ঢাকার বেশির ভাগ এলাকা অপরিকল্পিত, পরিবর্তনে যা করতে হবে

রাজধানী ঢাকার জনসংখ্যার লাগাম না টেনে যত বিনিয়োগ করা হোক না কেন, তাতে সুফল মিলবে না বলে জানিয়েছেন পরিকল্পনাবিদরা। তারা বলেছেন, ঢাকার বেশির ভাগ এলাকা অপরিকল্পিত। সেসব এলাকায় নাগরিক সেবা নেই বললেই চলে। এমতাবস্থায় এখানে বিনিয়োগ করে বসবাসযোগ্যতা বাড়ানো যাবে না। ব্যয়বহুল মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নের পরও ঢাকার বাসযোগ্যতার মান ধারাবাহিকভাবে নিচের দিকে যাচ্ছে কেন, এর কারণ অনুসন্ধান করতে হবে।

বুধবার সকালে পরিকল্পনাবিদদের জাতীয় পর্যায়ের সংগঠন বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের (বিআইপি) উদ্যোগে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের সদস্য ও খ্যাতিমান নগর পরিকল্পনাবিদরা এ কথা জানান। বাংলামোটরে প্ল্যানার্স টাওয়ারের বিআইপি কনফারেন্স হলে ‘বাসযোগ্যতা সূচকে ঢাকা কেন এত পিছিয়ে’ শীর্ষক একটি সেমিনার অনুষ্ঠানে উপরিউক্ত মতামত উঠে আসে।

সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক পরিকল্পনাবিদ শেখ মুহম্মদ মেহেদী আহসানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ পরিবেশন করেন বিআইপির সভাপতি পরিকল্পনাবিদ অধ্যাপক ড. আদিল মুহাম্মদ খান। লিখিত প্রবন্ধে বলা হয়, সম্প্রতি প্রকাশিত ইকোনমিক ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (ইআইইউ) ২০২৪-এর বসবাসযোগ্যতা সূচকে ১৭৩টি দেশের মধ্যে রাজধানী ঢাকার অবস্থান ১৬৮তম; অবস্থান নিচের দিক থেকে ষষ্ঠ, যেটা হতাশাব্যঞ্জক।

আরও বলা হয়, ঢাকা শহরে দেড় কোটি মানুষ বসবাস করে। যাদের নানা কর্মকাণ্ড অর্থনীতিতে বড় অবদান রাখছে। ঢাকার বাসযোগ্যতার মানের উন্নয়ন করতে না পারলে সামাজিক ও অর্থনৈতিক বিকাশ এবং তাদের জীবনমানের উন্নয়ন হবে না। এছাড়া ঢাকার অবাসযোগ্যতা ও অস্থায়িত্বশীল উন্নয়ন কর্মকাণ্ড সারা দেশের সুষম ও টেকসই উন্নয়নের বোঝা হয়ে দাঁড়াচ্ছে।

মূল প্রবন্ধে ড. আদিল জানান, মেট্রোরেলের পাশাপাশি গণপরিবহণব্যবস্থার উন্নয়ন করা প্রয়োজন। এর জন্য মানসম্মত বাস সার্ভিস ও প্যারা ট্রানজিট সার্ভিস নিশ্চিত এবং হাঁটার উপযোগী ফুটপাত নিশ্চিত করতে হবে। এলাকাভিত্তিক সবার জন্য প্রবেশগম্য খেলার মাঠ-পার্ক-উদ্যান তৈরি এবং বিদ্যমান সুবিধাদি সবার জন্য উন্মুক্ত করা দরকার। এছাড়া আবাসিক এলাকায় পর্যাপ্ত নাগরিক সুবিধাদি নিশ্চিত করতে পরিকল্পনার মানদণ্ড (প্ল্যানিং স্ট্যান্ডার্ড) সংশোধন, আবাসিক এলাকায় অনুমোদনহীন শিল্পকারখানা-গুদাম প্রভৃতি সরানোর উদ্যোগ, প্রয়োজন মোতাবেক নিুবিত্ত ও নিু-মধ্যবিত্তদের মানসম্মত আবাসন নিশ্চিত করতে নীতিমালা তৈরি এবং ভূমি বরাদ্দ ও সাশ্রয়ী আবাসন প্রকল্প গ্রহণ করা দরকার।

বিআইপির সাধারণ সম্পাদক পরিকল্পনাবিদ শেখ মুহম্মদ মেহেদী আহসান বলেন, বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক নীতি এবং সেগুলোর লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য বাসযোগ্যতার প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। সামগ্রিক পরিবেশের কথা ভেবে পরিকল্পনা করলে ঢাকা শহরের বাসযোগ্যতা বাড়ানো সম্ভব। আগামী নবম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনাকে কেন্দ্র করে ঢাকার বাসযোগ্যতা বাড়ানোর প্রতি সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তিনি।

বিআইপির সাবেক সভাপতি ও উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য পরিকল্পনাবিদ অধ্যাপক ড. আকতার মাহমুদ বলেন, এলাকাভিত্তিক প্রাথমিক বিদ্যালয় ও প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার জন্য প্রয়োজন পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন। শহরের বিশাল জনগোষ্ঠীকে বস্তিতে রেখে বাসযোগ্যতার উন্নতি করা সম্ভব নয়।

বিআইপির সাবেক সভাপতি ও উপদেষ্টা পরিষদের আহ্বায়ক পরিকল্পনাবিদ মোহাম্মদ ফজলে রেজা সুমন বলেন, বিগত এক যুগে অবকাঠামোতে প্রচুর বিনিয়োগের পর এবং ঢাকার সূচকে কোনো উন্নতি হয়নি। গণপরিবহণ নিয়ে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে ফুটপাত ও রোড নেটওয়ার্ক বৃদ্ধিতে সংস্থাগুলোকে আরও মনোযোগী হওয়ার আহ্বান জানান।

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন বিআইপির যুগ্মসম্পাদক পরিকল্পনাবিদ তামজিদুল ইসলাম, বোর্ড সদস্য (একাডেমিক অ্যাফেয়ার্স) পরিকল্পনাবিদ উসওয়াতুন মাহেরা খুশি, বোর্ড সদস্য (মেম্বারশিপ অ্যাফেয়ার্স) পরিকল্পনাবিদ মো. ফাহিম আবেদীন।

Scroll to Top