তোলা। আর দপ্তরে নয় তার চাঁদপুরস্থ নিজ ফ্ল্যাটকে পরিচ্ছন্ন করার সময়ে ছবিটি তোলা হয়েছি বলে জানা গেছে।
একজন সংসদ সদস্য, মন্ত্রী বা রাজনীতিবিদ নয়, ছবিতে দেখা গেছে আবহমানকাল ধরে পরিবারের দায়িত্ব পালন করা বাঙালি নারীর চিত্র।
জানা গেছে ছবিটি গত বছরের আগস্ট মাসের। এছাড়াও আজ প্রথম কর্ম দিবসে শিক্ষামন্ত্রী ড. দীপু মনির অফিসে পরে আসা পোষাকের সঙ্গে ভাইরাল হয়ে পড়া ছবির পোশাকের মিল নেই।
আর ঐ ছবিতে দেখা গেছে, তিনি খালি পায়ে নিজের বাসা পরিষ্কার করছেন।
তবে সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল ড. দীপু মনির এমন পারিবারিক ছবি নিয়ে অসত্য তথ্য ছড়ানোয় নিন্দা জানিয়েছেন সচেতন নেটিজেনরা।
একটি সরকারি স্কুলের ইংরেজীর শিক্ষক প্রশ্ন তুলেছেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এমন অপপ্রচার চললে কোথায় যাবে দেশ?
প্রসঙ্গত ডা. দিপু মনি ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগের জয়লাভের পর বাংলাদেশে প্রথম মহিলা পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে তিনি নিয়োগ পান। ২০১৩ সাল পর্যন্ত তিনি এই দায়িত্ব পালন করেন।
দশম জাতীয় সংসদে ডা. দীপু মনি চাঁদপুর-৩ (চাঁদপুর- হাইমচর) এর প্রতিনিধিত্ব করেছেন।
সামাজিক উন্নয়ন এবং প্রশাসনিক ক্ষেত্রে তার অনন্য অবদানের জন্য তিনি মাদার তেরেসা আন্তর্জাতিক পুরষ্কারে ভূষিত হন।
২০১৬ সালে অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের ২০তম কাউন্সিলে তিনি পুনরায় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হিসেবে নির্বাচিত হন।
সদ্য অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও একই আসনে বিপুল ভোটে জয়লাভ করে তিনি বাংলাদেশের প্রথম নারী শিক্ষামন্ত্রী হওয়ার গৌরব অর্জন করেছেন।