বাংলাদেশের সঙ্গে মিয়ানমারের ২৭১ কিলোমিটার সীমান্ত পুরোটাই ‘আরাকান আর্মির’ নিয়ন্ত্রণে রয়েছে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা অবসরপ্রাপ্ত লেফট্যানেন্ট জেনারেল মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।
তিনি বলেছেন, দেশটা মিয়ানমারের আর সীমান্ত এলাকা নিয়ন্ত্রণে রয়েছে আরাকান আর্মির। ফলে সীমান্ত পরিস্থিতি নিয়ে উভয় পক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হচ্ছে বাংলাদেশের। উভয় পক্ষের সঙ্গে যোগাযোগও রয়েছে।
সোমবার (৩০ ডিসেম্বর) কক্সবাজারের টেকনাফের সীমান্ত এলাকা পরিদর্শনের সময় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা এসব কথা বলেন।
বর্তমান সরকারের প্রধান উপদেষ্টা বিশ্বব্যাপী গ্রহণ যোগ্য মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘ইতিমধ্যে মিয়ানমার ও রোহিঙ্গা সমস্যা নিয়ে একজন গ্রহণযোগ্য ও বিশেষজ্ঞ ব্যক্তি ড. খলিলুর রহমানকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। তিনি বিষয়টি সার্বক্ষণিকভাবে নজর রাখছেন। সীমান্ত এলাকায় আমাদের কোনো সমস্যা নেই। বিজিবিসহ সব বাহিনীর সদস্যরা সর্বোচ্চ সর্তকতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করছেন। এখানে যেন আইনশৃঙ্খলা সব সময় স্বাভাবিক থাকে তার জন্য গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে।’
মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সংঘাতের জের ধরে ৫০ থেকে ৬০ হাজার নতুন রোহিঙ্গা আমাদের দেশে অনুপ্রবেশের তথ্য স্বীকার করে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘নতুন আসা রোহিঙ্গাদের নিবন্ধন হয়নি। তাদের নতুন করে নিবন্ধিত করা হবে কি হবে না তা নিয়ে সরকারের উচ্চ পর্যায়ের সিদ্ধান্ত জরুরি। তা নিয়ে এখনও কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। নতুন অনুপ্রেবশ করা রোহিঙ্গারা মানবিক সমস্যায় পড়ে এসেছেন। অনেকেই এসেছেন গুরুতর আহত হয়ে। ফলে তাদের ফেরত পাঠানোও খুবই জটিল হয়ে পড়েছে। নতুন আসা রোহিঙ্গাদের বিভিন্ন মাধ্যমে খাবারের প্রয়োজনীয় সহযোগিতা পাচ্ছেন।’
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা অবসরপ্রাপ্ত লে. জেনারেল মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বেলা ১১টার দিকে হেলিকপ্টারে টেকনাফের বিজিবি ২ নম্বর ব্যাটালিয়ান সদরে অবতরণ করেন। ওখানে বিজিবি সদস্যদের সঙ্গে আলাপ, পরিদর্শন শেষে তিনি যান দমদমিয়াস্থ নাফ নদীর মোহনায়। সেখানে দাঁড়িয়ে সীমান্তের ওপারে দেখেন এবং কথা বলেন বিজিবিসহ বিভিন্ন বাহিনীর কর্মকর্তাদের সঙ্গে। ওখানেই তিনি সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন।
এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘টেকনাফ এবং টেকনাফের বদি মাদকের জন্য বিখ্যাত। এখানে মাদকের সমস্যা দীর্ঘ পুরাতন। নাফ নদীর বাংলাদেশের অংশের জালিয়ারদিয়া চরে কিছু অপরাধী ছিল। যারা দীর্ঘদিন ধরে মাদক পাচারের বিষয়টি নিয়ন্ত্রণ করতো। বর্তমান সরকার আসার পর চর থেকে তাদের বিতাড়িত করা হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, মাদক পর্যায়ক্রমে নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হবে। এর জন্য সীমান্তের সব মানুষকে তথ্য প্রদান করে সহযোগিতার আহবান জানান তিনি।
মাদক নিয়ন্ত্রণে মসজিদের মাওলানাদের জুমার নামাজসহ বিভিন্ন সময় সচেতনতার প্রচারের অনুরোধও জানান লে. জেনারেল মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।।
নাফ নদীতে মাছ ধরা ও গরু আমদানির করিডোর চালু বিষয়ে মিয়ানমারের পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘বিভিন্ন সময় গোলাগুলির শব্দ এপারে শোনা যায়। গোলাবারুদ ও এপারে এসে পড়ে। ফলে নাফ নদীতে মাছ ধরা এখন নিরাপদ না। পরিস্থিতির উন্নত হলে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত গ্রহণ সম্ভব হবে। গরু আমদানি বন্ধ থাকায় দেশের খামারিরা খুশি এবং পশু সংকটও নেই। পরিস্থিতির উন্নত হলে উভয় পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করেই করিডোরের ব্যাপারে বলা যাবে।’