চলতি অর্থবছরে জরুরি ভিত্তিতে জাতীয় বাজেট সংশোধন ও ‘অপচয়মূলক ব্যয়’ কমানোর পরিকল্পনা করছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। কারণ সরকার বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ওপর চাপ কমাতে ও মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করতে চায়।
এর আগে গত সপ্তাহে অর্থ মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা জানিয়েছিলেন, সেপ্টেম্বরে এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক আলোচনা শুরু হতে পারে।
বাজেট এক লাখ কোটি টাকার বেশি কমানোর সুযোগ রয়েছে বলেও উল্লেখ করেছিলেন তিনি।
তিনি বলেন, রাজস্ব বাজেট ছাঁটাইয়ের সুযোগ কম, তাই বেশিরভাগ কাটছাঁট বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) থেকে হবে।
তার ভাষ্য, ‘বেশিরভাগ মন্ত্রণালয় ও বিভাগ সাধারণত প্রতি বছর তাদের বাজেট বরাদ্দের বড় অংশ ব্যয় করে না।’
গত ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকার চলতি অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকার বাজেট প্রণয়ন করে। এর মধ্যে এডিপি ছিল ২ লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকা।
অর্থ বিভাগের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২৩ অর্থবছরের জাতীয় বাজেট ছিল ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকা, যার মধ্যে ব্যয় হয়েছে ৫ লাখ ৬৩ হাজার ৯২১ কোটি টাকা।
এদিকে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই অন্তর্বর্তীকালীন সরকার অপচয় ও অপ্রয়োজনীয় সরকারি ব্যয় রোধে নানা পদক্ষেপ নেওয়ার পরিকল্পনা করছে।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের ওই কর্মকর্তা বলেন, অর্থ উপদেষ্টা ও পরিকল্পনা উপদেষ্টা মৌখিকভাবে অপ্রয়োজনীয় ব্যয়ের বিষয়ে সতর্ক থাকতে বলেছেন।
সাধারণত অর্থবছরের দ্বিতীয়ার্ধে, বিশেষ করে মার্চে সরকার জাতীয় বাজেট সংশোধন করে। তবে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার তার আগেই বাজেট সংশোধনের পরিকল্পনা করছে। তাই অর্থ মন্ত্রণালয় ও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় ইতোমধ্যে বাজেট ছাঁটাই করার মতো খাতগুলো চিহ্নিত করার কার্যক্রম শুরু করেছে।
সম্ভাব্য এডিপি সংশোধনের ইঙ্গিত দিয়ে পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, ‘অপচয়মূলক’ উদ্যোগ বন্ধে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এডিপির আওতায় চলমান ও নতুন উভয় ধরনের প্রকল্প যাচাই-বাছাই করবে
গত ৯ আগস্ট ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় পরিকল্পনা কমিশন, অর্থ বিভাগ ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ যৌথভাবে বাজেট যাচাই-বাছাই ও প্রতিবেদন দেবে।
তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘যতটা সম্ভব দ্রুত সময়ের মধ্যে তাদের এটা করতে হবে।’
চলতি অর্থবছরে এডিপির আওতায় ১ হাজার ৩২৬টি প্রকল্প আছে। এর মধ্যে অনেকগুলো ২০২৩ সালে অন্তর্ভুক্ত হলেও এখন পর্যন্ত কোনো ব্যয় দেখা যায়নি।
যেমন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন ১০২টি প্রকল্পে চলতি অর্থবছরে ১৭ হাজার ৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ৩০টি প্রকল্প নতুন হওয়ায় এখন পর্যন্ত কোনো খরচ হয়নি।তাছাড়া একনেকে অনুমোদনের অপেক্ষায় থাকা অনেক নতুন প্রকল্পের জন্য এডিপিতে আলাদা বরাদ্দ রাখা হয়েছে।
পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের একাধিক কর্মকর্তা গত সপ্তাহে বলেছেন, গত সরকারের আমলে অনুমোদিত প্রকল্প নিয়ে তাদের দিক থেকে নতুন কোনো কার্যক্রম নেই।
মৌখিক নির্দেশনা পেলেও এ বিষয়ে এখনো লিখিত কোনো নির্দেশনা জারি করা হয়নি জানিয়ে তারা বলেন, তারা পরবর্তী একনেক সভার জন্য অপেক্ষা করছেন।
গত ১৯ আগস্ট ওয়াহিদউদ্দিন বলেন, মূল্যস্ফীতি কমাতে ও অর্থনীতিতে স্থিতিশীলতা আনতে হলে সরকারি ব্যয় কমাতে হবে
ওই সময় উন্নয়ন বাজেট কমানোর সুযোগের কথাও উল্লেখ করেন তিনি।
‘এই মুহূর্তে সরকারি প্রকল্পে বিশৃঙ্খলা প্রকট। কিছু প্রকল্প আছে যেগুলো এখনো শুরু হয়নি, কিছু মাঝামাঝি পর্যায়ে রয়েছে এবং কিছু শেষ হওয়ার পথে।’
তিনি আরও বলেন, রাজনৈতিক বিবেচনায় বিভিন্ন নির্বাচনী এলাকায় অনেক প্রকল্প নেওয়া হয়েছে
তিনি বলেন, ‘একনেকে অনুমোদনের অপেক্ষায় থাকা নতুন প্রকল্পগুলোর মধ্যে অপেক্ষাকৃত কম গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পগুলো বাতিল করা হবে। এমনকি চলমান যেসব প্রকল্প গুরুত্বপূর্ণ নয়, সেগুলোতে অর্থ ব্যয় করা হোক বা না হোক, সেগুলোও শেষ করা হবে।’
সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক সেলিম রায়হান বলেন, বিদ্যমান অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ বিবেচনায় বাজেট পুনর্বিবেচনা করা উচিত।
‘তবে কতটুকু ছাঁটাই করা হতে পারে, তা অ্যাডহক ভিত্তিতে বলা যাবে না। এজন্য পরিসংখ্যান চূড়ান্ত করতে একটি যথাযথ নীতি মেনে চলা উচিৎ।’
তিনি আরও বলেন, চলতি বাজেট ‘ভুল ধারণার’ ওপর ভিত্তি করে প্রণয়ন করা হয়েছে। এখন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রয়োজন জিডিপি প্রবৃদ্ধি, মূল্যস্ফীতি, রপ্তানি আয় ও প্রবাসী আয় নিয়ে বাজেট নতুন করে সাজানো।