শাপলা চত্বরে গণহত্যায় জড়িতদের দেশে ফিরিয়ে বিচারের দাবি

শাপলা চত্বরে গণহত্যায় জড়িতদের দেশে ফিরিয়ে এনে বিচার, সর্বস্তরের শিক্ষা ব্যবস্থায় ধর্মীয় শিক্ষা বাধ্যতামূলক করা, দিল্লির মাওলানা মোহাম্মদ সাদ কান্ধলভিকে দেশে আসতে না দেওয়া এবং কাকরাইল মসজিদে সাদপন্থিদের কার্যক্রম বন্ধসহ নয় দফা দাবি জানিয়েছেন তাবলিগ জামাতের প্রয়াত মাওলানা জুবায়েরুল হাসানের অনুসারী শীর্ষস্থানীয় আলেম ও বিভিন্ন ইসলামি সংগঠনের নেতাকর্মীরা।

মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ‘ওলামা-মাশায়েখদের ইসলামী মহাসম্মেলন’ থেকে এসব দাবি উপস্থাপন করেন শায়খুল হাদিস পরিষদের প্রধান পৃষ্ঠপোষক ও বেফাক মহাসচিব মাওলানা মাহফুজুল হক।

তাবলিগ জামাতের জুবায়েরপন্থিদের দাবি, মাওলানা সাদের অনুসারী অংশ আসন্ন বিশ্ব ইজতেমাকে কেন্দ্র করে ভয়াবহ কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে সহিংসতা করার ষড়যন্ত্র করছেন। ছাত্র-জনতাকে সঙ্গে নিয়ে আলেম-ওলামারা তাদের সব ষড়যন্ত্রকে নস্যাৎ করে দিতে প্রস্তুত আছে।
নেতৃত্ব নিয়ে বিরোধে বাংলাদেশে তাবলিগ জামাত দুটি প্রধান গ্রুপে বিভক্ত। এর মধ্যে একটি অংশ প্রয়াত মাওলানা জুবায়েরুল হাসানের অনুসারী। আরেকটি অংশ দিল্লির মাওলানা মোহাম্মদ সাদ কান্ধলভির অনুসারী। এ দুই অংশের মধ্যে প্রায়ই বিবাদের খবর পাওয়া যায়।

এর মধ্যে টঙ্গীর তুরাগপাড়ে বিশ্ব ইজতেমার দিন ঘনিয়ে আসতে থাকায় গত সোমবার (৪ নভেম্বর) দুপুরে সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এ নিয়ে বৈঠক হয়। বৈঠক শেষে ইজতেমার তারিখ ঘোষণা করেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।

তিনি জানান, আগামী ২০২৫ সালের ৩১ জানুয়ারি এবং ১ ও ২ ফেব্রুয়ারি প্রথম ধাপের বিশ্ব ইজতেমা এবং ফেব্রুয়ারি মাসের ৭, ৮ এবং ৯ তারিখে দ্বিতীয় ধাপের বিশ্ব ইজতেমা অনুষ্ঠিত হবে।

মন্ত্রণালয়ের ওই বৈঠকে মাওলানা সাদ কান্ধলভীর অনুসারীরা অংশ নিলেও মাওলানা জুবায়েরুল হাসানের অনুসারীরা ছিলেন না।

বৈঠক থেকে জানা যায়, যেহেতু তাবলিগের দুই গ্রুপের মধ্যে মাওলানা জুবায়েরুলের অনুসারীরা সভায় উপস্থিত হননি, সেহেতু প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপের ইজতেমায় কারা আগে মাঠ পাবেন এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। এর আগে প্রতি বছর জুবায়েরুলের অনুসারীরা প্রথম ধাপে মাঠ পেয়ে আসছেন।

এ নিয়ে নানান সমীকরণ ও আলোচনার মধ্যে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ‘ওলামা-মাশায়েখদের ইসলামি মহাসম্মেলন’ ডাকা হয়। যেখানে মাওলানা সাদ কান্ধলভীর সমালোচনা করেন বক্তারা।

এসময় নয় দফা দাবি উত্থাপন করা হয়। দাবিগুলো হলো-

১. কওমি শিক্ষাকে দারুল ওলুম দেওবন্দের আওতায় পরিচালনা করতে হবে এবং তাবলিগ নিয়ে বিচ্ছিন্ন মহলের সব ষড়যন্ত্র বন্ধ করতে হবে।

২. সাধারণ শিক্ষা সিলেবাসে ধর্মশিক্ষাকে বাধ্যতামূলক করতে হবে।

৩. আলেমদের বিরুদ্ধে বিগত সরকারের যাবতীয় মামলা প্রত্যাহার করতে হবে।

৪. শাপলা চত্বরের গণহত্যায় জড়িত আসামিদের দেশে এনে শাস্তি নিশ্চিত এবং সারাদেশে দায়ের করা মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করতে হবে।

৫. ২০১৮ সালে টঙ্গী ময়দানে সাদপন্থিদের নৃশংস আক্রমণের বিচার করতে হবে।

৬. সাদপন্থিরা নবী করিম (সা.)-সহ সাহাবীদের সমালোচনা করে আসছে। সাদ তাবলিগের নীতিমালা উপেক্ষা করে আসছেন। তাই সাদ সাহেবকে দেশে আসতে বাধা দেওয়া হচ্ছে। কোনো অবস্থাতেই আসতে দেওয়া হবে না।

৭. আলেমপন্থিদের বিশ্ব ইজতেমাই সরকারঘোষিত দুই পর্বে করতে দিতে হবে। এর মধ্যে আগামী বিশ্ব ইজতেমা প্রথম পর্ব অনুষ্ঠিত হবে ২৭-২৮-২৯ জানুয়ারি, দ্বিতীয় পর্ব ৭-৮-৯ ফেব্রুয়ারি করার ঘোষণা করা হলো। এ বিষয়ে সরকারের সার্বিক সহযোগিতা কামনা করছি।

৮. কাকরাইল মসজিদ সাদপন্থিদের কোনো কার্যক্রম চালাতে দেওয়া হবে না। কাকরাইল আজ থেকে কেবলমাত্র শুরায়ি নেজামে পরিচালিত হবে।

৯. কাদিয়ানিদের অবিলম্বে অমুসলিম ঘোষণা করতে হবে।

Scroll to Top