ভারতের অন্যতম বাংলা ভাষার জনপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল ‘এবেলা’। পোর্টাল হিসেবে যতখানি তার জনপ্রিয়তা, তার চেয়ে গসিপ মিডিয়া বা চটকদার সংবাদ পরিবেশক হিসেবে অধিক নামডাক রয়েছে মিডিয়াটির। এবেলায় যারা নিয়মিত ঢু মারেন বা খেয়াল করেন তারা নিশ্চয় জানেন, মানহানিকর বক্তব্য, রুচিহীন সংবাদ প্রকাশের ক্ষেত্রে সমালোচিত মাধ্যম হিসেবে এই অনলাইন পোর্টালটির পরিচিতি কতখানি।
তবে সম্প্রতি এই মিডিয়াটি বাংলাদেশি নিউজ, স্পোর্টস বা বিনোদন বিষয়ক খবর প্রকাশের ক্ষেত্রে জাতিগত বিদ্বেষ ভাবাপন্ন হাউস পলিসি অবলম্বন করছে। মানহানিকর তথ্য, চটকদার হেডলাইন আর স্ক্যাণ্ডাল ছড়াতে বেশি ব্যস্ত মিডিয়াটি।
অবশ্য এই বিদ্বেষ আর জাতিগত বৈষম্যের যে উস্কানির সংস্কৃতি চালু হয়েছে, সেটাও খুব বেশিদিন হয়নি। মূলত এটা শুরু হয়েছে খেলার মাঠ থেকে। গেল ক্রিকেট বিশ্বকাপে বাংলাদেশের অবিষ্মরণীয় পারফরম্যান্স, ভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশের সিরিজ জয় এবং পরবর্তীতে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের ভাল অবস্থানটাকে মেনে নিতে পারেনি অধিক সংখ্যক কট্টর ভারতীয় সমর্থক।
প্রথমে তা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এবং পরে তার ভারতীয় গণমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লো। এই বিদ্বেষ এবং উস্কানি দিনকে দিন বাড়তে থাকলো এবেলার মতো পত্রিকার হাত ধরে। সাকিব, মুশফিক থেকে শুরু করে জাতীয় ক্রিকেট দলের একেকজন স্বনামধন্য প্লেয়ারকে নিয়ে একেরপর এক মানহানিকর তথ্যবহুল সংবাদ পরিবেশন করেছে এবেলা। প্রথমত তাতে কট্টর ভারতীয় ক্রিকেট সমর্থকরা এবেলার পাঠকে পরিণত হয়েছে, তেমনি বাংলাদেশিরা পাঠকরা সেখানে ভার্চুয়াল ঝগড়ায় লিপ্ত হচ্ছে।
বেশকিছু সংবাদ শিরোনাম দেখলে বিষয়টি স্পষ্ট হবে। এবেলার শিরোনাম হয়েছে এমন-‘কোহলিকে আবারও চরম অসম্মান, এবার সব মাত্রা ছাড়াল বাংলাদেশিরা’, ‘বিশ্বের একনম্বর দলকে ‘পরামর্শ’ দিয়ে হাসির খোরাক সাকিব, আপনিও হাসবেন’, ‘অস্ট্রেলিয়াকে হারাতে ঘৃণ্য চক্রান্ত করেছিল বাংলাদেশ, ফাঁস হয়ে গেল এবার’, ‘সচিনকে প্রবল অসম্মান বাংলাদেশিদের! সাকিবদের সেলিব্রেশনে হাসছে গোটা বিশ্ব’, ‘বিস্ফোরক মন্তব্য, ভারতকে চরম অসম্মান বাংলাদেশের সাকিব আল হাসানের।’
এবেলার মতো একটি জনপ্রিয় অনলাইন সংবাদ মাধ্যমের এমন উস্কানিমূলক খবরে দিনের পর দিন দু’দেশের বৈষম্যমূলক আচরণ, কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য বাড়ছে এবং তাতে করে তরুণ সমাজে ঢুকে পড়েছে জাতিগত বিদ্বেষ। কথা হলো, এবেলার এমন কর্মকাণ্ডে যে পরিস্থিতির সৃষ্টি হচ্ছে, আগামীতে তা কোথায় গিয়ে ঠেকবে!
বাংলাদেশ এবং ভারত প্রতিবেশী রাষ্ট্র। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে ভারতীয় বাঙালি সম্প্রদায় ও ভারত সরকারের ভূমিকা ছিল অগ্রগণ্য। দুদেশের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক মিল রয়েছে ঢের এবং প্রতিবেশী এ দুই দেশ স্ব-স্ব অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও দ্বিপাক্ষিক সমঝোতায় একসঙ্গে কাজ করছে। কিন্তু একটি মিডিয়া যখন দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে এড়িয়ে দুদেশের মধ্যে সম্পর্ক ভাঙনে উদ্দেশ্য প্রণোদিত বিদ্বেষ আর উস্কানি ছড়াবে, তখন সে দায় নিশ্চয় ঐ গণমাধ্যমকেই নিতে হবে, এড়ানোর কোন সুযোগ থাকছে না।
বাংলাদেশ সময় : ১৬১৫ ঘণ্টা, ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৭,
লেটেস্টবিডিনিউজ.কম/ডিএ