কেন্দ্রীয় পাবলিক লাইব্রেরির জন্য ১১ তলা বিশিষ্ট নতুন একটি আধুনিক ভবন নির্মাণ করা হবে বলে জানিয়েছেন গণগ্রন্থাগার অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আশীষ কুমার সরকার। এজন্য শাহবাগে অবস্থিত পাবলিক লাইব্রেরির বর্তমান ভবনটি (গণগ্রন্থাগার কেন্দ্র) ভেঙ্গে ফেলা হবে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে নতুন ভবন নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে তিনি রাষ্ট্রীয় সংবাদ মাধ্যম বাসসকে জানিয়েছেন।
আধুনিক ও বিশ্বমানের গণগ্রন্থাগার গড়ে তোলার স্বার্থে আগামী বছরের জুন-জুলাই মাসের দিকে ঐতিহ্যবাহী এ পাবলিক লাইব্রেরির ভবনটি ভেঙ্গে ফেলা হবে।
আশীষ কুমার সরকার বলেন, একটি প্রকল্পের আওতায় ‘লাইব্রেরি কমপ্লেক্স’ শিরোনামে ১১ তলা বিশিষ্ট এ ভবন নির্মাণের প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গেছে। এ ভবন নির্মাণে গণগ্রন্থাগার অধিদপ্তরের সাথে জাতীয় জাদুঘরও সম্পৃক্ত রয়েছে। গণগ্রন্থাগার ও জাতীয় জাদুঘরের সীমানা প্রাচীর ভেঙ্গে দু’পাশে আসা-যাওয়ার জন্য গেইট নির্মাণ করা হবে।
তিনি বলেন, প্রতিযোগিতার মাধ্যমে ইতিমধ্যে একটি ডিজাইন বাছাই করা হয়েছে। তবে সেই ডিজাইনের উপর কিছু পরিবর্তন ও পরিমার্জনের কাজ এখন চলছে। এ কাজ শেষ হলে ডিজাইনটি আবার প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠানো হবে। প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে অনুমোদন পাওয়া গেলেই শুরু করা হবে নতুন ভবনের মূল কাজ।
ভবনটির নির্মাণ কাজ শেষ হলে জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্র এ ভবনে চলে আসবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, নতুন ভবনে মহিলাদের জন্য ডে-কেয়ার সেন্টারসহ আধুনিক সুযোগ-সুবিধা থাকবে। এছাড়া জিম, প্রতিবন্ধীদের জন্য সুযোগ-সুবিধা, সিনিয়র সিটিজেনদের জন সুবিধাসহ একাধিক অডিটরিয়াম থাকবে। একটি অত্যাধুনিক পাঠাগার বলতে যা বোঝায়, যে সকল সুযোগ-সুবিধা থাকা দরকার, তার সবই থাকবে প্রকল্পাধীন এ লাইব্রেরিতে।
তিনি বলেন, বর্তমান পাঠাগারে নানান সমস্যা রয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম আসন সঙ্কট। দেখা যায় দিনের অন্য সময়ের চেয়ে সকালে পাঠাগারে প্রবেশ করার জন্য পাঠপিপাসুদের লম্বা লাইন পড়ে। বিশেষ করে পরীক্ষার আগে সে ভিড় বেড়ে যায় আরো কয়েকগুণ। বহুতল ভবন নির্মাণ হলে এ সঙ্কট কেটে যাবে বলেও তিনি মনে করেন।
১১ তলাবিশিষ্ট এ ভবনের প্রথম ৩ তলা বেজমেন্ট হবে উল্লেখ করে গণগ্রন্থাগার অধিদপ্তরের উপপরিচালক (প্রিন্সিপাল লাইব্রেরিয়ান) মোহাম্মদ জিল্লুর রহমান বলেন, আগামী জানুয়ারিতে এ প্রকল্পের পিপি (পোজেক্ট প্রোপোজাল) চূড়ান্ত হবে। আর জুন-জুলাই মাস নাগাদ পুরনো ভবন ভাঙ্গা ও নতুন ভবন নির্মাণের মূল কাজ শুরু হবে।
তিনি বলেন, বর্তমানের এ ভবনটিতে ৬ হাজার ৪৮০ বর্গফুট আয়তনের সাধারণ পাঠকক্ষে ২১৬টি আসন রয়েছে। বিজ্ঞান কক্ষের জায়গার পরিমাণও ৬ হাজার ৪৮০ বর্গফুট এবং আসন ২২০টি। আছে রেফারেন্স ও পত্র-পত্রিকা এবং শিশু-কিশোর পাঠকক্ষ, যার আয়তন ৪ হাজার ৬২৪ এবং ২ হাজার ৪০০ বর্গফুট। লাইব্রেরির প্রশাসনিক হিসাব মতে, প্রতিদিন আড়াই থেকে ৩ হাজার পাঠকের সমাগম ঘটে গণগ্রন্থাগারে।
জিল্লুর রহমান বলেন, পুরনো এ ভবনে ৫২৫ আসনের একটি অডিটোরিয়াম (শওকত ওসমান স্মৃতি মিলনায়তন), ৮০ আসনের একটি সেমিনার কক্ষ, একটি স্টাফ কোয়ার্টার, একটি ক্যান্টিনসহ অন্যান্য সুবিধা রয়েছে। বর্তমান ভবনে স্থাপনাগুলো আলাদা আলাদা থাকলেও নতুন ভবন নির্মাণের পর সকল সুবিধা একই ছাদের নিচে চলে আসবে জানিয়ে তিনি বলেন, ১১ তলা ভবনে সাধারণ পাঠাগার, বিজ্ঞান পাঠাগার, রেফারেন্স পাঠকক্ষ, বুক স্ট্যাক, পৃথক শিশু-কিশোর শাখার পাশাপাশি আরও কয়েকটি মিলনায়তন, ফুড কর্নারসহ আরও আনন্দদায়ক ও মনোরম অত্যাধুনিক সব ব্যবস্থা থাকবে।
১৯৫৮ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সংস্কৃতি বিভাগের অধীন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় ‘বাংলাদেশ কেন্দ্রীয় পাবলিক লাইব্রেরি’ নামে ১০ হাজার ৪০টি বই নিয়ে এ পাঠাগারের যাত্রা শুর। ওই বছরেরই ২২ মার্চ সর্ব সাধারণের জন্য লাইব্রেরি খুলে দেয়া হয়। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭৮ সালে এটি বর্তমান স্থানে স্থানান্তরিত হয়। পরে ১৯৮৩ সালে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়াধীন একটি অধিদপ্তর হিসাবে এটি প্রতিষ্ঠা লাভ করে।
বাংলাদেশ সময়: ১৯২৭ ঘণ্টা, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৭
লেটেস্টবিডিনিউজ.কম/এসডিএম