রাষ্ট্রীয় সফরে শুক্রবার (২১ জুন) ভারত যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ৭ জানুয়ারির সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার গঠনের পর এটিই প্রধানমন্ত্রীর প্রথম রাষ্ট্রীয় দ্বিপক্ষীয় সফর। একইভাবে ভারতের লোকসভা নির্বাচনের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তৃতীয় মেয়াদে সরকার গঠনের পর বাংলাদেশের সঙ্গেই প্রথম দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে বসতে যাচ্ছেন। ফলে সফরটিতে একে অপরের প্রতি প্রগাঢ় বন্ধুত্বের নিদর্শন প্রকাশ পাচ্ছে।
ঢাকায় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের প্রেস উইং জানায়, মোদির আমন্ত্রণে রাষ্ট্রীয় সফরে যাচ্ছেন শেখ হাসিনা। সফর উপলক্ষে ২১-২২ জুন নয়াদিল্লি অবস্থান করবেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ও তার সফরসঙ্গীরা।
সরকারপ্রধান ও তার সফরসঙ্গীদের বহনকারী বাংলাদেশ বিমানের ফ্লাইটটি শুক্রবার দুপুর ২টায় দিল্লির উদ্দেশে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ত্যাগ করবে।
সফরকালে ২২ জুন সকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নয়াদিল্লির রাষ্ট্রপতি ভবনে আনুষ্ঠানিক সংবর্ধনা প্রদান করা হবে। প্রধানমন্ত্রী সশস্ত্র সালাম গ্রহণ ও গার্ড অব অনার পরিদর্শন করবেন। এর পর রাজঘাটে অবস্থিত মহাত্মা গান্ধীর স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ ও পরিদর্শন বইয়ে স্বাক্ষর করবেন শেখ হাসিনা।
একই দিনে হায়দরাবাদ হাউসে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর একান্ত বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। সফরে প্রতিনিধি পর্যায়ে আলোচনা এবং দুই দেশের মধ্যে স্বাক্ষরিত সমঝোতা স্মারক ও চুক্তি বিনিময় এবং দুই নেতার প্রেস ব্রিফিং অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। এ ছাড়া বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সম্মানে রাষ্ট্রীয় মধ্যাহ্নভোজ আয়োজনের কথা রয়েছে।
সফরের শুরুর দিন শেখ হাসিনার আবাসস্থলে তার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এস জয়শঙ্কর। পরদিন বিকেলে ভারতের উপরাষ্ট্রপতি জগদীপ ধনখারের সঙ্গে তাঁর কার্যালয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাক্ষাৎ করবেন। উপরাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ফের ভারতের রাষ্ট্রপতি ভবনে যাবেন। এ সময় ভারতের রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একান্ত সাক্ষাৎ অনুষ্ঠিত হবে।
জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রীর সফরে ১২ থেকে ১৪টি চুক্তি ও সমঝোতা সইয়ের কথা রয়েছে। এর মধ্যে যেসব চুক্তি বা সমঝোতার মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে, তার মধ্যে কয়েকটি আবারও নবায়নের কথা রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠককে সামনে রেখে সফরের বিভিন্ন বিষয় চূড়ান্ত করতে দুই পক্ষ কাজ করেছে।
সফরে ভারতের ঋণচুক্তি বাস্তবায়নে নতুন রূপরেখা চুক্তি এবং বাংলাদেশে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য সরবরাহ নিশ্চিত করার জন্য সমঝোতা স্মারক সইয়ের সম্ভাবনা রয়েছে। আলোচনায় গুরুত্ব পাবে নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা। সেই সঙ্গে কলম্বো সিকিউরিটি কনক্লেভে বাংলাদেশের সদস্য হওয়া, তিস্তা মহাপ্রকল্পে ভারতের আগ্রহ, গঙ্গা চুক্তির নবায়ন, মাতারবাড়ীর গভীর সমুদ্রবন্দরের সর্বোচ্চ ব্যবহার, ব্রিকসে বাংলাদেশের সদস্য পদ, দ্বিপক্ষীয় ভিসা ইস্যু, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বাড়াতে কমপ্রিহেনসিভ ইকোনমিক পার্টনারশিপ অ্যাগ্রিমেন্ট (সেপা), উপ-আঞ্চলিক বিদ্যুৎ সহযোগিতা, জাপানের বিগ-বি পরিকল্পনা, কানেকটিভিটি, জ্বালানি, জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ফোরামে দুই দেশের সহযোগিতার বিষয়গুলো আলোচনায় আসবে। এ ছাড়া মহাকাশ, নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে রূপান্তর, ডিজিটাল অর্থনীতির মতো বিষয়গুলো সহযোগিতার নতুন ক্ষেত্র হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
এ ছাড়া সর্বশেষ বৈঠকের নেয়া সিদ্ধান্তগুলোর অগ্রগতি পর্যালোচনা করবেন দুই প্রধানমন্ত্রী। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে অমীমাংসিত বিষয়গুলো যেমন সীমান্ত হত্যা, তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি ও ঋণ সহায়তার মতো বিষয়গুলো তুলে ধরা হবে।