ভারতের সর্বোচ্চ আদালত মঙ্গলবার এক রায়ে মুসলমানদের তিন তালাক প্রথাকে অসাংবিধানিক বলে ঘোষণা করেছে।পর পর তিনবার তালাক উচ্চারণ করে অথবা চিঠি লিখে, সামাজিক মাধ্যম বা ফোনে তিনবার তালাক উচ্চারণ করে বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটিয়ে দেওয়া হয়, তার বিরুদ্ধে ৫জন মুসলিম নারী সুপ্রিম কোর্টের কাছে আবেদন করেছিলেন।তারই প্রেক্ষিতে এক সাংবিধানিক বেঞ্চ এই রায় দিয়েছে। এই রায় নিয়ে ব্যাপক আলোচনা চলছে ভারতের মুসলমান প্রধান এলাকাগুলোতেও।কিন্তু বাংলাদেশ বা পাকিস্তানের মত মুসলমান-প্রধান দেশে তিন তালাক নিষিদ্ধ হয়েছে দীর্ঘদিন।
মানবাধিকারকর্মী সুলতানা কামাল বলছেন, পাকিস্তান আমলে নারী আন্দোলন কর্মীরা তিন তালাক বন্ধের জন্য চাপ ছিল। তখন আইয়ুব খান ক্ষমতায় ছিল।
নারী অধিকার কর্মীরা তখন হুমকি দিয়েছিল, তিন তালাকের বিষয়ে মুসলিম পারিবারিক আইনে যদি পরিবর্তন না আনা হয় তাহলে তারা আইয়ুব খান বিরোধী আন্দোলন গড়ে তুলবে। ফলে ১৯৬১ সালে মুসলিম পারিবারিক আইনে সংস্কার সাধন করেছিল আইয়ুব খান সরকার। তখন বলা হয়েছিল, মুখে-মুখে তিন তালাকের কোন আইনগত বৈধতা থাকবে না।
সুলতানা কামাল বলেন, \”মুসলিম বৈবাহিক আইনে \’তালাকে আহসান\’ এবং \’তালাকে ইহসান\’ বলে দুটো পদ্ধতি আছে। সে দুটো মিলিয়ে \’তালাকে তৌফিজ\’ পদ্ধতি সবার জন্য বৈধ করে দেয়া হলো। এ পদ্ধতির বলে স্বামী বা স্ত্রী যে কেউ তাদের বিবাহ বিচ্ছেদের ইচ্ছা প্রকাশ করতে পারেন। কিন্তু তিন মাসের মধ্যে তারা যদি মত পরিবর্তন করে ফেলে তাহলে সে তালাক কার্যকরী হবে না। তিন মাসের মধ্যে যদি তারা মত না বদলায় তাহলে তিনমাস পরে সে তালাক কার্যকরী হবে।\”
আইয়ুব খান সরকার তালাকের ক্ষেত্রে যে সংস্কার এনেছিল সেটি এখনো বাংলাদেশে চালু আছে।তিনি বলেন বাংলাদেশে আদালতের মাধ্যমে এবং পারস্পরিক সম্মতির ভিত্তিতে বিবাহ বিচ্ছেদ সম্ভব।বাংলাদেশে কেউ যদি বিচ্ছেদের ইচ্ছা পোষণ করে তাহলে সেটি একটি সালিশি বোর্ডের কাছে চলে যাবে। এ সালিশি বোর্ড তিন সদস্য বিশিষ্ট হয়। সেখানে একজন জনপ্রতিনিধি এবং স্ত্রী ও স্বামীর পক্ষ থেকে একজন করে প্রতিনিধি থাকে।
\”যারা তালাকের জন্য ইচ্ছা পোষণ করেন, তারা যদি মনে করে তাহলে সালিশের মাধ্যমে একটি সমাধান নিতে পারে। যদি সেটা না হয়, তাহলে তিনমাস পরে সেটা স্বয়ংক্রিয়ভাবে কার্যকর হয়ে যাবে,\” বলছিলেন সুলতানা কামাল।বাংলাদেশে কেউ যদি তিন তালাকের বিরুদ্ধে আইনগত সুরক্ষা চায় তাহলে তাকে সেটি দেয়া হয়।কারণ তিন তালাক উচ্চারণের মাধ্যমে বিবাহ বিচ্ছেদ বাংলাদেশে বৈধ নয়।
কিন্তু \’তিন তালাক\’ উচ্চারণের মাধ্যমে কেউ বিবাহ বিচ্ছেদ করতে চাইলে তাকে শাস্তি দেবার বিধান নেই।তবে সে তালাক আইনগত-ভাবে কার্যকরী হবে না। তখন স্ত্রীকে তার মর্যাদা দিতে হবে এবং তাকে ভরণ-পোষণ দিতে হবে। সূত্র- বিবিসি বাংলা
বাংলাদেশ সময়: ১১১৫ ঘণ্টা, ২৩ আগস্ট ২০১৭,
লেটেস্টবিডিনিউজ.কম/এস