ঋণখেলাপিদের ঋণের সুদ মওকুফ করা খুবই আপত্তিকর বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর অধ্যাপক মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন। গতকাল শুক্রবার রাজধানীতে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশনে ছায়া বিতর্ক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, এবারের বাজেটে পাচার করা অর্থ ফিরিয়ে আনায় তেমন দিকনির্দেশনা দেখা যায়নি। অর্থপাচার, দুর্নীতি ও ঋণখেলাপি চক্র রোধ করা না গেলে এটি সরকারের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াবে।
বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশনে ‘এবারের বাজেট টেকসই উন্নয়নে সহায়ক হবে’ শীর্ষক ছায়া সংসদে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের বিতার্কিকদের পরাজিত করে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিতার্কিকরা বিজয়ী হয়েছেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন আয়োজক সংগঠন ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন বলেন, বড় বড় ঋণখেলাপিকে ঋণের সুদ মাফ করা হচ্ছে। ঋণখেলাপিদের ঋণের সুদ মওকুফ করা খুবই আপত্তিকর।
সরকারি ব্যাংকগুলো যে ৫০ হাজার কোটি টাকা সুদ মওকুফ করেছে তা খেলাপি ঋণ হিসেবে গণ্য করা উচিত। বর্তমানে মূল্যস্ফীতি ৯ শতাংশ বলা হলেও প্রকৃতপক্ষে এটি ১০ শতাংশের কাছাকাছি। বাজেট বক্তব্যে মূল্যস্ফীতি ৬.৫ শতাংশে নামিয়ে আনা হবে বললেও তা অর্জিত হবে না।
মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন বলেন, ‘মধ্যস্বত্বভোগীরা মজুদ ও সরবরাহের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করায় খাদ্যাভাবে ১৯৭৪ সালে বহু লোকের মৃত্যু হয়।
তাই মজুদ ও সরবরাহের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করতে হবে।’
ফরাসউদ্দিন বলেন, ‘সরকারের দেশি-বিদেশি উৎস থেকে ঋণনির্ভরতা কমিয়ে সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ নেওয়ায় জোর দেওয়া উচিত। ব্যাংক থেকে অধিক পরিমাণে ঋণ নিলে বিনিয়োগকারীরা ঋণ পাবেন না, বিনিয়োগ আরো স্থবির হয়ে পড়বে। অন্যদিকে সঞ্চয়পত্রের মাধ্যমে ঋণ নিলে মূল্যস্ফীতির চাপ কমবে ও সামাজিক নিরাপত্তা খাত শক্তিশালী হবে।’
সভাপতির বক্তব্যে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ বলেন, বাজেট আসে বাজেট যায়। বাজেটের পর সাধারণ মানুষ দুশ্চিন্তায় থাকে বাসাভাড়া, যাতায়াত ব্যয়, দ্রব্যমূল্য, সন্তানের লেখাপড়া খরচ, চিকিৎসা ব্যয় বাড়বে কি না তা নিয়ে। বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধি হলে বিপাকে পড়ে সীমিত আয়ের মানুষ। তবে প্রতিবছর বাজেটের পর সব কিছুর দাম বৃদ্ধি পাওয়া একটা রীতিতে পরিণত হয়েছে। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে দেশের মানুষ কষ্টে আছে। দিনে দিনে আয় বৈষম্য বেড়ে চলছে।
হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ বলেন, সৎ ব্যবসায়ীদের অনেকে ন্যায্যভাবে কর দিতে চাইলেও এনবিআরের প্রক্রিয়াগত জটিলতায় অথবা কর্তৃপক্ষের অসহযোগিতায় ন্যায্য কর প্রদান করতে পারছেন না।