আন্দোলনে নিহত ৭০৮ জনের তালিকা প্রকাশ করলো সরকার

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ঘিরে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে নিহতদের নামের তালিকা প্রকাশ করেছে সরকার। তালিকায় প্রাথমিকভাবে ৭০৮ জনের পরিচয় জমা হয়েছে। তবে পরবর্তী সময়ে তা আরও বাড়তে পারে।

মঙ্গলবার (২৪ সেপ্টেম্বর) স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের উপ-সচিব উম্মে হাবিবার সই করা গণবিজ্ঞপ্তিতে এ খসড়া তালিকার তথ্য জানানো হয়েছে।

এর আগে গত ৯ সেপ্টেম্বর মন্ত্রণালয়ের প্রাথমিক তালিকায় নিহতের সংখ্যা ৬৩১ বলা হয়েছিল। সেই হিসাবে হালনাগাদে নিহতের সংখ্যা বেড়েছে ৭৭ জন।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেম বা এমআইএস শাখা আন্দোলনে আহত ও নিহতদের এই তালিকা তৈরি করছে। সারাদেশের সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল থেকে তথ্য নিয়ে করা এ তালিকা নিয়মিত হালনাগাদ করা হচ্ছে।

মঙ্গলবার এক গণবিজ্ঞপ্তিতে স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ জানিয়েছে, নতুন তালিকাটি আগামী ৬ অক্টোবর পর্যন্ত সবার জন্য উন্মুক্ত থাকবে। তালিকায় থাকা নিহতদের বিষয়ে কোনো মতামত, পরামর্শ এবং নতুন কোনো তথ্য থাকলে এ সময়ের মধ্যে নিকটস্থ সরকারি হাসপাতালে যোগাযোগ করার পরামর্শ দিয়েছে স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ।

প্রকাশিত তালিকা কোনো ধরনের সংশোধনের জন্য কি করতে হবে, সেই নির্দেশনাও দিয়েছে স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ।

• শহীদ পরিবারের সদস্য, ওয়ারিশ বা প্রতিনিধিকে জাতীয় পরিচয়পত্র, জন্মনিবন্ধন ও মোবাইল নম্বর দিয়ে রেজিস্ট্রেশন করতে হবে।

• রেজিস্ট্রেশনের পর শহীদ ব্যক্তির তথ্য ডাউনলোড ও প্রিন্ট করতে হবে।

• প্রিন্ট করা কাগজের যে ঘরগুলোতে তথ্য নেই, সেগুলো পূরণ করতে হবে।

• পূরণ করা তথ্য নিয়ে যে হাসপাতালে সেবা নিয়েছিলেন সেই হাসপাতাল বা নিকটস্থ সরকারি হাসপাতালে গেলে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান তথ্য সংশোধনে সহায়তা করবে।

• প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি শহীদ পরিবারের সদস্য, ওয়ারিশ বা প্রতিনিধির মাধ্যমে পূরণ করে দেয়া ফরমটি জমা নিয়ে অনলাইনে তথ্যগুলো হালনাগাদ করবেন।

• শহীদ পরিবারের দেয়া তথ্য যথাযথভাবে হালনাগাদ বা সংশোধন করা হয়েছে কি না ওয়েবসাইটে প্রবেশ করে পুনরায় যাচাই করা যাবে।

গণবিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, সাম্প্রতিক বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শহীদদের মধ্যে যদি কারো নাম এই তালিকায় অন্তর্ভুক্ত না হয়, তাহলে শহীদ পরিবারের সদস্য, ওয়ারিশ, প্রতিনিধিদের উপযুক্ত প্রমাণসহ সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসক, সিভিল সার্জন, উপজেলা নির্বাহী অফিসার বা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

সরকারি চাকরিতে কোটা বাতিলের দাবিতে ছাত্ররা যে আন্দোলন শুরু করে তা তীব্রতা পায় জুলাইর মাঝামাঝি সময়ে। ১৬ জুলাই পুলিশের গুলিতে রংপুরের আবু সাঈদসহ সারাদেশে ছয়জন নিহত হওয়ার পর আন্দোলন সহিংস আকার ধারণ করে। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন সরকার পতনের একদফা আন্দোলনে রূপ নেয়। তীব্র ছাত্র-গণ আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রীর পদে ইস্তফা দিয়ে দেশ ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যান।

অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর জুলাই-আগস্টে নিহত এবং আহতদের তালিকা তৈরি করতে গত ১৫ অগাস্ট স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় একটি কমিটি গঠন করে। এর প্রধান স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সাবেক সিনিয়র সচিব ও কমিটির প্রধান মুহাম্মদ হুমায়ুন কবির।

কমিটির প্রতিবেদন পাওয়ার পর গত ৯ সেপ্টেম্বর স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছিল বৈষম্যবিরোধী সারাদেশে অন্তত ৬৩১ জন নিহত, ১৯ হাজার ২০০ জনের বেশি আহত হয়েছে। সেটা ছিল প্রাথমিক তালিকা।

আর গত শুক্রবার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের স্বাস্থ্য বিষয়ক কেন্দ্রীয় উপ-কমিটির সদস্য সচিব ও সমন্বয়ক তারেকুল ইসলাম সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে জানিয়েছেন, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে সারাদেশে ১৪২৩ জন নিহত হয়েছেন, আহত হয়েছেন ২২ হাজারের বেশি মানুষ।

Scroll to Top