আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের বিভিন্ন সময় গুম হওয়া কয়েকটি পরিবারের সদস্যদের কাছে দুর্দশার বিবরণ শুনে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
তিনি বলেছেন, ‘এগুলো অবিশ্বাস্য বিষয়। মানুষ মানুষের ক্ষতি এভাবে করতে পারে?’
গতকাল মঙ্গলবার রাত সোয়া ৮টার দিকে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় ‘মায়ের ডাক’র সদস্যদের সঙ্গে কথা বলার সময় এমন বিস্ময় প্রকাশ করেন প্রধান উপদেষ্টা।
গুম হওয়া ব্যক্তিদের পরিবারের সদস্যরা গড়ে তুলেছেন ‘মায়ের ডাক’। তাদের দাবি অনুযায়ী, ৪০০ জনের বেশি গুম হওয়া ব্যক্তিদের পরিবার এ সংগঠনে যুক্ত রয়েছেন।
গুমের কারণে ভুক্তভোগী পরিবারে সদস্যদের উদ্দেশে ড. ইউনূস বলেন, ‘এই সরকার আপনারাই বানিয়েছেন। আপনাদের কারণে এ সরকারকে আসতে হয়েছে, আপনারা এই সরকারের জন্মদাত্রী। এই সরকার যদি আপনাদের বিষয়গুলো না দেখে, তাহলে এই সরকারের দরকারটা কী? সরকার যদি এসব বিষয়ে কাজ না করে, তাহলে এই সরকারের সার্থকতা কী? যেভাবেই হোক এসবের সুরাহা করতে হবে, না হলে এ দায় থেকে এই সরকার মুক্তি পাবে না।’
তিনি বলেন, ‘আপনারা সাহসী কাজ করেছেন। আপনারা যদি রাস্তায় না দাঁড়াতেন, তাহলে মানুষ জানতে পারতো না।’
এক পর্যায়ে ড. ইউনূস জানতে চান, ‘আপনার কত বছর যাবত রাস্তায় দাঁড়াচ্ছেন?’ ভুক্তভোগীরা জানান, ১১ বছর যাবত।
এর আগে ‘মায়ের ডাক’র সমন্বয়ক সানজিদা ইসলাম তুলি প্রধান উপদেষ্টার কাছে গত এক যুগের দুর্দশার কথা তুলে ধরে বলেন, ‘আমাদের পরিবারের সদস্যদের গুম করেই ক্ষান্ত হয়নি, বিভিন্ন সময় নানান সংস্থার লোকজন অনেক পরিবারকে হয়রানি করেছে।’
কান্না জড়িত কণ্ঠে সানজিদা বলেন, ‘এমনও হয়েছে সাদা কাগজে সই করিয়ে নিয়েছে যে আমাদের কেউ গুম নেই, তারা বেড়াতে গেছে।’
তিনি বলেন, ‘অনেক পরিবারের এমন সন্তান আছে, যারা গর্ভে থাকার সময় তার বাবাকে নিয়ে গেছে। তারা জানে না তাদের বাবা বেঁচে আছে কি না। অনেক নারী জানেন না, তিনি বিধবা নাকি তার স্বামী বেঁচে আছে।’
প্রধান উপদেষ্টার সামনে আরেক ভুক্তভোগী নারী বলেন, ‘(৫ আগস্ট সরকার পতনের পর) যখন বিভিন্ন জায়গা থেকে গুম হওয়া ব্যক্তিদের ফিরে আসার তথ্য প্রকাশ হচ্ছিল, তখন আমাদের মনে আশার সঞ্চার হয়েছিল। আত্মীয়-স্বজনরা টেলিফোনে খোঁজ নিচ্ছিল। কী যে এক সময় কাটাচ্ছি, বলে বুঝাতে পারবো না।’
এ সময় ভুক্তভোগীদের পক্ষ থেকে সম্প্রতি বরখাস্ত হওয়া মেজর জেনারেল জিয়াউল আহসানকে জিজ্ঞাসাবাদের দাবি জানানো হয়।
উল্লেখ্য, গত ৭ আগস্ট বিমানবন্দর থেকে জিয়াউল আহসানকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। জিয়াউল আহসান ২০২২ সাল থেকে ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টারের মহাপরিচালকের ছিলেন। তিনি ২০০৯ সালের র্যাব-২ এর সহঅধিনায়ক হন। একই বছর তিনি লেফটেন্যান্ট কর্নেল পদে পদোন্নতি পান এবং র্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখার পরিচালক নিযুক্ত হন। সে সময় থেকেই তাকে নিয়ে নানা বিতর্কের সৃষ্টি হয়।
এক উপদেষ্টা ভুক্তভোগীদের কাছে জানতে চান, এখন (সরকার পরিবর্তনের পর) আপনারা নিরাপদ বোধ করছেন কি না? জবাবে ভুক্তভোগী পরিবারের একজন বলেন, ‘আমরা মানসিক ট্রমা মধ্যেই আছি। কী অবস্থায় আছি, কীভাবে বোঝাই?’
ভুক্তভোগী পরিবারের সাত-আটজন সদস্য উপস্থিত ছিলেন। প্রধান উপদেষ্টা প্রায় ২৫ মিনিট তাদের সঙ্গে কথা বলেন। প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে শিল্প মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় উপদেষ্টা হাসান আরিফ, মৎস্য ও প্রাণীসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।