উদীয়মান অর্থনীতির দেশ নিয়ে গঠিত জোট ব্রিকসে যোগদানের জন্য বাংলাদেশের আগ্রহের প্রশংসা করেছে চীন। এ বিষয়ে বাংলাদেশের প্রতি সক্রিয় সমর্থন থাকবে বলেও আশ্বাস দিয়েছে বেইজিং।
মঙ্গলবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সোমবার বেইজিংয়ে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে ১৩তম দফার দ্বিপাক্ষিক রাজনৈতিক আলোচনায় এ আশ্বাস দেওয়া হয়।
ব্রিকস হলো- ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত, চীন, দক্ষিণ আফ্রিকা, ইরান, মিশর, ইথিওপিয়া এবং সংযুক্ত আরব আমিরাত নিয়ে গঠিত একটি আন্তঃসরকারি সংস্থা। বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন এবং চীনের পররাষ্ট্র বিষয়ক ভাইস মিনিস্টার সান ওয়েইডং আলোচনায় নিজ নিজ পক্ষের নেতৃত্ব দেন।
এতে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক সুসংহতকরণ, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বৃদ্ধি, বাণিজ্য ও বিনিয়োগের প্রচার এবং বহুপাক্ষিক প্ল্যাটফর্মে সহযোগিতার সুযোগ খুঁজে বের করার ওপর আলোকপাত করা হয়।
চীনের ভাইস মিনিস্টার গত ৭ জানুয়ারি জাতীয় নির্বাচনের মাধ্যমে পুনরায় নির্বাচিত হওয়ায় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন জানান এবং তার যোগ্য নেতৃত্বে বাঙালি জাতি ‘সোনার বাংলা’র স্বপ্ন পূরণ করবে বলে আশা ব্যক্ত করেন। এদিকে উভয়পক্ষ বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আসন্ন চীন সফর নিয়ে যৌথভাবে কাজ করতে সম্মত হয়েছে।
পররাষ্ট্র সচিব মোমেন তার সূচনা বক্তব্যে উল্লেখ করেন, একই মূল্যবাধ, পারস্পরিক শ্রদ্ধা এবং অভিন্ন আকাঙ্ক্ষার ভিত্তিতে বাংলাদেশ চীনের সঙ্গে তার সম্পর্ককে গুরুত্ব দেয়।
তিনি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১৯৫২ এবং ১৯৫৭ সালের চীন সফরের কথা স্মরণ করে আসন্ন ভিভিআইপি সফরের আগে চীনা ভাষায় ‘আমার দেখা নয়া চীন’ বইটি প্রকাশিত হবে বলে আশা প্রকাশ করেন।
এ ছাড়া তিনি ২০১৬ সালে প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের বাংলাদেশ সফরের কথা তুলে ধরেন, যা সম্পর্ককে ‘সহযোগিতার কৌশলগত অংশীদারিত্ব’-এ উন্নীত করেছে। বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব অবকাঠামোগত উন্নয়নে চীনকে তাদের সহায়তার জন্য ধন্যবাদ জানান, যার মধ্যে বেশ কয়েকটি মেগা প্রকল্পও রয়েছে।
তিনি বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান অর্থনীতির বিষয়টি ব্যাখ্যা করেন এবং চীনে বাংলাদেশি পণ্যের শুল্কমুক্ত কোটা ফ্রি (ডিএফকিউএফ) প্রবেশাধিকারের বিদ্যমান কাঠামো সহজতর করতে চীনের সহায়তা কামনা করেন।
সচিব মোমেন মহামারি, জলবায়ু পরিবর্তন ইত্যাদি চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বিশ্বব্যাপী সহযোগিতার ওপর জোর দেন। তিনি বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের নিরাপদ ও স্বেচ্ছায় তাদের নিজ দেশে প্রত্যাবাসনে চীনের অব্যাহত সমর্থনের প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন।
চীনের ভাইস মিনিস্টার বাংলাদেশি প্রতিনিধিদলকে স্বাগত জানান এবং সাম্প্রতিক ঘূর্ণিঝড় ‘রিমাল’-এর কারণে যে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তার জন্য গভীর সমবেদনা জানান।তিনি ২০১০ সাল থেকে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর চীন সফর এবং গত বছরের ব্রিকস সম্মেলনে চীনের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে তার আলোচনার কথা স্মরণ করেন।
ঢাকা ও বেইজিং দুই দেশের দূতাবাস উভয় দেশের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর উদযাপনের জন্য একসঙ্গে কাজ করতে পারে বলে সান ওয়েইডং উল্লেখ করেন।তিনি উচ্চ পর্যায়ের আদান-প্রদান এবং জনগণের মধ্যে যোগাযোগের গুরুত্বের ওপর জোর দেন।
চীনের ভাইস মিনিস্টার বাংলাদেশ থেকে আম ও অন্যান্য কৃষিপণ্য আমদানিতে এবং যুবকদের দক্ষতা উন্নয়নে সহায়তায় একযোগে কাজ করতে চীনের আগ্রহের কথা জানান। চীনের পক্ষ থেকে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের দ্রুত প্রত্যাবাসনের আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। উভয়পক্ষ দুই পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মধ্যে পরবর্তী দ্বিপাক্ষিক রাজনৈতিক আলোচনা আগামী বছর ঢাকায় অনুষ্ঠানের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলে চীনে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত জসিম উদ্দিন, ইআরডির অতিরিক্ত সচিব আনোয়ার হোসেন এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও চীনে বাংলাদেশ দূতাবাসের কর্মকর্তারা ছিলেন। অপরদিকে চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারাও এ আলোচনায় উপস্থিত ছিলেন।