নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে প্রধান উপদেষ্টা করে আজ আজ বৃহস্পতিবার শপথ নিতে যাচ্ছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। এ সরকারের মেয়াদ কতদিন হবে, তা এখনও চূড়ান্ত হয়নি। বিদ্যমান সংবিধানে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কোনো রূপরেখা নেই বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। ফলে সংবিধানের বাইরে গিয়ে এ সরকার গঠন করতে হবে।
বুধবার (৭ আগস্ট) রাতে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে বৈঠকে নতুন অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদ ও কাদের নিয়ে সরকার গঠন হবে, তা নিয়ে আলোচনা করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়করা। ওই বৈঠকে এ সরকারের মেয়াদ কমপক্ষে তিন বছর হওয়ার বিষয়ে তারা মত দেন।
সংবিধানের ১২৩(৩)(ক) অনুচ্ছেদে বলা আছে, মেয়াদ অবসানের কারণে সংসদ ভেঙে যাওয়ার ক্ষেত্রে ভেঙে যাওয়ার পূর্বের ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন করতে হবে। ১২৩(৩)(খ) অনুচ্ছেদে বলা আছে, মেয়াদ অবসান ছাড়া অন্য কোনো কারণে সংসদ ভেঙে যাওয়ার ক্ষেত্রে পরের ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন করতে হবে। কিন্তু বর্তমান অবস্থাকে ‘বিশেষ পরিস্থিতি’ হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।
সোমবার (৫ আগস্ট) সন্ধ্যায় রাষ্ট্রপতির সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর বৈঠকে বিশেষ পরিস্থিতিতে নির্বাচন হলে তার সময়সীমা নির্ধারণ করা সম্ভব নয় বলে মত দেওয়া হয়। সে ক্ষেত্রে সাধারণ নির্বাচনের পর গঠিত সংসদে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কর্মকাণ্ডকে বৈধতা দেওয়া হবে। ঐকমত্যের ভিত্তিতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সময়সীমা তারা নিজেরাই নির্ধারণ করবে।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক আসিফ নজরুল বলেন, আমরা এক্সট্রা অর্ডিনারি সিচুয়েশনে সরকার গঠন করছি। এমন পরিস্থিতিতে সরকারকে বৈধতা দেওয়ার ক্ষেত্রে সাংবিধানিক রীতি অনুসরণ করা হবে। সরকারের মেয়াদ এখনও ঠিক করা হয়নি। এটি আলোচনা চলছে। ছাত্রদের প্রস্তাবক্রমে ড. ইউনূস আসার পর এটি চূড়ান্ত করা হবে।
ড. ইউনূসের ঘনিষ্ঠ সূত্রগুলো জানিয়েছে, ২০০৭ সালে এক-এগারোর সেনা সমর্থিত সরকারের প্রধান হওয়ার প্রস্তাব পেলেও তিনি ফিরিয়ে দেন। কারণ তিনি মনে করেন, কম সময়ের জন্য দায়িত্ব নিয়ে সরকার ব্যবস্থায় গুণগত কোনো পরিবর্তন আনা সম্ভব নয়। তাই এবার বেশি সময় না পেলে ড. ইউনূসের দায়িত্ব নেওয়ার কথা নয়।
প্রসঙ্গত, গত সোমবার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকা ‘মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচিতে ঢাকায় হাজারো ছাত্রজনতার ঢল নামে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে দেশ ছাড়েন শেখ হাসিনা। এরপরই অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করে দেশ পরিচালনা করার দাবি ওঠে।
পরে সেদিনই সব রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বৈঠকে বসেন সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান। বৈঠকে শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধি হিসেবে অংশ নেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক আসিফ নজরুল। বৈঠকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের বিষয়ে আলোচনা হয়।