ছাত্র ও জনতার গণ-অভ্যুত্থানের পর ৮ আগস্ট নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত হয় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। এরইমধ্যে দুমাস পার করেছে ২১ সদস্যের উপদেষ্টা পরিষদ। তাদের অনেকেই পালন করছেন একাধিক গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব। এ নিয়ে রাজনীতিবিদদের প্রায়ই অভিযোগ, এক ব্যক্তি একইসঙ্গে কয়েকটি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করায় সরকারের কাজে দীর্ঘসূত্রিতা সৃষ্টি হচ্ছে। তাই উপদেষ্টা পরিষদের পরিসর বাড়ানোরও দাবি তুলেছেন তারা।
সূত্র বলছে, নতুন মুখ যুক্ত করার পাশাপাশি কয়েকটি মন্ত্রণালয়ে দায়িত্ব রদবদলের আলোচনা চলছে। নতুন মুখ হিসেবে আলোচনায় রয়েছেন- আমার বাংলাদেশ পার্টি (এবি পার্টি) থেকে সদ্য পদত্যাগ করা আহ্বায়ক ও সাবেক সচিব এ এফ এম সোলায়মান চৌধুরী, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ড. ইফতেখার আহমেদ চৌধুরী, ড. মঞ্জুরুল ইসলাম, মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। এছাড়া স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পেতে পারেন একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক।
দলীয় প্রধানের উপদেষ্টা পরিষদে যুক্ত হওয়ার সম্ভাবনা নিয়ে এবি পার্টি কথা না বললেও কলেবর বৃদ্ধির পরামর্শ দিয়েছে দলটি। আর সংস্কারসহ বিভিন্ন কাজের গতি বাড়ানোর কথা বলছে বিপ্লবী ওয়াকার্স পার্টি।
এবি পার্টির সদস্য সচিব মজিবুর রহমান মঞ্জু বলেন, ‘শিক্ষা, কৃষি, স্বরাষ্ট্র ও জনপ্রশাসন-এগুলো অনেক বড় বড় মন্ত্রণালয়। এখানে একজন উপদেষ্টার পক্ষে একটি মন্ত্রণালয় চালানো অনেক কঠিন। এরপর সচিব, অতিরিক্ত সচিব, যুগ্ম সচিবের ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে অর্গানোগাম ফরমেট টা প্রোপারলি নাই। তাই উপদেষ্টা পরিষদের কলেবর বাড়াতে হবে।’
বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, গত দুমাসের কর্মকাণ্ডে যদি একটি নৈবিত্তিক পর্যালোচনা করে উপদেষ্টা পরিষদের কাউকে সম্মান দিয়েই যেন অব্যাহতি দিতে পারলে ভালো হবে। সেইসঙ্গে দক্ষ ব্যক্তিকে এনে অন্তর্বর্তী সরকার পুনর্গঠনের মধ্যে দিয়ে কাজের গতি আনা যেতে পারে। তাহলে এই সরকারের ওপরও আস্থা বাড়বে এবং দেশ সংস্কারের কাজও দুর্বার গতিতে এগিয়ে যাবে।’
এ বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টার ডেপুটি প্রেস সেক্রেটারি আজাদ মজুমদার বলেন, ‘উপদেষ্টা পরিষদ সম্প্রসারণ ও কয়েকজন উপদেষ্টার বিষয়ে নিজেদের পর্যবেক্ষণ জানিয়েছে কয়েকটি দল। প্রধান উপদেষ্টা তাদের কথা শুনেছেন। এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত পরবর্তীতে জানানো হবে।’
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কয়েকজন উপদেষ্টার পারফর্মেন্স নিয়ে কানাঘুষা আছে রাজনৈতিক মহলে। একজন বিশ্লেষক বলছেন, উপদেষ্টা পরিষদে বিশেষ অঞ্চল এবং একই ধরনের বিশেষজ্ঞের আধিক্য আছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক জোবাইদা নাসরীন বলেন, প্রধান উপদেষ্টা বারবার বলেছেন আমরা সবাই এক। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, উপদেষ্টাদের মধ্যে আমরা সবাই এক নয়। একটি বিশেষ দল বা কোনো গোষ্ঠীকে প্রাধান্য দেয়া হচ্ছে। এক্ষেত্রে এটাও কিন্তু একটা দুর্বলতা, কোনো ক্রাইটেরিয়া বিবেচনায় কোনো নিয়োগ হয়নি। একদলকে বাদ দিয়ে আরেক দলকে বসানো হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, সংস্কারের যে মূল শর্ত, সেটা কিন্তু প্রক্রিয়াকে নিরপেক্ষ করা। কিন্তু এখানে সেটা হচ্ছে না।
এছাড়া দ্রব্যমূল্যের লাগাম টেনে ধরা, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতিসহ জনআকাঙ্ক্ষা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কাজ সম্পন্ন করার পরামর্শ এই বিশ্লেষকের।