এবার কোরবানির ঈদে দেশের সড়ক-মহাসড়ক, রেল ও নৌপথে সম্মিলিতভাবে ২৭২টি দুর্ঘটনায় ৩২২ জন নিহত ও ৭৫৯ জন আহত হয়েছেন। আজ বুধবার রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) গোলটেবিল মিলনায়তনে ঈদুল আযহায় সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিবেদন-২০১৭ প্রকাশ উপলক্ষ্যে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এই পরিসংখ্যান দিয়েছে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি।
এ সময় সংগঠনটির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী জানান, ঈদ যাত্রা শুরুর ২৮ আগস্ট থেকে ঈদ শেষে কর্মস্থলে ফেরা ৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বিগত ১৩ দিনে ২১৪ টি সড়ক দুর্ঘটনায় ২৫৪ জন নিহত ও ৬৯৬ জন আহত হয়েছেন। একই সময়ে নৌ-পথে ১৫ টি দুর্ঘটনায় ২৫ জন নিহত ও ৬৩ জন আহত হয়েছেন। আর ট্রেনে কাটা পড়ে নিহত হয়েছেন ৪৩ জন।
তিনি বলেন, গত বছর একই সময়ে সড়ক দুর্ঘটনাসহ সব ধরনের দূর্ঘটনার সংখ্যা কম ছিল। সে সময়ে সড়ক দুর্ঘটনার সংখ্যা ছিল ১৯৩ টি এবং নিহত হয়েছিল ২৪৮ জন; নৌ-পথে দূঘটনা ৮টি এবং নিহতের সংখ্যা ১০ জন। এছাড়া ট্রেনে কাটা পড়ে নিহত হয়েছিল ৭ জন।
বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব বলেন, বিশৃংখলা, অব্যবস্থাপনা ও আইনের শিথিলতার কারণে বাংলাদেশের সড়ক-মহাসড়ক দিন দিন অনিরাপদ হয়ে উঠছে। এতে সড়কে মৃত্যুর মিছিল যেমন দীর্ঘায়িত হচ্ছে তেমনি জনভোগান্তিও বাড়াচ্ছে।
পরিসংখ্যানে দেখা গেছে মোট সড়ক দুর্ঘটনার ৩৯.১০ শতাংশ গাড়ি চাপা; নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ১২.৬০ শতাংশ; মুখোমুখি সংঘর্ষে ৩২.৬০ শতাংশ; গাড়ির ছাদ থেকে পড়ে ৩.২০ শতাংশ; চাকায় ওড়না পেঁচিয়ে ১.৪০ শতাংশ এবং অন্যান্য কারণে ঘটেছে ১১.২০ শতাংশ।
এসব দুর্ঘটনায় জড়িত যানবাহনের মধ্যে ৩৭ শতাংশ বাস; ট্রাক ও পিকআপ ৩৫ শতাংশ; মটরসাইকেল, ইজিবাইক ও নছিমনসহ ছোট যানবাহন ২৩ শতাংশ এবং অন্যান্য যানবাহন ৫ শতাংশ।
যাত্রী কল্যাণ সমিতির পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, ভাঙ্গা ও খানাখন্দপূর্ণ রাস্তাঘাট; অতিরিক্ত গতিতে গাড়ি চালানো; বিপদজনক ওভারটেকিং; যানজটে আটকে থাকা বাণিজ্যিক টিপধারী পরিবহনগুলোকে অতিরিক্তি মুনাফার আশায় দ্রুত ফেরত আসার জন্য মালিক পক্ষের বারবার তাগাদা; ধীরগতির পশুবাহী ট্রাক, নছিমন-করিমন, ভটভটি, ইজিবাইক, অটোরিক্সা, ব্যটারিচালিত রিক্সা, প্যাডেলচালিত রিক্সার সাথে বাণিজ্যিক টিপধারী দ্রুতগতির বাস ও মাইক্রোবাস, কার একইসাথে চলাচল; টিনএজদের দ্রুত গতির মোটর সাইকেল; ফুটপাত দখলে থাকায় অথবা ফুটপাত না থাকায় রাস্তার উপরদিয়ে যাতায়াত এসব দুর্ঘটনার জন্য দায়ী।
এসময় দুর্ঘটনা প্রতিরোধে সংগঠনটির পক্ষ থেকে বেশ কিছু সুপারিশ তুলে ধরা হয়। সুপারিশগুলোর মধ্যে রয়েছে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ে সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধ সেল গঠন; যানবাহনের গতি নিয়ন্ত্রণ ও যথাযথ ব্যবহারের উদ্যোগ গ্রহণ; মহাসড়কে দ্রুত গতি ও ধীর গতির যানবাহনের জন্য পৃথক লেনের ব্যবস্থা; মানসম্মত সড়ক নির্মাণ ও মেরামতের পাশাপাশি রোড সেফটি অডিট করা; সড়ক মহাসড়কে রোড ডিভাইডার স্থাপন করা; মানসম্মত ও নিরাপদ যানবাহন ব্যবস্থা গড়ে তোলা; নিরাপদ ও প্রশিক্ষিত চালক গড়ে তোলা; দেশের সড়ক-মহাসড়কে পথচারী বান্ধব ফুটপাত, জেব্রা ক্রসিং, ওভারপাস, আন্ডারপাস গড়ে তোলা; ওভারলোড নিয়ন্ত্রণে মানসম্মত পর্যাপ্ত গণপরিবহনের ব্যবস্থা করা; মহাসড়কে নছিমন-করিমন, ব্যাটারি চালিত রিক্সা, অটোরিক্সা বন্ধে সরকারের গৃহিত সিদ্ধান্ত শত ভাগ বাস্তবায়ন করা।
এইসময় অনান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, পিএসসির সাবেক চেয়ারম্যান ইকরাম আহমেদ, বিশিষ্ট সাংবাদিক আবু সাঈদ খান, এক্সিডেন্টে রিচার্জ ইনিষ্টিটিউটের বুয়েট সাবেক পরিচালক ড. মাহবুব আলম তালুকদার, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি কার্যকরী সভাপতি রুস্তম আলী খান, সোসাইটি ফর ইমারজেন্সি মেডিসিনের সভাপতি ও সড়ক নিরাপত্তা জোট শ্রোতা সদস্য ডাঃ হুমায়ন কবির, বাংলাদেশ সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবি সমিতি সহ-সম্পাদক ব্যারিষ্টার শফিকুল ইসলাম, সড়ক পরিবহন শ্রমিক লীগ যুগ্ন সম্পাদক হানিফ খোকন প্রমুখ।
বাংলাদেশ সময়: ১৪৫০ ঘণ্টা, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৭
লেটেস্টবিডিনিউজ.কম/এসপি