রোহিঙ্গা ইস্যুতে ট্রাম্পের সহায়তা আশা করছেন না প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জানিয়েছেন, মিয়ানমার থেকে পালিয়ে তার দেশে আসা রোহিঙ্গা শরণার্থী নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে তিনি কথা বলেছেন। কিন্তু, শেখ হাসিনা ট্রাম্পের কাছ থেকে এই ইস্যুতে কোনো সহায়তা প্রত্যাশা করছেন না এবং রোহিঙ্গা শরণার্থী নিয়ে ট্রাম্প কি ভাবছেন, তাও তার কাছে স্পষ্ট নয়।

নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সদর দপ্তরে স্থানীয় সময় সোমবার ‘জাতিসংঘের সংস্কার: ব্যবস্থাপনা, নিরাপত্তা ও উন্নয়ন’ শিরোনামে উচ্চপর্যায়ের সভা করেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। এতে অন্যান্য দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের পক্ষে যোগ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

ওই সভা শেষেই মার্কিন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর কয়েক মিনিট কথা হয়েছে বলে তিনি জানিয়েছেন।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘ট্রাম্প আমাকে বাংলাদেশ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলেন। আমি তাকে বললাম, খুব ভালো চলছে। কিন্তু, এখন মিয়ানমার থেকে আসা শরণার্থী নিয়েই একমাত্র সমস্যায় রয়েছি।’

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন।

তবে তিনি এসব রোহিঙ্গা শরণার্থীর বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

রাখাইন রাজ্যে গত ২৫ আগস্ট অন্তত ৩০টি পুলিশ চৌকি ও একটি সেনা ক্যাম্পে রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি বা আরসা’র যোদ্ধারা প্রবেশের চেষ্টা করে। এরপর থেকে মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনী রাখাইনে ‘সন্ত্রাসবিরোধী’ অভিযানের নামে নির্বিচারে রোহিঙ্গাদের হত্যা, ধর্ষণ ও ঘর জ্বালিয়ে দিচ্ছে।

আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম ইতোমধ্যে পাঁচ হাজারের অধিক রোহিঙ্গাকে হত্যা করার খবর দিয়েছে। যদিও মিয়ানমার সরকার বলেছে, তাদের অভিযানে ৪০০ রোহিঙ্গা নিহত হয়েছে। আর নির্যাতনের মুখে প্রায় ৪ লাখ ১০ হাজার রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে।

জাতিসংঘ রোহিঙ্গাদের ওপর ‘জাতিগত গণহত্যা’ চালানো হচ্ছে উল্লেখ করে রাখাইনের সহিংসতা বন্ধের আহ্বান জানিয়েছে। কিন্তু, মিয়ানমার সরকার এসব নাকচ করে রাখাইনের মুসলিম বিতাড়নের অভিযান অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়েছে।

জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে দেয়া ভাষণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রোহিঙ্গা ইস্যুটি তুলে ধরবেন। শরণার্থী বিষয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অবস্থান সবার কাছে স্পষ্ট। সুতরাং মুসলিম রোহিঙ্গা শরণার্থীর বিষয়ে তার কাছে সাহায্য চাওয়াকে দুর্বল চিত্ত হিসেবেই দেখছেন শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, ‘ইতোমধ্যে আমেরিকা ঘোষণা দিয়েছে, তারা কোনো শরণার্থী নেবে না। এরপরও আমি দেশটির কাছ থেকে কী আশা করতে পারি, বিশেষ করে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কাছে? তিনি ইতোমধ্যে তার অবস্থান প্রকাশ করেছেন। সুতরাং আমি কিভাবে তাকে রোহিঙ্গা সঙ্কট সমাধানে সাহায্যের কথা বলি?’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশ সম্পদশালী দেশ না হওয়া সত্ত্বেও কিন্তু, ১৬ কোটি মানুষকে খাওয়াচ্ছে। এর সঙ্গে আরও ৫ থেকে ৭ লাখ মানুষ যোগ হলে তাদেরও খাওয়াতে হবে।’

হোয়াইট হাউজের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এবং বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর মধ্যকার আলাপের বিষয়ে অবগত নন বলে জানিয়েছেন। তবে তিনি বলেছেন, রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে ট্রাম্প খুবই আগ্রহী। সুযোগ পেলে তিনি নিজেকে এই ইস্যুর সঙ্গে জড়াতে চান।
কিন্তু, এ ঘটনাও তো খুব বেশিদিন আগের নয়। চলতি বছরের জানুয়ারিতে প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেয়ার পরপরই ছয়টি মুসলিম দেশের মানুষের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেন ট্রাম্প।

গত শুক্রবারও এক টুইটে তিনি নিজের ওই অবস্থানের পক্ষেই সাফাই গেয়েছেন। ট্রাম্প উল্লেখ করেন, ওইসব দেশের মানুষদের যুক্তরাষ্ট্র ভ্রমণের নিষেধাজ্ঞা আরও দীর্ঘ হবে। আর তার এই রাজনৈতিক সিদ্ধান্তটি সঠিক।

সাম্প্রতিক সংঘাতের পরও মিয়ানমারের রাখাইনে কয়েক লাখ রোহিঙ্গা অবস্থান করছেন। তাদের ওপর ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা ছাড়াও বৌদ্ধ সংখ্যাগরিষ্ঠ রাষ্ট্রটি নানা রকম নিপীড়ন চালাচ্ছে। রোহিঙ্গাদের নাগরিক হিসেবে স্বীকার করে না মিয়ানমার। তাদের দাবি, এসব লোকেরা বাঙালি এবং বাংলাদেশ থেকে তাদের দেশে অনুপ্রবেশ করেছে।

এমন প্রেক্ষাপটে শেখ হাসিনা চান, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় রোহিঙ্গাদের ফেরত নিতে মিয়ানরমারের ওপর আরও চাপ তৈরি করুক।
তিনি বলেন, ‘মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সু চি একমত হবেন, পালিয়ে আসা এসব মানুষ তাদের এবং মিয়ানমারের নাগরিক। তারা তাদের ফেরত নিবেন। কারণ পালিয়ে আসারা খুবই কষ্ট ভোগ করছে।’

অবশ্য রোহিঙ্গা সংঘাত থামাতে ব্যর্থ হওয়ায় অং সান সু চিও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কড়া সমালোচনার মুখোমুখি হয়েছেন।
গতকাল সোমবার মিয়ানমারের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা থাং তান রয়টার্সকে বলেন, অবশ্যই মিয়ানমার যারা পালিয়ে গেছেন, তাদের ফেরত নেবেন। কিন্তু, তার আগে একটি প্রক্রিয়া প্রয়োজন, যেটি আলোচনা করা হচ্ছে।

জাতিসংঘে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত নিক্কি হ্যালি মিয়ানমার সরকারের প্রতি রাখাইনে সেনা অভিযান বন্ধ এবং মানবিক ত্রাণ সহায়তার অনুমতি দেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।

একই সঙ্গে তিনি রাখাইনে সেইফ জোন (নিরাপদ অঞ্চল) তৈরি করে সেখানে ঘরবাড়ি ছেড়ে পালানো লোকদের ফেরত নিতে বলেছেন।

বাংলাদেশ সময়: ১১২৭ ঘণ্টা, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৭
লেটেস্টবিডিনিউজ.কম/এসএফ

Scroll to Top