২০০৪ সালের ২১ আগস্ট। ভয়ঙ্কর সেই ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলার আলোচিত নাম জজ মিয়া। বিনা দোষে দীর্ঘ পাঁচ বছর জেলের ঘানি টানেন তিনি। ২০০৯ সালে অভিযোগ থেকে মুক্তি পান। এরপর কেটে গেছে ৮ বছর।তারপরও তিনি স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারেননি। দিনদিন জীবন হয়ে উঠছে দুর্বিসহ। যে রাষ্ট্রের কারণে তার জীবন বাঁকের পরিবর্তন সেই রাষ্ট্রও তার খোঁজ নেয়নি।
এখনো পরিচয় গোপন করে চলেন তিনি। অনেকটা ‘পলাতক আসামির’ মতো। আর এভাবেই তাকে জীবন চালাতে হচ্ছে। অনেকে পরিচয় শুনলেই বাঁকা চোখে তাকান। এমনকি কেউ মেয়ে বিয়ে দিতে চান না। এ কারণে একটি বিয়ে করলেও তা বেশিদিন টিকেনি। সংসারটাও করা হয়নি আর।
২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার সমাবেশে হামলার ঘটনায় পরের বছর জজ মিয়াকে তার গ্রামের বাড়ি নোয়াখালীর সেনবাগের কেশারপাড় ইউনিয়ন থেকে আটক করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
নিজের পরিচয় গোপন করার কথা স্বীকার করেন জজ মিয়া। পাশাপাশি কখনও কখনও পরিচয় প্রকাশ পাওয়ায় কঠিন পরিস্থিতিতে পড়ার কথাও জানান তিনি।
জজ মিয়া বলেন, ‘আমার কাছে কেউ তো মেয়ে বিয়ে দেন না। পরিচয় গোপন করে গত বছর চাঁদপুরে বিয়ে করেছিলাম। তার সঙ্গে ৮ মাস সংসারও করেছি।’
তিনি বলেন, ‘গত বছরের আগস্টে মিডিয়া আবার আমাকে নিয়ে লেখালেখি করে। তখন আমার শ্বশুর-শাশুড়ি সব জেনে যায় এবং তাদের মেয়েকে ডিভোর্স দিতে বলেন।’
জজ মিয়া বলেন, ‘আমি রাজি হইনি। পরে ডিভোর্স দিয়ে আমার স্ত্রীকে নিয়ে গেছেন শ্বশুর-শাশুড়ি। এরপর আর বিয়ে করতে পারিনি, কেউই মেয়ে দেন না।’
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, ২০০৯ সালে মুক্তি পাওয়ার পর জজ মিয়াকে আর এলাকায় দেখা যায়নি। শুধু জজ মিয়া নন বাড়িঘরসহ সব সম্পত্তি বিক্রি করে এলাকা ছেড়েছিল পুরো পরিবার।
সেই সময়ে জজ মিয়াকে ধরিয়ে দেওয়া গ্রামপুলিশ সামসুল হক বলেন, ‘একবার তাকে ইউনিয়ন পরিষদে চেয়ারম্যান অফিসে দেখছিলাম। এরপর আর দেখি নাই, এলাকার কেউই তার খোঁজ জানে না। বাড়িঘর বিক্রি করে চলে গেছে।’
নিজের কারণে বোনের বিয়ে আটকে থাকার দুঃখের গল্পও শোনান জজ মিয়া।
বলেন, ‘আমার হাতে তো টাকা নাই, বোনরে বিয়ে দিমু ক্যামনে? আর যারাই আসে, তারাও আমার পরিচয় শুনে ফিরে যায়।’
সংসারের আর্থিক সংকট সামলাতে ছোট ওই বোনকে বর্তমানে একটি প্রাইভেট হাসপাতালে নার্সের চাকরির ব্যবস্থা করে দিয়েছেন বলে জানান তিনি।
নাম পরিবর্তন করে জজ মিয়া বর্তমানে মা-বোনকে নিয়ে থাকেন সিদ্ধিরগঞ্জে। আর ভাড়ায় প্রাইভেটকার চালিয়ে যা আয় করেন তা দিয়ে মা ও বোনের মুখে তুলে দেন দু মুটো অন্ন।
ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘জেলে থাকতেই এলাকার সব বিক্রি করে দিছি। এরপর নাম-পরিচয় গোপন করেই চলতেছি। জজ মিয়া কাউরে বলি না, সবাইকে বলি আমার নাম জালাল।’
জজ মিয়া বলেন, ‘যারা চিনে ফেলে তারা খোঁজ-খবর জিগায়, আবার বাঁকা চোখেও দেখে অনেকে।’
জীবন নিয়ে হতাশা প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘সবদিক দিয়াই আল্লাহ আমারে পেরেশানে রাখছে। এরপরও যতদিন পারি, মা-বোনরে দেখে রাখমু।’
ক্ষুব্দ জজ মিয়া বলেন, ‘আমি রাষ্ট্রীয় ষড়যন্ত্রের শিকার। রাষ্ট্রের কারণে আমার সব খারাপ হয়ে গেল। সবদিকে হোঁচট খেলাম, অথচ রাষ্ট্র আমাকে দেখল না। রাষ্ট্র একটু তাকালেই আমি চলে-ফিরে বেড়াতে পারতাম।’
সব হারানো জজ মিয়ার প্রত্যাশা এখন একটাই- সরকার একটি চাকরি বা একটি গাড়ির ব্যবস্থা করে দিতো তাকে।
বাংলাদেশ সময়: ১১১০ ঘণ্টা, ২৭ আগস্ট ২০১৭
লেটেস্টবিডিনিউজ.কম/এস