অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-আন্দোলনে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলেছেন, ‘ছাত্র-জনতার আকাঙ্ক্ষার যে স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়ার কাজ শুরু হয়েছে, তা শেষ না হওয়া পর্যন্ত তোমরা এর থেকে বেরিয়ে যেও না।’
তিনি এই স্বপ্ন বাস্তবায়নে ছাত্রদের সার্বক্ষণিক কাজ করে যাওয়ার আহ্বান জানান।
আজ রবিবার তেজগাঁওয়ে অবস্থিত প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে ছাত্র সংগঠক এবং বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের ছাত্র প্রতিনিধিদের সাথে এক মতবিনিময় সভায় প্রধান উপদেষ্টা এ কথা বলেন।
সভার শুরুতে প্রধান উপদেষ্টা ছাত্র-জনতার আন্দোলনে শহীদ ও আহত শিক্ষার্থীদের কথা গভীর শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন। এ সময় হতাহতদের বিষয়ে কথা বলতে গিয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন ড. ইউনূস। কাঁদতেও দেখা যায় তাকে।
তিনি বলেন, যারা শহীদ হয়েছে আজকে তারা আমাদের সঙ্গে বসতে পারতো। কিন্তু সেই সুযোগ তাদের দেওয়া হয়নি। যখন হাসপাতালে আহতদের দেখার জন্য যাই, তাদের দিকে তাকাতে কষ্ট হয়।
তিনি আরও বলেন, একজন তরুণকে যখন দেখতে যাই তখন সে জিজ্ঞেস করে স্যার, ক্রিকেট খেলব কীভাবে? ক্রিকেট খেলার কথা তার মাথা থেকে সরছে না। যতবার দেখি, মনে প্রশ্ন জাগে এটাই আমরা বাংলাদেশ বানিয়েছি?
‘কালকে একটা হাসপাতালে গেলাম, আবার সেই দৃশ্য। তরুণ প্রাণ, অনেকের মাথার খুলি উড়ে গেছে। অনেকের শরীরে গুলি রয়ে গেছে। বেঁচে আছে। যতবার শুনি, যতবার দেখি, আবার নতুন করে প্রতিজ্ঞা করতে হয়, যে স্বপ্নের জন্য তারা প্রাণ দিয়েছে সেই স্বপ্নকে আমরা বাস্তবায়ন করব। এটা থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই।
অধ্যাপক ইউনূস গত ১৫ বছরের অপশাসনের কথা স্মরণ করে শিক্ষার্থীদের বলেন, ‘এতদিন তারা চুপচাপ শুয়ে শুয়ে স্বপ্নের মধ্যে ছিলো এবং আনন্দ সহকারে লুটপাট করে যাচ্ছিলো। এরা কি এখন চুপচুপ বসে থাকবে। না, তারা খুব চেষ্টা করবে আবার তোমাদের দুঃস্বপ্নের মধ্যে ঢুকিয়ে দেওয়ার। চেষ্টার কোনো ত্রুটি রাখবে না। কাজেই যে কাজ শুরু করেছো, তা সমাপ্ত না হওয়া পর্যন্ত এর থেকে বেরিয়ে যেও না।’
ড. ইউনূস বলেন, ‘বাংলাদেশের জন্ম থেকে এই সুযোগ আর আসেনি। যে সুযোগ তোমরা আমাদের হাতে তুলে দিয়েছ, এটা যেন হাতছাড়া না হয়। এই সুযোগ হাতছাড়া হলে বাংলাদেশ আর রাষ্ট্র থাকবে না। এটা শুধু রাষ্ট্র না, পৃথিবীর সম্মানিত রাষ্ট্রে যেন পরিণত হয়।’