মহান বিজয় দিবস যেন সার্বজনীন উৎসবে পরিণত হয় এজন্য বৈশাখী ভাতার মতো \’বিজয় দিবস ভাতা\’ চালু করার কথা ভাবছে সরকার। এ ভাতা প্রচলনের বিষয়ে মতামত চেয়ে সম্প্রতি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে অর্থ বিভাগ, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ও মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ে চিঠিও পাঠানো হয়েছে।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের উপসচিব মঈনউল ইসলাম স্বাক্ষরিত ওই চিঠিতে পরীক্ষা-নিরীক্ষাক্রমে বিজয় দিবস ভাতা প্রচলনের বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অনুরোধ করা হয়েছে। এ বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম বলেন, বিজয় দিবসের ভাতা প্রচলনের কাজ চলছে। তবে কবে তা কার্যকর হবে সে বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব হেদায়েতুল্লাহ আল মামুন বলেন, মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে \’বিজয় দিবস ভাতা\’ প্রচলনসংক্রান্ত একটি চিঠি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে এসেছে। তারা এ বিষয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখছেন। এটা চালু করলে পজেটিভ হবে না নেগেটিভ হবে এটা আগে জানতে হবে। এজন্য সংশ্লিষ্ট সবার মতামত নেবেন।\’
অর্থসচিব আরও বলেন, এ বিষয়টি দেশের স্বাধীনতার সঙ্গে সম্পৃক্ত। এ ধরনের বিশেষ ভাতা চালুর মতো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে। ফলে পুরো প্রক্রিয়াটি কিছুটা সময়সাপেক্ষও বটে। তবে অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা হলে বলতে পারবেন কবে থেকে এটা কার্যকর হতে পারে। এ বিষয়ে চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। শিগগির আলোচনা করবেন।
জানা যায়, মহান বিজয় দিবস যেন সার্বজনীন উৎসব পরিণত হয়, সর্বত্র এটা যেন প্রতিভাত হয় যে, দিনটি বিজয় দিবস। এ জন্য বৈশাখী ভাতার মতো বিজয় দিবসের বিশেষ ভাতা চালু করতে চাচ্ছে সরকার। কারণ, এখন শুধু সকালে কিছু প্যারেড, তারপরে কিছু অনুষ্ঠান, বিকালে একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে দিনটি শেষ হয়ে যায়। বিশেষ এই ভাতা চালু করা হলে ঈদ, পূজা ও বাংলা নববর্ষের মতো দিনটি উৎসবমুখর পরিবেশে কাটবে। এতে নতুন লাল সবুজের বর্ণিল পোশাক পরার একটা ব্যাপার থাকবে। এখন যেমন ঈদ-পূজা উপলক্ষে মানুষ বন্ধুবান্ধব, আত্মীয়স্বজন, সহকর্মীর বাড়িতে বেড়াতে যান, এ রকম একটি ব্যাপার যেন ঘটে। যেটা সবাইকে একসূত্রে আবদ্ধ করতে পারে।
জনপ্রশাসনের একাধিক কর্মকর্তা বলেন, দেশের ১৩ লাখ ৮২ হাজার ৩৯৩ জন সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারীর জন্য বিজয় দিবসের বিশেষ ভাতা চালু করার উদ্যোগ নিচ্ছে সরকার। এ জন্য সংশ্লিষ্ট বিষয়ে পরীক্ষানিরীক্ষা করা হচ্ছে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগেই এই ভাতা চালু করার সম্ভাবনা রয়েছে।
এ ব্যাপারে সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার বলেন, বিজয় দিবসের ভাতা চালু হলে ভালো হবে। যেসব কর্মকর্তা পাবেন তারা খুশি হবেন। যদি হয় তাহলে অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের জন্যও হওয়া উচিত। তারা যেন বাদ না পড়েন। কারণ, তারাও দীর্ঘকাল সরকারকে সেবা দিয়েছেন।
মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ. ক. ম মোজাম্মেল হক বলেন, তারা চেষ্টা করে যাচ্ছেন যাতে বিজয় দিবসের ভাতা চালু হয়। তবে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলো এখনো এ বিষয়ে কোনো কিছু বলেনি।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. মো. মোজাম্মেল হক খান বলেন, বিজয় দিবসের ভাতা চালু করার জন্য আলোচনা চলছে। তবে তিনি এ বিষয়ে বিস্তারিত জানেন না।
উল্লেখ্য, গত ৩১ মে গোপালগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোখলেসুর রহমান সরকার \’বিজয় দিবস ভাতা\’ চালুর প্রস্তাব করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিবের কাছে একটি চিঠি পাঠান। ওই চিঠিতে বিজয় দিবস ভাতা চালুর যৌক্তিকতা তুলে ধরার চেষ্টা করেন তিনি। ওই চিঠির প্রেক্ষিতে মন্ত্রীপরিষদ বিভাগ সম্প্রতি এ বিষয়ে মতামত চেয়ে অর্থ বিভাগ, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ও মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠায়। এখন সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলো এ বিষয়ে কাজ করছে। খবর যায়যায়দিন।
বাংলাদেশ সময়: ১১১০ ঘণ্টা, ১২ সেপ্টেম্বর ২০১৭
লেটেস্টবিডিনিউজ.কম/এস