বন্যায় নতুন করে কোনো এলাকা প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা নেই বলে জানিয়েছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. কামরুল হাসান। আজ রোববার দুপুরে সচিবালয়ে মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে কামরুল হাসান এ তথ্য জানান।
সচিব কামরুল হাসান বলেন, গত ২৪ ঘণ্টায় কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও ফেনী জেলার ভারতীয় সীমান্তবর্তী অঞ্চল এবং ত্রিপুরার অভ্যন্তরীণ অববাহিকায় উল্লেখযোগ্য বৃষ্টি হয়নি। এ সময় উজানের নদ-নদীর পানি হ্রাস অব্যাহত আছে। ফলে মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, ফেনী, কুমিল্লা ও চট্টগ্রাম জেলার নিম্নাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি অব্যাহত আছে।
বন্যার সার্বিক অবস্থা তুলে ধরে দুর্যোগসচিব বলেন, বন্যায় দেশের ১১ জেলার ১০ লাখ ৪৭ হাজার ২৯ পরিবার পানিবন্দী। আর বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে প্রায় ৫২ লাখ মানুষ।
সচিব জানান, ১১টি জেলার ৭৩টি উপজেলার ৫৪৫টি ইউনিয়ন-পৌরসভা বন্যায় প্লাবিত ও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বন্যায় ১৮ জনের মৃত্যু হয়েছে, নিখোঁজ রয়েছেন ২ জন। পানিবন্দী ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য ৩ হাজার ৬৫৪টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এসব আশ্রয়কেন্দ্রে ৪ লাখ ১৫ হাজার ২৭৩ জনকে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া ২২ হাজার ২৯৮টি গবাদি পশুও সেখানে রাখা হয়েছে। ১১ জেলায় ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের চিকিৎসাসেবা দেওয়ার জন্য ৭৪৮টি মেডিকেল টিম চালু রয়েছে বলেও জানান তিনি।
বন্যা উপদ্রুত এলাকায় সরকারি-বেসরকারিসহ সব পর্যায় থেকে ত্রাণ বিতরণ অব্যাহত আছে জানিয়ে সচিব বলেন, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে বিতরণের জন্য দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় থেকে ১১ জেলায় ৩ কোটি ৫২ লাখ টাকা, ২০ হাজার ৬৫০ মেট্রিক টন চাল, ১৫ হাজার প্যাকেট শুকনা ও অন্যান্য খাবার, ৩৫ লাখ টাকার শিশুখাদ্য এবং ৩৫ লাখ টাকার গোখাদ্য বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া দেশের সব জেলায় পর্যাপ্ত ত্রাণসামগ্রী মজুত রয়েছে।
ত্রাণসচিব আরও বলেন, বন্যায় আক্রান্ত জেলাগুলোর জেলা প্রশাসককে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক, সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স, মেডিকেল টিম ও অন্য স্বেচ্ছাসেবকদের সঙ্গে সমন্বয় করে একসঙ্গে কাজ করার জন্য প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
কামরুল হাসান বলেন, ফেনীর ছাগলনাইয়া ও পরশুরাম উপজেলায় সেনাবাহিনীর ক্যাম্প স্থাপন করা হয়েছে। সেনাবাহিনী নৌ ও সড়কপথে, বিমানবাহিনী, র্যাব ও বিজিবি হেলিকপ্টারে প্রত্যন্ত এলাকায় ত্রাণসামগ্রী পৌঁছে দিচ্ছে। পাশাপাশি উদ্ধার কার্যক্রম চলমান।
ফেনীতে স্বাস্থ্যসেবা দেওয়ার জন্য ফিল্ড হাসপাতাল প্রস্তুত করা হয়েছে জানিয়ে দুর্যোগসচিব বলেন, সেনাবাহিনী ও জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের চিকিৎসকেরা সেবা দিচ্ছেন। পাশাপাশি স্থানীয় ক্লিনিক, হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানগুলোকে বন্যার্তদের প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার জন্য সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসকেরা নির্দেশনা দিচ্ছেন।
অন্তর্বর্তী সরকারের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে নিয়োজিত উপদেষ্টা বন্যা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের জন্য বন্যা উপদ্রুত এলাকা সরেজমিনে পরিদর্শন করেছেন। ফেনী জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে যোগাযোগের জন্য একটি ভি-স্যাট চালু করা হয়েছে বলেও জানান ত্রাণসচিব।
কামরুল হাসান আরও বলেন, বন্যার পানি নেমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পানিবাহিত রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিতে পারে। সে ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট সবাইকে সচেতন হতে হবে এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।